Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুন্দরবনে অর্ধশত জেলে অপহৃত কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে সুন্দরবনে জলদস্যুরা প্রায় অর্ধশত জেলেকে কোটি টাকা মুক্তিপণের দাবিতে আবারও অপহরণ করেছে। সর্বশেষ গতকাল সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জ থেকে বনদস্যু ফারুক বাহিনী ৪ জেলে ও ৫ কাকড়া আহরণকারীকে অপহরণ করেছে। গত পরশু রোববার সুন্দরবনে আরো ৭ জেলে অপহৃত হয়েছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে। এর আগে শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ থেকে ২০ জেলেকে জন প্রতি ২ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে। এছাড়া গত ৪-৫ দিনে বিভিন্ন বাহিনী মিলে অর্ধশতাধিক জেলেকে অপহরণ করেছে। র‌্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশ বন বিভাগ অভিযান চালালেও ডাকাতদের দৌরাত্ম কমছে না। তবে অব্যাহত অভিযানে বেশ কয়েকটি বাঘা বাঘা ডাকাত বাহিনী বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারূদ সহ আত্মসর্ম্পন করলেও সুন্দরবন জুড়ে এখন ৬-৭টি ছোট ছোট ডাকাত দলের উপদ্রবে জেলে বাওয়ালী তথা বনজীবীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
সূত্রমতে, সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন খালে ও নদীতে মাছ ধরার সময় জেলেদের উপর ৬-৭টি বনদস্যু বাহিনীর দলের নির্যাতন বেড়েই চলেছে। সুন্দরবনের গেড়া, চালকি, মার্কি ভোমর খালি, হংরাজ, বয়ারসিং, কঞ্চি, বজবজা, খাসিটানা, আড় পাংগাসিয়াসহ পূর্ব বন বিভাগের অন্যান্য খালে এবং নদীতে স্থানীয় জেলেরা মাছ ও কাঁকড়া ধরে থাকে। কিন্তু স¤প্রতি বনের এসব এলাকায় বনদস্যু বড় ভাই, ফারুক, সুমন, ছোট্র, রফিকুল ও মাথা কাপা জোনাব বাহিনীর অত্যাচারে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি শারিরীক নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে তারা।
জেলেরা জানান, গত ৩/৪ সপ্তাহ ধরে বড়ভাই বাহিনীসহ অন্যান্য ডাকাত দলগুলো প্রতি জেলে নৌকা থেকে একজন করে জেলে তুলে নিয়ে ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করছে এবং তাদের ব্যাপকভাবে মারপিট করছে। জেলেরা সাধ্য মত ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে জীবন নিয়ে ফিরে আসছে। এই বাহিনীগুলো অল্প সময়ের জন্য এসে বেশী টাকা কামানোর জন্য জেলেদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে।
সূত্র জানায়, উপজেলার জোড়সিং গ্রামের রফিকুল ৫/৬ জন নিয়ে বাহিনী সেজে প্রতি সপ্তাহে জেলেদের কাছ থেকে নৌকা প্রতি এক হাজার টাকা নিচ্ছেন। নলিয়ানের ফারুক, দেলোয়ার, জাফর, ডাকাত দলের সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর মাথা কাপা জোনাব নিজেই বাহিনী প্রধান, তার বাড়ি শ্যামনগর থানার গাবুরা গ্রামে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র বনদস্যুদের নির্যাতনের কারণে প্রতি বছর জেলের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়রা উপজেলার এই ৩ ষ্টেশনে বিগত বছরে কাকড়া ও মাছ ধরা জেলের সংখ্যা ছিল ৫/৬ হাজার, যা বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজারে।
বন বিভাগ ও জেলে মহাজন সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাতে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন ছাপড়াখালী এবং চাঁদপাই রেঞ্জের কলামূলা এলাকায় অবস্থানরত জেলে বহরে বনদস্যু সুমন বাহিনী ও ছোট্ট বাহিনী পরিচয়ে স্বশস্ত্র দস্যুরা পৃথক হামলা করে। এসময় তারা শরণখোলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের জেলে সরোয়ার আকন (৩০), ছগির খান (৩৪) ও মানিক হাওলাদার (৩২) সহ ২০ জেলেকে জন প্রতি ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করে। ঘটনার দু’দিন পরে অপহৃতদের মধ্যে উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের আঃ হক আকনের পুত্র সরোয়ার দস্যুদের ৩০ হাজার টাকা ও মোড়েলগঞ্জের গুলিশাখালী গ্রামের এক জেলে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে গত রোববার সকালে ফিরে এসেছে বলে উত্তর রাজাপুর এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী ও ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানিয়েছেন। তবে দস্যুরা তাদের বেদম মারধর করে আহত করেছে।
এদিকে ফিরে আসা জেলেরা জানিয়েছে, গত রোববার ভোর রাতেও বনের হরমাল ও চরাপেটুয়া এলাকা থেকে শরণখোলার দক্ষিণ রাজাপুর মাঝেরচর গ্রামের নাছির তালুকদারসহ ৬/৭ জন জেলেকে দস্যুরা ধরে নিয়ে গেছে। দস্যুদের হাতে আটক ছগির ও মানিকের মুক্তিপণ বাবদ দস্যুরা ১০ লাখ টাকা দাবি করেছে বলে মানিকের পিতা হেমায়েত হোসেন জানিয়েছেন। তিনি জানান, গত পরশু দুপুরে মোবাইল ফোনে দস্যুদের সাথে তার কথা হয়েছে এবং দাবিকৃত টাকা না পেলে তাদেরকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। দস্যুদের হাতে জিম্মি অন্যান্য জেলেদের বাড়ি বরগুনা ও পাথরঘাটাসহ বনসংলগ্ন উপক‚লীয় এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বলে জেলেদের সূত্রে জানা যায়।
এদিকে, বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন দস্যু মুক্ত না হওয়ায় খুলনাঞ্চলের বহু মৎস্য ও বনজীবী পেশার পরিবর্তন ঘটিয়ে জীবীকার খোঁজে এলাকা ছাড়ছে। দস্যু দমনে সদা জাগ্রত র‌্যাব ও কোস্টগার্ড। এর পাশাপাশি পুলিশ ও বনবিভাগের অভিযান চলছে। কিন্তু জলদস্যুদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। একটি বাহিনী অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করলে তাদেরই পূর্বের অনুসারীরা নতুন করে সংগঠিত হয়ে নতুন বাহিনী গড়ে তুলছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের অভিমত, অস্ত্রসহ দস্যুদের আত্মসমর্পনের বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীকে আরো সজাগ এবং তাদের ও তাদের অনুসারীদের গতিবিধি চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুন্দরবনে

১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ