Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বেদখল ফুটপাথ : যানজটে চরম ভোগান্তি

রাজধানীবাসীর বিড়ম্বনা-৬

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বেইলি রোডের উভয় পাশের রাস্তা দখল করে রেস্টুরেন্ট দোকানপাট : দোকানপাট যানচলাচলে বিঘ- ঘটানোর পাশাপাশি চোর, ছিনতাইকারী, পকেটমার, অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির দুর্বৃত্তদের আনাগোনাও বেড়ে যায় -পুলিশ কমিশনার

রাজধানীর ফুটপাথ দখল করে দোকানপাট, গ্যারেজ, রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই এ প্রক্রিয়া চলে আসছে। মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ফুটপাথ দখলমুক্ত করলেও কিছু দিন যেতে না যেতেই আবারো ফুটপাথ ভাসমান দোকানে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে নেই কোন স্থায়ী সমাধান। তবে বর্তমানে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দখল প্রক্রিয়া ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে রাজধানীতে। মহানগরীর সকল ফুটপাথেই বেদখল হয়ে গেছে। আর এ কারণে বাড়ছে যানজট। পথচারীদের জন্য ফুটপাথ নির্মাণ হলেও তারা তা ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে বাধ্য হয়েই তারা প্রধান সড়ক ধরে চলাচল করেন। আর এতে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের চোখের সামনেই এ দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল বেইলী রোডের ফুটপাথে এক ভাসমান দোকানির সাথে কথা হয়। ফুটপাথ দখল করে দোকান বসিয়ে সাধারণ মানুষের সমস্য তৈরি করছেন কেন। পুলিশ তো আপনাকে ধরে নিয়ে যাবে। এ কথা বলার জবাবে, ওই দোকানি বলেন, আমরা সরকারি দল করি। পুলিশের সাহস নেই ধরে নেয়ার বা উচ্ছেদ করার। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আরো বলেন, যারা পুরো রাস্তা দখল করে রেস্টুরেন্ট দিয়েছে, তাদের কথা কেউ কিছু বলেন না। শুধু ফুটপাথের হকারদের বিরুদ্ধে সবাই কথা বলেন।
এসময় পিঠাঘর নামের খাবারের দোকানের পশ্চিম পাশের এক দোকানি গর্ব করে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করি, কার সাহস আছে তুলে দিবে। সেই দিনের কথা ভুলে যান। আমরা পুলিশকেও নিয়মিত টাকা দিচ্ছি।’ ওই দোকানির নাম রেজাইল করিম বলে পাশের এক দোকানি জানালেন।
রেজাউলের মতো আরো কয়েকজন তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, শুধু হকারদের নিয়ে যতসব কথা, যারা রাস্তা দখল করে গাড়ির গ্যারেজ বানিয়েছে তাদের কেন উচ্ছেদ করা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশ ও স্থানীয় তিনজন প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় বেইলি রোডের ফুটপাথে অবৈধভাবে দোকানপাট বসানো হয়েছে। ঢাকা মহানগরী পুলিশ সদর দপ্তরের সামনেই এ দখলবাজি চলছে। ডিএমপি কার্যালয়ের পাশেই বেইলি রোডে বিকাল বেলায় প্রধান সড়ক, ফুটপাথসহ সকল রাস্তা ভাসমান দোকানে একাকার হয়ে যায়। একই দৃশ্য দেখা গেছে মৌচাক-মালিবাগ এলাকার ফুটপাথেও।
একটি বেসরকারি জরিপে দেখা যায়, বিভিন্ন যানবাহন মেরামতের গ্যারেজ, টায়ার-টিউব ভল্কানাইজিংয়ের দোকান, রাস্তা সংলগ্ন রেস্টুরেন্ট, রড-সিমেন্টের দোকান ও ছোট-বড় চেইন শপ এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এছাড়াও ফুটপাথের পাশের দোকানদার ও বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীরা তাদের বরাদ্দের বেশি জায়গা দখল করে আছেন। জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থায়ী দোকানিরা রাস্তা ও ফুটপাথের বিশাল অংশ দখল করলেও এ শ্রেণির দখলবাজের সংখ্যা হকারদের তুলনায় সংখ্যায় কম। এক হাজার হকার যে পরিমাণ ফুটপাথ দখল করে মালামাল বিক্রি করছে, ৫০ জন দোকানি তার চেয়ে বেশি জায়গা অবৈধভাবে নিজের ব্যবসার কাজে ব্যবহার করছে। দখলবাজ এসব দোকানি ব্যবসায়িক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সরেজমিন বেইলি রোড ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দুই-পাশের ফুটপাথেই ভাসমান দোকান ও স্থায়ী দোকানিদের দখলে। ফুটপাথের ওপর দিয়ে চলাচলের জায়গায় বসেছে দোকানপাট। পিঠাঘর নামের একটি রেস্টুরেন্ট ফুটপাথের ওপর স্থায়ীভাবে গ্যাসের চুলা এবং খাবার রাখার সেলফ বসিয়েছে। এছাড়া সুইস বেকারির সামনে পার্কিং করা রয়েছে অনেক গাড়ি। এ দোকানে খেতে আসা মানুষের গাড়ির সারি প্রায় শান্তিনগর মোড়ে এসে ঠেকেছে। ব্যাম্বো ক্যাসেলের সামনে ডজন দেড়েক গাড়ি এলোমেলোভাবে রাখায় অর্ধেক রাস্তা বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে ট্রাফিক পুলিশেরও যেন কোন মাথা ব্যথা নেই। যানজট নিরসনে এ সড়কটি একমুখী করা হলেও সেখানকার দোকানিদের দখলবাজিতে সে উদ্যোগ পুরোটাই ভেস্তে গেছে। দিনের বেশিরভাগ সময় এ রাস্তায় দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে।
স্থানীয়রা জানান, দখলবাজ এসব দোকানিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনও যেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না, তেমনি এলাকাবাসীও তাদের কাছে অসহায়।
মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, পান্থপথ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানকার অনেক দোকানের মালামাল রাখা হয়েছে ফুটপাথ ও সড়কে। এসবের মধ্য দিয়েই সাধারণ পথচারীদের অনেক কষ্টে চলাচল করতে হচ্ছে। ফুটপাথে জায়গা না থাকায় কেউ কেউ বাধ্য হয়ে সড়ক দিয়েই যাতায়াত করছে। শ্যামলী থেকে রিংরোড হয়ে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক সংলগ্ন ফুটপাথে দোকানপাটের নানান ধরনের জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে। গাড়ি মেরামতের দোকানের অব্যবহৃত টায়ার, টায়ারে হাওয়া ভরার যন্ত্র ফুটপাথজুড়ে রয়েছে।
মিরপুরের কালশী সড়কে দেখা যায়, ফুটপাথের ওপরে সিএনজিচালিত অটোরিকশার রঙের কাজ চলছে। পাশে চলছে লেপ-তোশক বানানো। তার সামনে করাতকলের কাঠের গুঁড়ি রাখা। লোহা-লক্কড় ও আসবাবের দোকানের বিভিন্ন সামগ্রী ফুটপাথের ওপর দিয়ে সাধারণ মানুষের চলাচলে কোন জায়গা নেই। পথচারীদের প্রধান সড়ক দিয়ে হাঁটাতে দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেলেছেন, রাজধানীতে পথচারীদের চলাচল সহজ করে যানজট কমাতে ফুটপাথগুলোর অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হবে। ফুটপাথগুলোর বেশিরভাগই ভ্রাম্যমাণ দোকানি কিংবা পাশের দোকানগুলোর সামগ্রী রেখে দখল করে রাখা।
পুলিশ কমিশনার বলেন, বিভিন্ন সময় উচ্ছেদ অভিযান চললেও কিছুদিন পরই আবার বেদখল হয়ে যায় ফুটপাথগুলো।
তিনি বলেন, অবৈধ দোকানপাট যানচলাচলে বিঘœ ঘটানোর পাশাপাশি চোর, ছিনতাইকারী, পকেটমার, অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির দুর্বৃত্তদের আনাগোনাও বেড়ে যায়। ফুটপাথ বেদখল হওয়ায় পথচারীদের চলাচলে যেমন সমস্যা হয়, তেমনি দোকান ঘিরে ভিড় এবং সড়কে পথচারীদের চলাচলে যানজটেরও সৃষ্টি হয়।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, গুলিস্থান এলাকা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে রাজধানী থেকে ফুটপাথ ও রাস্তা দখল করে রাখা অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফুটপাথ

৮ মার্চ, ২০১৯
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ