পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যানজট নিরসনে গত দেড় দশকে ঢাকায় সাতটি ফ্লাইওভার নির্মাণ হলেও সেগুলো কাক্সিক্ষত ফল দিচ্ছে না। উন্নয়ন কাজে সমন্বয়হীনতা, অব্যবস্থাপনা ও খেয়ালখুশি মতো রাস্তার কাজ করায় যানজটের ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঢাকা শহরের পরিবহন পরিকল্পনায় এক যুগ আগে প্রণীত দীর্ঘমেয়াদি স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানে (এসটিপি) ফ্লাইওভার ছিল সবার শেষে। সেখানে আগে যেসব কাজ করার কথা ছিল, সেগুলোতে নজর দেয়া হয়নি। বরং শেষের দিকে থাকা ফ্লাইওভার নির্মাণের দিকে বেশি নজর দেয়া হয়েছে। এতে করে বিপুল অর্থ খরচ করে একটার পর একটা অবকাঠামো নির্মাণের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত উন্নয়নের চেয়ে দৃশ্যমান উন্নয়নের দিকে নজর থাকায় একের পর এক ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে। এসটিপিতে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন তো হচ্ছেই না বরং একের পর এক উল্টোটাই করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. শহীদুল হাসান বলেন, যে কোনো পরিকল্পনাই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারলে তা থেকে ঠিকমতো ফল পাওয়া যাবে না- এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, এসটিপিকে উপেক্ষা করে একের পর এক ফ্লাইওভার নির্মাণ করা ঠিক হয়নি। এই ফ্লাইওভার দিয়ে ভালো ফল আশা করাও ভুল হবে। ফ্লাইওভার যানজটকে একটু দূরে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে মাত্র, এর বাইরে কিছু নয়। শহীদুল হাসান বলেন, সরকারের উচিত ছিল টঙ্গী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত একটা রুট চিন্তা করে দীর্ঘমেয়াদি একটা পরিকল্পনা করা। ধাপে ধাপে করা হলেও তাতে ভালো ফল পাওয়া যেতো।
জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ২০০৫ সালে প্রথম এসটিপি প্রণয়ন করে। যার উদ্দেশ্য ছিল, ২০১৫ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য পরিকল্পিত ও সমন্বিত আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এরপর ২০১৫ সালে এসটিপি সংশোধন করে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়। ২০০৫ সালের এসটিপিতে থাকা সবগুলো ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার এবং বনানী রেল-ওভারপাস, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার, বিজয় সরণি-তেজগাঁও সংযোগ সড়ক এবং মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার। এসটিপিতে তিনটি বাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট লাইন উত্তরা-কুড়িল-সায়েদাবাদ (বিআরটি-১), গাবতলী-সায়েদাবাদ (বিআরটি-২), এয়ারপোর্ট-সায়েদাবাদ (বিআরটি-৩) এবং তিনটি মাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট লাইন উত্তরা-সায়েদাবাদ (এমআরটি-৪), অর্ধবৃত্তাকার (এমআরটি-৫) এবং মিরপুর-সায়েদাবাদ (এমআরটি-৬) বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছিল। এসব প্রকল্পের কোনোটিতেই শুরুতে হাত দেয়া হয়নি। এসটিপিতে থাকা বিআরটির দুটি প্রকল্প বাদ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসটিপিতে তিনটি মেট্রোরেল ও তিনটি বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু এগুলোর সঙ্গে দুটি ফ্লাইওভারের রুটের সাংঘর্ষিক অবস্থা ছিল। এ জন্য মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তন করতে হয়েছে। পরে ২০১৬ সালে এসটিপি সংশোধন করে পাঁচটি মেট্রোরেল ও দুটি বিআরটি নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। তবে এর সঙ্গেও একাধিক ফ্লাইওভারের সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয়েছে। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) তথ্যমতে, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই হয় ২০০৪ সালে। আর নকশা প্রণয়ন করা হয় ২০০৫ সালে। একই সময় চলে এসটিপি প্রণয়ন প্রক্রিয়াও। আমেরিকার খ্যাতনামা লুইস বার্জার গ্রু এসটিপি প্রণয়নের কাজ করে। আর এ কাজে সহায়তা করে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ৩২ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি। এসটিপির চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয় ২০০৫ সালে। এতে উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের কথা ছিল। ২০০৬ সালে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরু করা হয়। যদিও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০১০ সালে নকশা সংশোধন করে পুনরায় ফ্লাইওভারটির কাজ শুরু হয়। এ ফ্লাইওভারটির জন্য দু’দফা উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। কমানো হয় এর রুটের দৈর্ঘ্যও। প্রথম দফায় সায়েদাবাদের পরিবর্তে মতিঝিলেই মেট্রোরেলটি শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় প্রায় ২০ কিলোমিটার। পরে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অবস্থার জন্য মেট্রোরেলের রুট থেকে পুরান ঢাকার অংশটিও বাদ দেয়া হয়। মেট্রোরেলের রুট করা হয় হাইকোর্ট-প্রেসক্লাব হয়ে। এতে করে পুরান ঢাকাবাসী মেট্রোরেলের সুবিধাবঞ্চিত হবে।
ফ্লাইওভারে যে যানজট কমছে না তা আরো স্পষ্ট হয়েছে মৌচাক-ফ্লাইওভার পুরোপুরি চালু হওয়ার পর। চলাচলকারীরা বলছেন, ফ্লাইওভার হওয়ায় যানজটের স্থান বদল হয়েছে, কিন্তু যাতায়াতে সময় লাগছে আগের মতোই। বিশেষ করে রামপুরা থেকে বাড্ডা হয়ে কুড়িল পর্যন্ত যেতে সময় লাগছে দুই-তিন ঘণ্টা। অথচ ফ্লাইওভার বাদ দিয়ে অন্য পথে গেলে এর চেয়ে আরো কম সময় লাগে। ভুক্তভোগীদের মতে, শুধু ফ্লাইওভার নয়, এর পেছনে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িও অন্যতম কারণ। এ ছাড়া ২০১০ সালে চালু হওয়া তেজগাঁও-বিজয় সরণি ফ্লাইওভারে সারাদিনই গাড়ির জট লেগে থাকে। যানজট হয় ২০১৩ সালে চালু মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের গুলিস্তান ও চাঁনখারপুল নামার পথেও। মগবাজার ফ্লাইওভারের বাংলা মটর প্রান্তে নামার পথেই পড়তে হচ্ছে দীর্ঘ যানজটে। মহাখালীতে দেশের প্রথম ফ্লাইওভারের দুইপাশে নামার পথেও যানজট নিত্যসঙ্গী। খিলগাঁও ফ্লাইওভারের গোড়াতেও প্রায়ই একই চিত্র।
সরকারি একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার রাস্তায় নাগরিকদের ‘ট্রিপ’ হয় দিনে গড়ে সাড়ে তিন কোটি। এসব ‘ট্রিপের’ ৪৭ শতাংশের দূরত্ব দেড় থেকে দুই কিলোমিটার। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের শহরে ফ্লাইওভার কখনোই উপযুক্ত সমাধান হতে পারে না। সরকারের করা এসটিপি বা আরএসটিপিতেও বলা আছে- বাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট, রেল কমিউটার সিস্টেম অথবা নৌপথের মিলিত পদ্ধতির পাশাপাশি পথচারীদের নিরবিচ্ছন্ন যাতায়াত হলো সমাধান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।