Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বিএনপি -মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৪:১৫ পিএম | আপডেট : ৭:২৫ পিএম, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যে কোনো আগাম নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বিএনপি। শুক্রবার সকালে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাবেক আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের স্থায়ী বসবাসের প্রকল্প বাতিল করে তাদের মায়ানমারে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন, নইলে এটা আত্মঘাতী হবে। এ সময় তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি এবং প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজিরা দেওয়ারও সমালোচনা করেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় বিস্ময় প্রকাশ করেন মওদুদ আহমদ। বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, আমার ৫০ বছরের অভিজ্ঞতায় কোনোদিনও শুনিনি যে, সাপ্তাহিক জামিন নিতে হয়। সাপ্তাহিক জামিন হলো বিরোধী দলের নেত্রীর জন্য আরো বেশি নির্যাতন, আরো বেশি অপমানজনক। এটা সম্ভব হয়েছে কারণ, আমাদের দেশের নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে। সেই কারণে তারা (বিচারক) আজকে এই ধরনের আদেশ দিয়েছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী আরো বলেন, কাল অর্ধদিবস হরতালের কারণে খালেদা জিয়া আদালতে যেতে পারেননি। আদালতে বলা হয়েছে, তিনি (খালেদা জিয়া) আসবেন ২টার পরে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদালত তাঁর জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিলেন। এ ধরনের আচরণ আমরা বিচার বিভাগ থেকে প্রত্যাশা করিনি। মওদুদ বলেন, প্রকৃত সত্য হলো, যেহেতু বিচারকদের স্বাধীনতা নেই ফলে তারা নিজেদের ইচ্ছামতো আদেশ দিতে পারছেন না। ফলে তারা এই ধরনের আদেশ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর জিয়া জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্ট দুই মামলায় বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বারবার তার স্থায়ী জামিনের আবেদন জানালেও আদালত তা নাকচ করে দেন।
গত বৃহস্পতিবারও এক মামলায় রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হরতাল চলাকালে নিরাপত্তার কারণে তিনি সকালে আদালতে যেতে পারেননি। পরে তার আইনজীবীরা দুপুরের পর আদালতে হাজির হওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু বিচারক সময়মত আদালতে হাজির না হওয়ায় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকাবস্থায়ও একই আদালত দুই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। দেশে ফিরে পরপরই তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন এবং নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন। তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন ৬ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইবেন।
আদালত খুব খারাপ একটা দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মওদুদ। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া বিদেশে ছিলেন। বিদেশ থেকে ফেরার পর যখনই আদালত ডেকেছেন তখনই তিনি গেছেন, আদালতকে যত রকম সম্মান দেখানোর দরকার তা তিনি দেখিয়েছেন। তারপরও তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বিস্ময়কর।
মওদুদ আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে সরকার গণতন্ত্রকে ধূলিসাৎ করেছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে বোঝাই, দেশে স্বাধীন গণতন্ত্র থাকবে, আইনের শাসন, প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা থাকবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে, দেশে একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ থাকবে। কিন্তু আজকে সরকার যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বেশি বলে, তারাই আসলে এই চেতনা বলতে যে মূল্যবোধ, আশা, আকাঙ্ক্ষা মানুষের মধ্যে রয়েছে তা একেবারে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। দেশে কোনো গণতন্ত্র নাই আইনের শাসন নাই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নাই। এ সময় মওদুদ আহমদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানান।
আনিসুল হক অত্যন্ত ভালো, কর্মঠ, সজীব, সজ্জন মানুষ ছিলেন মন্তব্য করে মওদুদ আহমদ আরো বলেন, দল হিসেবে মতপার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু এটা বলার অপেক্ষা রাখে না তিনি কতগুলো মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে। পরবর্তী সময়ে যারা করপোরেশনের দায়িত্বে আসবেন, তাঁরা তাঁকে অনুসরণ করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের সভাপতি শামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক লায়ন সাইফুল ইসলাম সেকুল, এস এম মাহবুব আলম, কামরুল খান, এম এ হাসেম, সোলায়মান, এ কে আজাদ, সেলিম ভুঁইয়া, মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মওদুদ আহমদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ