Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শুল্ক ছাড়াই ট্রানজিট সুবিধা নিচ্ছে ভারত

আশুগঞ্জ (ব্রাক্ষণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শুল্ক ছাড়াই একের পর এক ট্রানজিট সুবিধা নিচ্ছে ভারত। এ সুবিধার মাধ্যমে ইতিপূর্বে বাংলাদেশের সিলেট ও মৌলভীবাজার সীমান্তের স্থলপথ ব্যবহার করে আসাম থেকে ত্রিপুরায় তেল পরিবহন করেছে দেশটি। এদিকে পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল, স্টীল জাতীয় পণ্য, চাল, লবণসহ কয়েক দফায় পণ্য পরিবহনের পর এবার ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দন ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নামমাত্র শুল্কে ২২০ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল নিতে যাচ্ছে ভারত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরীক্ষামূলকভাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া এলাকা থেকে ১২ নভেম্বর দুপুরে ইমামী এগ্রোটেক লিমিটেডের প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের ২শ’ ২০ মেট্রিকটন এডিবল অয়েল (ভোজ্য তেল) নিয়ে গত ২৬ নভেম্বর রোববার দুপুরে এমভি শান্তিপুর নামে একটি পণ্যবাহী ভারতীয় জাহাজ আশুগঞ্জে নৌবন্দরে নোঙ্গর করে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দুটি ট্রাকে করে প্রায় ২৫ মেট্রিক টন ভোজ্য তেলবাহী কন্টিন নিয়ে আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে লোড হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় গেছে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া এলাকা থেকে আসা ভোজ্য তেলবাহী এমভি শান্তিপুর জাহাজটি গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাষ্টমস ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সিলগালা খোলা হয় এবং বিকালে পণ্য খালাসের কাজ শুরু হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ জানান, ১৯৭২ সালের নৌপ্রটোকল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যমান নৌ-বাণিজ্য প্রটোকলের অধীনে ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর উপস্থিতিতে যৌথ উদ্দ্যোগে প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডবিøউটিটি) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ভারত সরকার বাংলাদেশের নৌপথ ও স্থলপথ ব্যবহার করে ২০১৬ সালের জুন মাসে প্রথম মাশুল দিয়ে স্টীল শিট জাতীয় পণ্য ত্রিপুরা রাজ্যে ট্রান্সশিপমেন্ট করা হয়েছিল। এটাই ছিল প্রথম মাসূলের বিনিময়ে পণ্য পরিবহন। বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ভারতীয় এসব পণ্য পরিবহনে প্রতি টনে ১৯২ টাকা ২২ পয়সা হারে মাশুল আদায় করা হয়। এছাড়া ভয়েজ পারমিশন ফি, পাইলট ফি, বার্দিং (অবস্থান) ফি, ল্যান্ডিং ফি, চ্যানেল চার্জ ও লেবার হোলিং চার্জ সহ অন্যান্য সুবিধা বাংলাদেশ পাবে কর্মকর্তারা জানান। এর আগে বিশেষ মানবিক কারনে দু’দফায় ফি ছাড়াই আশুগঞ্জ নদী বন্দর ব্যবহার করে পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল এবং খাদ্যশস্য ট্রানজিট করেছিল ভারত।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ১৯২ টাকা মাসুল দেয়া হবে। এছাড়াও এই তেল পরিবহনের সময় টনপ্রতি প্রক্রিয়াকরণ বাবদ খরচ ১০, ট্রানশিপমেন্ট বাবদ ২০, মার্চেন্ট ওভারটাইম ৪০, নিরাপত্তা ১০০, পণ্য এসকর্ট ফি ৫০, অটোমেশন ফি ১০, স্ক্যানিং ব্যয় এবং অন্যান্য ফি ধরা হয় ৫০ টাকাসহ পণ্য পরিবহণ ও লেবার চার্জ পাওয়া যাবে বলে জানান কাষ্টমস কর্তৃপক্ষ। এদিকে বাংলাদেশের লোডিং ঠিকাদার আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করে ভারতের আগরতলায় পৌঁছে দেয়ার কাজ করছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রানজিটের সুবিধা বাংলাদেশ নয়, ভারতের জন্য। কারণ কলকাতা থেকে আগারতলা যেতে দীর্ঘপথ ব্যবহার করতে হতো। আগারতলা যেতে শিলিগুঁড়ি, আসাম, মেঘালয়, করিমগঞ্জ হয়ে পাড়ি দিতে হতো ১ হাজার ৫৬০ কিলোমিটার পথ। এ জন্য সময় লাগত ৮ দিন বা ১৯২ ঘণ্টা। ট্রানজিট ব্যবহারে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা পথে যেতে সেই দূরত্ব এক হাজার কিলোমিটার কমে হয়েছে ৫৫৯ কিলোমিটার। তাই এই সুযোগ বাংলাদেশের কোনো কাজে আগেও লাগেনি, সামনেও লাগবে বলে মনে হয় না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতের এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে জ্বালানি পরিবহনের জন্য গত বছরের ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় বাংলাদেশের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সঙ্গে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন লিমিটেডের (আইওসিএল) মধ্যে এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত (এমওইউ) হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করতে ভারতকে এ বিশেষ ট্রানজিটের অনুমোদন দেয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ভারতের জ্বালানি তেলবাহী ট্রাক-লরি উত্তর আসামের বঙ্গাইগাঁও ও মেঘালয় থেকে সিলেটের তামাবিল সীমান্তের ডাউকি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে ত্রিপুরায় যেতে পারবে। এরই সূত্র ধরে এবার ভারতের কলকাতা থেকে নৌপথে আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে তেলবাহী পণ্য ভারতের আগরতলা নেয়া শুরু করেছে ভারত। যদি এতে সফলতা পায় ভারত তাহলে এই পথে নিয়মিত তেল জাতীয় পণ্য পরিবহণ করবে বলে একটি সূত্রে জানা যায়।
তবে বাংলাদেশ-ভারত নৌপথ, সড়ক পথে ট্রার্নজিট চুক্তি করার ক্ষেত্রে এদেশের সুবিধার বা লাভ/লোকসানের কথা বিবেচনা বা চিন্তা করে যে কোনো চুক্তি করা উচিত বলে মনে করেন সচেতনমহল ।
আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী ও তেল পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান আদনান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. আক্তার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভারতে তেল পরিবহন শুরু হয়েছে। বুধবার বিকেল ২টি ট্রাকে করে প্রায় ২৬শ’ ৭৮টি কার্টনে প্রায় ২৫ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল নিয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আগরতলার উদ্দেশ্যে যায়।
আগরতলার আমদানীকারক ও জগন্নাথ ট্রেডিং এর মালিক পিযূষ বণিক জানান, বর্তমানে ২শ’ ২০ মেট্রিক টন তেল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া থেকে আগরতলায় নেয়া হচ্ছে। এই চালানটি সফল হলে আরো মালামাল আগরতলায় নেয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করব। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জাহাজ, শ্রমিক ও ট্রাক ব্যবহার করা হচ্ছে। এদিক থেকে মালামাল নেয়া হলে আমরা যেমন উপকৃত হব। বাংলাদেশ সরকারও রাজস্ব পাচ্ছে পাশাপাশি এখানে কর্মরত শ্রমিকরাও সুবিধা ভোগ করবে।
ইমামী এগ্রোটেক লিমিটেড এর লজিস্টিক ম্যানেজার সঞ্জয় মিত্র জানান, পরীক্ষামূলকভাবে ১২ নভেম্বর দুপুরে ইমামী এগ্রোটেক লিমিটেডের প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের ২শ’ ২০ মেট্রিমটন এডিবল অয়েল (ভোজ্য তেল) নিয়ে ছেড়ে আসে ভারতীয় জাহাজ এমভি শান্তিপুর। মালামাল ভালভাবে পৌঁছলে এই রাস্তা ব্যবহার করে ১০ হাজার মেট্রিকটন পণ্য আগরতলায় নেয়া হবে। এই রাস্তা ব্যবহার করায় সময় এবং অর্থ দুটোই বাঁচবে।
ভৈরব ও আশুগঞ্জ নৌবন্দরের পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, গত রোববার ২৬ নভেম্বর দুপুরে ২২০ মেট্রিক টন তেল নিয়ে এমভি শান্তিপুর নামে একটি জাহাজ আশুগঞ্জ নৌবন্দরে নোঙর করে। ভারতের ইমামী এগ্রোটেক্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান এ তেল পরিবহন করছে। এদিকে দু’দেশের মধ্যে বর্তমান নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় ট্রাজিটের পণ্য পরিবহন শুরু হলে এদেশের ব্যবসা-বানিজ্যর যেমন প্রসার ঘটবে তেমনি প্রচুর রাজস্বও আদায় হবে। এদেশই অনেক বেশি লাভবান হবে। নৌ-পথে দেশীয় জাহাজ, স্থানীয় ট্রাক ও শ্রমিক লোড-আনলোডের কাজে ব্যবহারের ফলে কর্মস্থানের সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ-ভারত নিয়মিত ট্রানজিট চালু হলে এখানে আইসিটি অফিস, ওয়ার হাউজ স্থাপন, রাস্তা- ঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো বাস্তবায়ন করা হবে। নৌ-পথে প্রায় ৯শ’ কিঃ মিঃ নদী পথ খনন করা হবে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান।



 

Show all comments
  • Mustafiz ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ৯:৫১ এএম says : 0
    কৃষক ও ছাত্রদের উপর ভ্যাট ধরা হবে এতে লজ্জা লাগে না ?????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ