মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। শীর্ষ এই বাণিজ্য অংশীদারের বিরুদ্ধে অ্যান্টি-ডাম্পিং ও অ্যান্টি-সাবসিডি তদন্ত শুরু করেছে দেশটি। মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনের তৈরি অ্যালুমিনিয়াম পণ্য রফতানিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে ভর্তুকি ও শুল্ক সুবিধা দেয়া হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতেই তদন্তটি করা হচ্ছে। দীর্ঘ ২৫ বছরের বেশি সময় পর নিজেদের কোনো বাণিজ্য অংশীদারের বিরুদ্ধে ডাম্পিংবিরোধী তদন্ত করছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, শিল্প খাতের কোনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ থেকে নয়; বরং সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে তারা চীনের বিরুদ্ধে অ্যান্টি-ডাম্পিং তদন্ত করছে। সর্বশেষ ১৯৮৫ সালে ‘স্ব-উদ্যোগে’ অ্যান্টি-ডাম্পিং তদন্ত পরিচালনা করেছিল মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে সময় জাপানের সেমিকন্ডাক্টর আমদানিতে এ ধরনের তদন্ত পরিচালনা করে তত্কালীন রিগ্যান প্রশাসন। এছাড়া নিয়মবহির্ভূত সাবসিডি নিয়ে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিজে থেকে সর্বশেষ ১৯৯১ সালে তদন্ত পরিচালনা করেছিল। এ সময় কানাডা থেকে নরম কাঠের তক্তা আমদানিতে অন্যায্য ভর্তুকি দেয়া হয় কিনা সে বিষয়টি যাচাই করে দেখা হয়। মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস সা¤প্রতিক তদন্ত প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম দিন থেকেই বলে আসছেন তার প্রশাসন কোনো ধরনের অবৈধ বাণিজ্যচর্চা সহ্য করবে না। মার্কিন ব্যবসায়ী, কর্মী ও কৃষকদের কাছে তিনি দেশের বাণিজ্য আইন পুরোপুরি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আজকের এ পদক্ষেপের মাধ্যমে মার্কিন জনসাধারণকে দেয়া কথার কিছুটা রাখতে পারলাম।’ তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার চীনের বিরুদ্ধে যে মামলাটি শুরু করা হলো তা নিয়ে দেশের অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের সঙ্গে কাজ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চীন সফর শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশে ফেরার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অ্যান্টি-ডাম্পিং ও অ্যান্টি-সাবসিডি তদন্ত শুরু করা হলো। অথচ এ সফরে চীনের প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিং উভয়পক্ষের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন। এ সময় উভয়পক্ষই নিজেদের মধ্যে মজবুত সম্পর্ক থাকার দাবি করে। তবে দেশের ভেতরেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা শুরু হয়। চীনের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুত অন্যান্য বাণিজ্য পদক্ষেপ কার্যকর না করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে চীনকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুদ্রা অবমূল্যায়নকারী হিসেবে আখ্যা দেয়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে সমালোচনা জোরালো হয়ে ওঠে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাম্পিং ও সাবসিডিবিরোধী তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে, এসব সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় কঠোর ভূমিকা গ্রহণ করেছে ওয়াশিংটন। মঙ্গলবারের এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের নেয়া সা¤প্রতিক প্ররোচনামূলক কর্মসূচির তালিকায় যুক্ত হলো। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর সূত্র ধরে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধকে উসকে দেয়া হবে। অক্টোবরে চীনের তৈরি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল আমদানিতে প্রাথমিকভাবে ডাম্পিং-মার্জিন নির্ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে সময় চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এমওসির পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি প্রকৃত পরিস্থিতির ‘গুরুতর বিকৃতি।’ আন্তর্জাতিক শর্তাবলি পূরণ ছাড়াও ভুল চর্চা শুধরে নিতে পদক্ষেপ নেয়ার আহŸান জানানো হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। এমওসির পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, নিজেদের কোম্পানিগুলোর অধিকার রক্ষায় চীন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এদিকে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে চীনের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরো কয়েক মাস লেগে যাবে। কারণ গতানুগতিক মামলাগুলোর মতো স্ব-প্রণোদিত তদন্তের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম মেনে চলতে হয়। কিন্তু চীনের বিরুদ্ধে মামলাকে বাণিজ্যযুদ্ধ উসকে দেয়ার মতো পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনভিত্তিক পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ চাদ বাউন বলেন, ‘স্ব-প্রণোদিত তদন্তের অর্থ হচ্ছে, প্রশাসন আমদানি সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক।’ নিজেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মামলার খবরে বুধবার ‘তীব্র অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছে চীন। এক বিবৃতিতে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক ইতিহাসে এ ধরনের নজির খুবই কম। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের বাণিজ্য রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে চীন তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছে।’ গত বছর চীন থেকে ৬০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যমানের অ্যালুমিনিয়াম শিট আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ধারণা করা হচ্ছে ভবনসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজ, পরিবহন ও অ্যাপ্লায়েন্স প্রস্তুতে ব্যবহূত এ পণ্যটিতে ব্যাপকহারে ভর্তুকি দেয় চীন। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে তা বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করা হয়। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, এএফপি, সিনহুয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।