বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
প্রকৃতিক বিরূপ আচরণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি এবার যথেষ্ঠ নাজুক। সদ্য বিদায়ী বর্ষা মওসুম জুড়েই দক্ষিণাঞ্চলে দফায় দফায় অতি বর্ষণে আউশ ও আমন ছাড়াও গ্রীষ্মকালীন ও আগাম শীতকালীন সবজি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এমনকি আগাম বর্ষণে গত মওসুমে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে তরমুজ ও গোল আলু ছাড়াও মিষ্টি আলুর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বিপুল সংখ্যক কৃষক সর্বশান্ত হয়ে পরে। এর পরে গত সপ্তাহে লঘু চাপ থেকে নিম্নচাপ জনিত হালকা ও মাঝারী বর্ষণেও আমনের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে আমনের চেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে সাথী ফসল খেশারী ডালের। পরিস্থিতির ওপর কৃষি মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট দফতর প্রধানগন খোঁজখবর রাখছেন। গত ১৫ ও ১৬ নভেম্বর নিম্নচাপজনিত বর্ষণের সময় বিষয়টি নিয়ে খোদ কৃষিমন্ত্রীও মাঠ পর্যায়ে সরাসরি খোঁজখবর রাখেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে বিএডিসি, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর এবং কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট-এর প্রধানগন গত শুক্র ও শনিবার বরিশাল ও পটুয়াখালীর বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা সহ মাঠ পর্যায়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেছেন। বিগত রবি ও খরিপ-১ মওসুমের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলতি রবি মওসুমে দক্ষিণাঞ্চল সহ সারাদেশে বোরো, গম এবং শীতকালীন শাক-সবজি আবাদে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। চলতি রবি মওসুমে সারাদেশে ৪৮ লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৯৪ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে বরিশাল অঞ্চলের ৬টি জেলায় প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন চাল পাকবার লক্ষ স্থির করা হয়েছে। ‘বøাষ্ট’ নামে ছত্রাকবাহী রোগের ঝুঁকির পরেও দেশের ৪ লাখ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৪ লাখ টন গম উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। যার মধ্যে বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলের ১১টি জেলার প্রায় ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে সোয়া ২ লাখ টন গম উৎপাদনের লক্ষ স্থির করা হয়েছে। এছাড়াও চলতি মওসুমে দেশের ৫.১০ লাখ হেক্টর জমি থেকে ১ কোটি ৮ লাখ টনের মত গোল আলু উৎপাদনের লক্ষে রয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ।
কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা এখনো প্রকৃতির আচরণের ওপরই বাহুলাংশে র্নিভরশীল। সারাদেশে যে পরিমাণ আউশ, খেশারী ডাল ও মিষ্টি আলুর আবাদ হয়, তার প্রায় ৪০ ভাগই হচ্ছে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে। এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে প্রায় ২ লাখ ১ হাজার হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হলেও তার একটি বড় অংশের ফলনই দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা ঘরে তুলতে পারেনি প্রবল বর্ষণের ক্ষতির কারণে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের মতে গত মার্চের অকাল অতি বর্ষণেই দক্ষিণাঞ্চলে তরমুজের ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকার। গোল আলুর ক্ষতিও ছিল ব্যাপক। ভোলাতে এক গোল আলু চাষি নিজের আবাদকৃত জমির ভয়াবহ ক্ষতি সহ্য করতে না পেয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
কিন্তু মার্চের ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই গত ২০ থেকে ২৪ এপ্রিল প্রায় ৩৩০ মিলিমিটার বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি সেক্টরে আরো ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে সে সময়ে বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠীর মাঠে থাকা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমির ফসলের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার হেক্টর প্লাবিত হয়। যার মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার হেক্টর জমির ফসল আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ। ডিএইর হিসেব অনুযায়ী এর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যা মোট ফসলী জমির প্রায় ১২%। এমনকি ওই সময়ের অতিবর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার টন ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
গত মার্চ ও এপ্রিলে দু’দফার প্রবল বর্ষণে প্রায় দেড় লাখ টন তরমুজের উৎপাদন ক্ষতি হয় দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে। এর মধ্যে গত এপ্রিলের অতিবর্ষণে তরমুজের উৎপাদন ক্ষতির পরিমান প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টন। এছাড়া প্রায় ৫শ’ টন বোরা ও ৪ হাজার টন স্থানীয় ও উফশী আউশ ধানের উৎপাদন ক্ষতি হয়। শুধুমাত্র তেল বীজের উপদান ক্ষতির পরিমানই ছিল প্রায় ১৫ হাজার টন। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন চরাঞ্চলে উৎপাদিত বিপুল পরিমান সয়াবিন তেল বীজ দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি ফিডের পুষ্টিকর খাবার উপাদান হিসেব ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
গত এপ্রিলে দ্বিতীয় দফার অতিবর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে ভোলাতে প্রায় ৭৭ হাজার হেক্টর, পটুয়াখালীতে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর, বরগুনাতে ১৫ হাজার হেক্টর, বরিশালে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর, পিরোজপুরে ২৭০ হেক্টর এবং ঝালকাঠীতে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল কমবেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
গত এপ্রিলের প্রবল বর্ষণে মিষ্টি আলুর অবস্থানই ছিল শীর্ষে। ওই বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার প্রায় ২৯ হাজার টন মিষ্টি আলুর উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর পরেই অবস্থান শাক-সবজির। শুধু এপ্রিলের প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলে ২৪ হাজার টন শাক-সবজির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এছাড়া প্রায় ১৯ হাজার টন মুগডাল, ১৬ হাজার টন মরিচ, দেড় হাজার টন তিল, সাড়ে ৫ হাজার টন সয়াবিন ও প্রায় ৭ হাজার টন চিনাবাদামের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দেড়শ’ টনের মত সূর্যমূখী উৎপাদনও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, গত মার্চ ও এপ্রিলে বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১৫২% ও ১৬০% বেশী বৃষ্টিপাত হলেও মে মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৫.৯% কম। অথচ মে মাসের শেষ ভাগ থেকেই বর্ষা মওসুম শুরুর হয়ে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবার কথা। তবে জুন মাসে স্বাভাবিক ৪৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কথা জানিয়ে আবহাওয়া বিভাগ থেকে ৪৩৫ থেকে ৫৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্ভাবাস দেয়া হলেও তা অতিক্রম করে। এমনকি গত ২১ জুন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত বরিশাল মহানগরীতে প্রায় ১২০ মিলিমিটার রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। ঐদিন সন্ধা ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে দেশের সর্বোচ্চ ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা ছিল বরিশালে সা¤প্রতিককালের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। ১৯ জুন দুপুরেও মহানগরীতে মাত্র আড়াই ঘন্টায় ৫৮ মিলিমিটারের মত বৃষ্টি হয়েছিল। গত অক্টোবরেও বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৬% বেশী বৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমনের সাথে সাথী ফসল খেশারী ডাল সহ আগাম শীতকালীণ শাক-সবজির যথেষ্ঠ ক্ষতি হয়।
অতিবর্ষণ সহ অসময়ের বর্ষণে এবার একের পর এক ফসল বিনষ্টের ফলে কৃষি নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক এবং কৃষি অর্থনীতিতে ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। অথচ বর্ষা মাথায় করে দক্ষিণ-পশ্চিম মওসুমী বায়ু অক্টোবরের মধ্যভাগেই বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশ থেকে বিদায় নেয়।
এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের আবদাও লক্ষ অর্জন করতে পারেনি চলতি খরিপ-২ মওসুমে। কৃষি মন্ত্রণালয় বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় এবার প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ লক্ষ স্থির করলেও শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৭.২৩ লাখ হেক্টরের কিছু বেশী জমিতে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে যে প্রায় পৌনে ১৬ লাখ টন আমন চাল পাবার লক্ষ স্থির করা হয়েছিল তা নিয়ে ইতোমধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি মওসুম জুড়ে অতিবর্ষণের পরে ধানের ফুল ও থোর আসা পর্যায়ে গত সপ্তাহের অকাল বর্ষণে বেশ কিছু জমির ধানের সাথে সাথী ফসল খেশারী ডালেও ঝুঁকি কিছুটা বেড়েছে। তবে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের মতে এখনো বড় ধরনের ক্ষতির তেমন খবর পাওয়া যায়নি। তবে অনেক জমিতে পানি জমে যাওয়ায় বিপুল পরিমান খেশারী ডালের ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। পাশাপাশি যেসব জমিতে পানি জমে আছে তা দ্রুত অপসারণ না হলে ফুল ও থোর পর্যায়ের ধানে চিটা হওয়া সহ তা পড়ে যাবারও সম্ভবনা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমেনরও কিছু ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
সব মিলিয়ে এবারের আগাম ও অতি বর্ষণের ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেল কৃষক ও কৃষি অর্থনীতি এখন যথেষ্ঠ ঝুঁকির কবলে। এ পরিস্থতি কাটিয়ে উঠতে আসন্ন রবি মওসুমে ব্যাপকভাবে বোরো ও গম আবাদের কোন বিকল্প নেই। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই এখনো বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি। তবে ছত্রাকবাহী ‘বøাষ্ট’ রোগের বিস্তারের কারণে সারাদেশের সাথে গম আবাদ নিয়েও দুঃশ্চিন্তা রয়েছে। ভোলার বিশাল এলাকায় গম আবাদ হলেও এখনো ঐ রোগের ঝুঁকিতে নেই। তবে ডিএই পরিস্থিতির ওপর নজর রাখলেও গম নিয়ে কৃষকদের উৎসাহিতও করা হচ্ছে না। গত বছর ভোলাতে গমের আবাদ ও উৎপাদন ভাল হলেও সারাদেশে তৃতীয় ঐ দানাদার ফসলের উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ৫ লাখ টন হ্রাস পায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।