পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে পোপ ফ্রান্সিসের সহায়তা চাইলেন প্রেসিডেন্ট
বাংলাদেশ সফররত ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে তার সম্মানে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের দেয়া এক নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এ কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ বাসভূমে ফেরাতে এবং এ সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমার সরকারের ওপর অব্যাহত চাপ প্রয়োগে পোপ ফ্রান্সিসের সহায়তা কামনা করেন। বঙ্গভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে এক একান্ত বৈঠকে তিনি এ সহায়তা চান।
প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, বৈঠকে প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে সেক্ষেত্রে পোপের সক্রিয় সহায়তা কামনা করেন। রোহিঙ্গার সঙ্কট প্রশ্নে পোপের অবস্থানের প্রশংসা করে প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেন, রোহিঙ্গাদের তাদের পিতৃভূমিতে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিতকরণে পোপ ফ্রান্সিস খুবই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবেন।
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ভ্যাটিকান সিটির আন্তরিক সমর্থনের কথা স্মরণ করে বলেন, ১৯৭৩ সালে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে ভ্যাটিকান সিটির দূতাবাস খোলার পর থেকে বাংলাদেশ ও ভ্যাটিকান সিটির সম্পর্ক ধীরে ধীরে জোরদার হয়েছে। বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেশ উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ধর্ম যার যার কিন্তু এর উৎসবগুলো সবার।’
এর আগে সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ পোপ ফ্রান্সিসকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানান। প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিব এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে’ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান পোপের
এদিকে বঙ্গভবনে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা সঙ্কটের প্রতি ইঙ্গিত করে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। এসময় চলমান শরণার্থী সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন তিনি।
রোমান ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরু বলেন, ‘রাখাইন থেকে আসা বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। ওইসব শরণার্থীদের মৌলিক প্রয়োজনও পূরণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। যার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ মানবিক এবং ঐক্যের পরিচয় দিয়েছে।’ তবে এসময় তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেন।
সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের এগিয়ে আসাটা জরুরি উল্লেখ করে পোপ বলেন, ‘এই ঘটনা কোনও সামান্য ব্যাপার নয়। পুরো পৃথিবীর সামনেই এটি ঘটে চলছে। শরণার্থী শিবিরগুলোতে যারা রয়েছে তারা আমাদেরই আত্মীয়। সেখানে মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট, বেশিরভাগই নারী ও শিশু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদের গুরুত্ব বুঝতে আমরা ব্যর্থ হইনি। তাদের জন্য দ্রুত মানবিক সহায়তা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘গুরুতর এই সঙ্কট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে নিরপেক্ষ অবস্থান নিতে হবে। পাশাপাশি তাদের সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়াও অত্যন্ত জরুরি।’ এ সময় রাখাইনের সঙ্কটের সমাধান ও শরণার্থীদের ত্রাণ সহযোগিতার পাশাপাশি রাজনৈতিক সহায়তা দিতেও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান পোপ।
গণপ্রার্থনায় অংশ নেবেন ৮০ হাজার ক্যাথলিক খ্রিস্টান
আজ (শুক্রবার) সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণপ্রার্থনায় বসবেন পোপ। এই গণপ্রার্থনায় অংশ নিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছেন দেশের ৮০ হাজার রোমান ক্যাথলিক নাগরিক। নিজ দেশের মাটিতে রোমান ক্যাথলিকদের প্রধান ধর্মগুরুর প্রার্থনায় অংশ নেওয়াকে সৌভাগ্যের মনে করছেন তারা।
এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিস্টান প্রধান কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও বলেন, ‘আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। সেই আশির দশকের পর থেকে আমরা অপেক্ষা করে রয়েছি প্রধান ধর্মগুরুর প্রার্থনায় অংশ নিতে। পোপ ফ্রান্সিসের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় আয়োজিত প্রার্থনায় দেশের ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা অংশ নেবেন।’ সোহরাওয়ার্দীর এই প্রার্থনা উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএমপি’র বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণপ্রার্থনার ভেন্যু ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ডিএমপি’র রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘আমরা জেনেছি এই সমাবেশে খ্রিস্টান ধর্মাবলীর প্রায় ৮০ হাজার লোক অংশ গ্রহণ করবে। তাদের নিরাপত্তায় র্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ভেন্যু এলাকা সুইপিংসহ সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া স্ট্যান্ডবাই হিসেবে সোয়াট ও বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যগণও প্রস্তুত থাকবে। মারুফ হোসেন বলেন, সমাবেশের নিরাপত্তায় সমাবেশস্থলে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার যাতায়াতের রাস্তায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, রুফটপ ডিউটি, মোবাইল ডিউটি মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে তার সফর উপলক্ষে সম্প্রতি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আইজিপি বলেন, ধর্মগুরু পোপের আগমন সফল করতে আগত বিদেশী অতিথিদের জন্য নির্ধারিত হোটেল, সম্মেলনস্থলসহ প্রত্যেকটি ভেন্যু সুইপিংসহ সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হবে। আর্চওয়ে স্থাপন এবং পুরুষের পাশাপাশি মহিলা স্বেচ্ছাসেবক সদস্যও রাখা হবে। পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বের অন্যতম একজন সম্মানীয় ব্যক্তি উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, তার বাংলাদেশ সফর আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। পোপের সফরকালে পুলিশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সফরের সকল ভেন্যু এবং ভিভিআইপি গমনাগমন পথে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে পুলিশ এবং র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার সফরেও ইয়াঙ্গুনে লাখো খ্রিস্টভক্তের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এক উন্মুক্ত প্রার্থনা সভায় অংশ নেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। সেখানে তিনি বলেন, ‘দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সহিংসতার ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে মিয়ানমার।’ এ সময় তিনি মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সব জাতিগোষ্ঠীকে মিলেমিশে থাকার আহ্বান জানান।
পোপের সফরসূচিতে, আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে। পরে ভ্যাটিকান দূতাবাসে সাক্ষাতের পর আর্চবিশপ হাউসে তিনি আন্তঃধর্মীয় নেতা ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
এছাড়া, আগামীকাল সকালে মাদার তেরেসা হাউস সফরসহ খ্রিস্টধর্মের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন পোপ ফ্রান্সিস। বিকেলে নটরডেম কলেজে যুব স¤প্রদায়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি।
পোপ ফ্রান্সিসকে ঢাকায় লালগালিচা সংবর্ধনা
এর আগে বিশ্বের কোটি কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীর প্রধান ধর্মীয় গুরু পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল বিকেলে হযরত শাহজালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। ক্যাথলিক ধর্মগুরু ও সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান তার তিনদিনের মিয়ানমার সফর শেষে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করলে একুশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানানো হয়। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ভিভিআইপি টারমাকের কাছে পোপকে স্বাগত জানান। এ সময় দুটি ছোট শিশু পোপকে ফুলের তোড়া উপহার দেয়। পোপকে গার্ড অব অনার ও রাষ্ট্রীয় অভিবাদন প্রদান করা হয়। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পোপ ফ্রান্সিস অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় বাংলাদেশ ও ভ্যাটিকান সিটির জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এটাই হচ্ছে ক্যাথলিক কোনো পোপের দ্বিতীয় বাংলাদেশ সফর। এর আগে ১৯৮৬ সালে পোপ দ্বিতীয় জনপল বাংলাদেশ সফর করেন।
পোপ ফ্রান্সিস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ক্যাথলিক বিশপস্্ কনফারেন্সের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করছেন। এরপর প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ উপস্থিত মন্ত্রিবর্গ ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে পোপের পরিচয় করিয়ে দেন। পোপকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহম্মদ শফিউল আলম, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, বাংলাদেশে ভ্যাটিকান সিটি রাষ্ট্রদূত জর্জ কোচেরী ও পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক অন্যান্যের মধ্যে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
বিমানবন্দর থেকে পোপ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান। এরপর তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এদিকে পোপের সফর উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
পোপ ফ্রান্সিস ৮০ বছর আগে ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সের ফ্লোগরেস-এ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ ২৬৬তম পোপ হিসেবে নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে ৩১৯ একর আয়তনের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত হন। সূত্র : বাসস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।