Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আনিসুল হক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মায়ের কবরের পাশে ছোট ছেলের কবরে চিরনিদ্রায় সমাহিত হলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের জনপ্রিয় মেয়র আনিসুল হক। শনিবার বাদ আসর আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজার পর বনানী কবরস্থানে ছেলে শারাফুল হকের কবরে দাফন করা হয় আনিসুল হকের লাশ। আনিসুল হকের শিশুপুত্র শারাফুল হক ২০০২ সালে ইন্তেকাল করেন। তার কবরের পাশেই রয়েছে মরহুম মেয়র আনিসুল হকের মায়ের কবর। বনানী কবরস্থানে তার লাশ বহনকারী গাড়ি পৌঁছে বিকেল ৫টায়। তাকে সমাহিত করা হয় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে।
জানাজার আগে ৩টা ১০ মিনিট থেকে জাতীয় পতাকা ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পতাকা দিয়ে ঢাকা আনিসুল হকের লাশ আর্মি স্টেডিয়ামে রাখা হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রথমে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন প্রেসিডেন্টের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে ক্যাপ্টেন মোশতাক আহমেদ পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে পর্যায়ক্রমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বিএনপির পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা শ্রদ্ধা জানান, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। এরপর শ্রদ্ধা জানাতে ঢল নামে সাধারণ মানুষের।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেয়রের লাশ বহনকারী বিমানটি সিলেটে এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এরপর দুপুর একটায় সিলেট থেকে আসা ফ্লাইটটি ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় সেখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হকের ভাই সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল শফিউল হক উপস্থিত ছিলেন। আনিসুল হকের লাশের সঙ্গে এসেছেন স্ত্রী রুবানা হক ও ছেলে নাভিদুল হক।
বিমানবন্দর থেকে আনিসুল হকের লাশ তার বনানীর ২৭ নম্বর সড়কে নিজ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। আগে থেকেই সেখানে হাজির ছিলেন মরহুম মেয়রের আত্মীয়-স্বজনসহ বিপুল সংখ্যক শুভানুধ্যায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ। সেখানে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। বাড়ির বাইরে সাধারণ মানুষের ঢল নামে তাকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার জন্য।
আনিসুল হকের লাশ বিমানবন্দর থেকে বনানীর ২৭ নম্বর রোডের বাসায় নেয়ার কিছু পরে দুপুর পৌঁনে ২টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সেখানে পৌঁছান। এ সময় তিনি পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমাবেদনা প্রকাশ করে সান্ত¡না দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছু সময় অবস্থান করেন।
সস্ত্রীক গত ২৯ জুলাই পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে যান মেয়র আনিসুল হক। পরে সেখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২৩ মিনিটে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন এই গুণী ব্যবসায়ী, নেতা ও টিভি ব্যক্তিত্ব।
এর আগে শুক্রবার বাদজুমা সেন্ট্রাল লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক মসজিদে মরহুম মেয়র আনিসুল হকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
কুলখানি ৬ ডিসেম্বর
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হকের কুলখানি হবে আগামী ৬ ডিসেম্বর বুধবার। এদিন বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে। আর্মি স্টেডিয়ামে মেয়র আনিসুল হকের জানাজার আগে আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হক এ কথা জানান। নাভিদুল হক বলেন, আমার বাবা ছিলেন সৌখিন মানুষ। তিনি হাসি-খুশি মানুষ ছিলেন। দেশবাসীর কাছে বাবার জন্য দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, কাজের খাতিরে কেউ যদি আমার বাবার ব্যবহারে দুঃখ পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনারা তাকে ক্ষমা করে দিয়েন।
আনিসুল হকের লাশ শনিবার দুপুর পৌঁনে ১টায় লন্ডন থেকে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানবন্দর থেকে লাশ শেষবারের মতো বনানীতে নিজ বাসভবনে নেয়া হয়।
ছেলেকে বাবার শেষ আদর
আনিসুল হক ইন্তেকাল করেন বৃহস্পতিবার রাতে। কিন্তু শনিবার তাকে দাফনের আগেও তা জানতেন না তার বাবা শরিফুল হক। তিনি ছিলেন তার ছোট ছেলে বর্তমান সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকের বাসায়। শরিফুল হকের শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে তাকে জানানো হয়নি। কিন্তু শনিবার তাকে দাফনের আগে আর না জানিয়ে তো উপায় ছিল না। কারণ, এর পর আর বাস্তবে আনিসুল হকের দেখা মিলবে না। তাই আনিসুল হকের লাশ দেশে আনার পর ৯৫ বছর বয়সী বাবা শরিফুল হককে হুইল চেয়ারে করে আনা হয় ছেলের লাশ দেখাতে। তিনি ছেলেকে শেষ আদর করেন। মাত্র দুই মিনিট ছিলেন ছেলের পাশে। কথা বলার শক্তি নেই তার। শুধু শোনা যায় গোঙানির শব্দ।
আমি একা হয়ে গেলাম : সাঈদ খোকন
মেয়র আনিসুল হকের লাশ দেখতে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমি একা হয়ে গেছি। দু’জন মিলে আধুনিক ঢাকা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। এখন জানি না ভবিষ্যতে সে স্বপ্নের কী হবে? আর কেউ আমাকে কখনো বড় ভাইয়ের মতো পরামর্শ দেবে না। বড় ভাই হিসেবে আনিসুল হক সবসময় আমার পাশে ছিলেন। এখন আমার কাছে সবকিছু অন্ধকার মনে হচ্ছে।
আনিসুল হকের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী জেলার কবিরহাটে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ৮০ থেকে ৯০-এর দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। এরপর ব্যবসায়ী থেকে হয়ে ওঠেন রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন একজন সফল উদ্যোক্তা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনেরও (এফবিসিসিআই) সভাপতি ছিলেন। ২০১৫ সালের এপ্রিলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন আনিসুল হক।



 

Show all comments
  • KS Zaman ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৩২ এএম says : 0
    এতো মানুষের ভালবাসা নিয়ে কবরে শায়িত হলেন।এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি আছে জীবনে।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammed Dulal Talukder ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৩৩ এএম says : 0
    উত্তরের অপূরণীয় শূন্যতা... দক্ষিণের দীর্ঘশ্বাস। মাঝপথে তাঁর প্রয়াণে সুন্দর ঢাকা গড়ার জুটিটা সত্যিই ভেঙ্গে গেলো!
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Matin ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৩৪ এএম says : 0
    Was Very dynamic who think for the country. I will miss you , mayor .
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Khan Noyan ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৩৪ এএম says : 0
    “এমনো জীবন তুমি করেছ গঠন, মরণে হাসছো তুমি কাঁদিছে ভুবন”
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আনিসুল হক

১২ ডিসেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ