Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

তামা পিতল দিয়ে দেশেই তৈরি হয় সিটি গোল্ড

| প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : সাভার উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়নে অধিকাংশ গ্রামে বসবাস করা মানুষদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস হলো রুপার গহনা তৈরি করা। এ ইউনিয়নের প্রায় ৩০ গ্রামে নারী-পুরুষ মিলে মেয়েদের গহনা তৈরি করেন। যেগুলো বিক্রি হয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এছাড়া এখানকার গহনা বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে। গহনার কথা মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সোনা-রুপার তৈরি নারীদের পরিধানযোগ্য বিভিন্ন গহনা। গহনার দোকানগুলোতে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও কাজ করে সেই টাকা দিয়ে লেখা পড়ার খরচ যোগাচ্ছে তারা।
স্বর্ণ ও রৌপ্যের উচ্চ মুল্যের কারনে ভাকুর্তা বাজার ও এর আশেপাশের গ্রামগুলোতে গহনা তৈরি করা হয় তামা ও পিতল দিয়ে। প্রাথমিকভাবে এগুলো অপরিশোধিত অবস্থায় থাকে। এখান থেকে পাইকাররা কিনে নিয়ে পরিশোধন ও রঙ করে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। যা সিটি গোল্ড বা ইমিটেশন নামে পরিচিত। এগুলো দেখতেও যেন সোনার মত, যা সবার জানা। এখানে তামার ব্যবহার বেশি হলেও পিতল ও দস্তা দিয়েও গহনা তৈরি করেন কারিগররা।
এখানকার কারিগররা বেশিরভাগ সোনা ও রুপার দোকানে কাজ করে বিভিন্ন ডিজাইনের কৌশল রপ্ত করেছেন। পাইকারি বিক্রির পাশাপাশি গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী গহনাও তৈরি করে দেন তারা।
ভাকুর্তা বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিছু পাকা, আবার কিছু আধা-পাকা, কিছু টিনের ঘর। এর মধ্যে বসে দিব্যি কাজ করছেন বিভিন্ন বয়সী কারিগর ও তাদের সহকারীরা। কারিগররা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে তৈরি করছেন গলা, নাক, কান, পা, কোমর, মাথার বিভিন্ন ডিজাইনের গহনা। সোনার দোকানে যে সকল জিনিস থাকে তার যেন সবই রয়েছে ঘরগুলোতে। সামনে, পিছনে, দেয়ালে থরে থরে সাজানো মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের গহনা। গহনা তৈরির কাজটি আগে হিন্দুরা করতেন। মুসলমানরাও এটাকে এখন পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
জানা যায়, তাদের তৈরি গহনাগুলো পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয় ২০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। দাম ডিজাইন ও আকারের ওপর নির্ভর করে। যেমন গলার নেকলেস ১০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চুরি ২ শত থেকে ৩০০ টাকা জোড়া, শিতাহার ৬০০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা, নুপুর ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, মাথার ঝাপটা ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, হাতের মালতাশা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, খোপার কাটা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, মাথার টায়রা ৩০০-৪০০ টাকা, শাড়ির মালা ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, নাকফুল ২০ থেকে ৩৫ টাকা, টিকলি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এগুলো সব অপরিশোধিত অবস্থায় বিক্রি হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে পরিশোধন করে যখন মার্কেটে খুচরা বিক্রি করেন তখন এর দাম দেড় থেকে দুইগুণ, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায় । এখানে প্রায় আড়াই’শ থেকে তিন’শ দোকান রয়েছে। এবার একটু কমদামে গহনা বিক্রি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া এখানকার গহনা এখন বিদেশেও রপ্তানী হচ্ছে।
ভাকুর্তা বাজারের কারিগররা জানান, গহনা তৈরির কাঁচামাল তামা কিনে নিয়ে আসা হয় ঢাকার তাঁতিবাজার থেকে। দাম পড়ে কেজি প্রতি ১ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া কিছু গহনার কাঁচামাল বগুড়া ও ভারত থেকে নিয়ে আসা হয়। নিজেদের দক্ষতা ও পরিশ্রম দিয়ে কাজ করেন কারিগররা। দিনে ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করে আয় হয় মাত্র ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। ভাকুর্তা বাজারের স্বর্ণ, রোপ্য ও ইমিটেশন ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান, ভাকুর্তা বাজারের বয়স প্রায় ১৫০ বছর। এ বাজারে দোকান রয়েছে তিন শ’র মতো। আর ভাকুর্তা ইউনিয়নে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ এই পেশায় জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিটি পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য এই পেশায় জড়িত রয়েছেন। আশির দশকেও এই বাজারে সোনা ও রুপার গহনা তৈরি হত। কিন্তু এগুলোর দাম বাড়ার সাথে সাথে ব্যবসায়ী ও কারিগররা সোনা ও রুপা তৈরি থেকে সরে আসেন। নব্বই দশকে এসে ঝুঁকে পড়েন ইমিটেশনের গহনা তৈরির দিকে।
তিনি বলেন, ঢাকাসহ দেশের বিভন্ন জায়গায় যেসব ইমিটেশন বা সিটি গোল্ডের গহনা বিক্রি হয় তার বেশিরভাগই এখানে তৈরি হচ্ছে। এছাড়া সল্প সংখ্যক মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, ইতালিতেও রপ্তানি করা হয়। এরপরও আমাদের আয় অনেক কম। সরকার যদি আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করতো তাহলে আমাদের অবস্থা আরও উন্নত হত। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় সব বড় বড় শপিং মল, ঢাকার নিউমার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, চাঁদনীচকসহ সব মার্কেটের গয়না ভাকুর্তা থেকে যায়। মার্কেটগুলোতে সিটি গোল্ড বা এন্টিক নামে এসব গয়না বিক্রি হয়। শুধু দেশে নয়, এখানকার গহনার চাহিদা দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছে। গহনা তৈরির ব্যবসায়ীদের সবধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। একাধিক মালিক ও কারিগররা জানিয়েছেন-তামা, পিতল দিয়ে এসব গয়না তৈরি হয়। স্বর্ণ ও রৌপ্যের উচ্চমূল্যের কারণে এসব গয়নাই এখন বেশি চলছে। বর্তমানে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মেয়েরা এসব গহনার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। ভাকুর্তার কারখানাগুলোতে হাজারো নকশার গয়না পাওয়া যায়। চাইলে নিজের পছন্দমতো ডিজাইন দিয়েও গয়না তৈরি করানো যায় এখানে। সরকারিভাবে সুযোগ সুবিধা পেলে এখান আরও অনেক বেকার যুবক গহনা তৈরির ব্যবসা করতে পারবেন বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।


টুঙ্গিপাড়ায় নয় শতাধিক শিক্ষার্থী পেল টিফিন বক্স
গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯৩১ শিক্ষার্থীর মধ্যে টিফিন বক্স বিতরণ করা হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে পরিষদ চত্তরে এ টিফিনক্স বিতরণ অনুষ্ঠান হয়। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাকিব হাসান তরফদার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গরীব, অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে টিফিন বক্স তুলে দেন। পাটগাতী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিলন মোল্লার সভাপতিত্বে টিফিন বক্স বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, ইউপি সদস্য মোঃ আসলাম সরদার, মোঃ জাবের হোসেন বিশ্বাস, শিক্ষক বাসুবেদ বিশ্বাস প্রমূখ।
উদ্যোক্তা ইউপি চেয়ারম্যান মিলন মোল্লা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই টিফিন বক্সের অভাবে স্কুলে টিফিন নিয়ে আসতে পারে না। তাছাড়া এতে শিশু শিক্ষার্থীরা লেখা-পাড়ায় আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে।


ফুলপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
ফুলপুর (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা : ময়মনসিংহের ফুলপুরে গত বৃহস্পতিবার বিকালে আমুয়াকান্দা বাজারে মৎস্য সুরক্ষা ও সংরক্ষণ এবং মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ বিধিমালা, মৎস্য খাদ্য ও পশু খাদ্য বিধিমালার আওতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে।
ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে আমুয়াকান্দা বাজারে অভিযান চালিয়ে ৬৫ টি কারেন্ট জাল আটক করেন এবং তা বাজারে উপস্থিত লোকজনের সামনে পোড়ানো হয়। সে সাথে মৎস্য ও পশু খাদ্যের দোকানেও অভিযান চালানো হয়। এছাড়াও ভোক্তা অধিকার আইনে মিষ্টির দোকান ও মনোহরী দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় এবং বিভিন্ন অপরাধে জরিমানা করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল হকসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।



 

Show all comments
  • টিনা ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:২২ এএম says : 0
    সামর্থ্যহীনদের জন্য এটাই স্বর্ণ
    Total Reply(0) Reply
  • রণি ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৫৭ পিএম says : 0
    সিটি গোল্ড গরীবের স্বর্ণ
    Total Reply(0) Reply
  • আমিন ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৫৮ পিএম says : 0
    আগে আমরা জানতাম এসব গহনা ভারত থেকে আসে। এখন দেখছি দেশেই তৈরি হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • শুকুর আলী ২ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১:৫৯ পিএম says : 0
    শিরোনাম ঠিক হয়নি। সিটি গোল্ড একটি ভারতীয় কোম্পানীর নাম।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি গোল্ড
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ