Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর অবদান

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নবুওয়তির ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ মিশন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে পূর্ণতা লাভ করে। তাঁর মিশনের লক্ষ্য ছিল জুলুমের অবসান ঘটিয়ে মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ কায়েম করা। যে লক্ষ্য নিয়ে তিনি দুনিয়ায় আবিভর্‚ত হন, ২৩ বছরে প্রাণান্তকর প্রয়াস চালিয়ে তিনি তা কার্যকর করেন সার্থকভাবে। তাঁর উপস্থাপিত জীবন ব্যবস্থা মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বদিক দিয়ে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নিয়ামক ও চালিকা শক্তি। পবিত্র কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী, মহান আল্লাহ সব নবী ও রাসূলকে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের বিধান এবং তা কার্যকর করার দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন (সূরা হাদিদ : ২৫)। জীবনের সর্বক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফের গুরুত্ব অপরিহার্য। কারণ ন্যায়বিচার ছাড়া মানব জীবনের কোনো ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। 

আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ (সা:) সমাজে ন্যায়বিচারের মানদন্ড সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। জাতি-ধর্ম, বর্ণ-শ্রেণী, পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, ধনী-দরিদ্র, প্রভু-ভৃত্য সবাইর ক্ষেত্রে বিচার সমান, এখানে বিন্দুমাত্র হেরফেরের অবকাশ ছিল না। দয়া বা পক্ষপাতিত্ব আল্লাহর বিধান কার্যকরকরণে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। হজরত ‘আয়েশা (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা:) তাঁর নিজস্ব ব্যাপারে কারো নিকট হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি (হাফিজ আবু শায়খ ইসফাহানি, আখলাকুন নবী (সা:), পৃ. ১৯)।
সামাজিক জীবনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ (সা:) বেশ কয়েকটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রথমত তিনি অর্থসম্পদ অর্জন, সঞ্চয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন আনার প্রয়াস চালান। সমকালীন দুনিয়া বিশেষত প্রাক- ইসলামি সমাজে ধন-সম্পদ ছিল আভিজাত্যের মাপকাঠি, কামিয়াবির নিদর্শন, শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। তাই মানুষ হন্যে হয়ে অর্থ ও সম্পদ অর্জনের পেছনে ছুটেছে সারা জীবন। বৈধ-অবৈধ, হালাল-হারাম, ন্যায়নীতি, পাপ-পুণ্য এসব ধার ধারেনি। এভাবে মানুষ হয়েছে অর্থ-সম্পদের দাস, আর অর্থ-সম্পদ হয়েছে তাদের প্রভু। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের লক্ষ্যে ওয়াহি নির্ভর যে দর্শন পেশ করেন, তা হলো মানব জীবনে অর্থ-সম্পদ অপরিহার্য। জীবন ও জীবিকার তাগিদে অর্থ-সম্পদ অর্জন করতে হয়, কাজে লাগাতে হয়, কিন্তু তা জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। অর্থ ও ধনসম্পদসহ দুনিয়ার সব কিছুই মানুষের সেবক ও খাদেম। পৃথিবীর বস্তু নিশ্চয় মানুষের জন্য সৃষ্টি (সূরা বাকারা :২৯)। মানুষ ও মানুষের সব কর্মকান্ড কেবল আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিবেদিত। সুতরাং অর্থ-সম্পদ অর্জন, সঞ্চয় ও ব্যয় করতে হবে আল্লাহর নির্দেশিত পথে। এতেই নিহিত আছে মানুষের মুক্তি ও কামিয়াবি।
সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সা:) জনগণকে নীতি ও বিধিসম্মতভাবে অর্থ-সম্পদ অর্জন করার এবং জাকাত ও সাদকার মাধ্যমে সে অর্জিত সম্পদের কিয়দংশ দুঃখি ও অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশ দেন। অধিকন্তু রাষ্ট্রের আর্থিক সম্পদে জনগণের অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা:) ছয় প্রকার রাজস্ব প্রবর্তন করেন। এগুলো হলো- ০১. আল-গণিমাহ বা যুদ্ধলব্ধ সম্পত্তি, ০২. জাকাত বা ধনীদের দেয় দরিদ্র কর, ০৩. খারাজ বা অমুসলিম কৃষকদের ভ‚মি কর, ০৪. জিজিয়া বা অমুসলিমদের নিরাপত্তা কর, ০৫. আল-ফে বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি, ০৬. সাদকা বা স্বেচ্ছাধীন দান।
এসব খাতে সংগৃহীত রাজস্ব নির্ধারিত হারে জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হতো। এ ব্যবস্থা রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর মদীনা জীবনে এবং পরবর্তীতে খুলাফায়ে রাশিদুনের শাসনামলে জনগণের সামাজিক জীবনে আশানুরূপ সুফল বয়ে আনে। অভাব দূরীকরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর উক্ত পদক্ষেপ ছিল যুগান্তকারী। স্বাচ্ছন্দ্য এমন অবস্থায় পৌঁছেছিল যে, জাকাত গ্রহণের জন্য কোনো দুঃস্থ পাওয়া যায়নি। জাস্টিস সায়্যিদ আমীর আলী তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দি স্পিরিট অব ইসলাম’-এ বলেন, ‘ইসলামের পূর্বে পৃথিবীর কোনো ধর্মই ধর্মীয় ব্যবস্থার মধ্যে সরাসরি আইন প্রণয়ন করে জাকাত প্রদান, বিধবাদের রক্ষণাবেক্ষণ, ইয়াতিম ও নিঃসম্বলদের লালনকে পবিত্র করেনি। প্রাথমিক পর্যায়ে খ্রিষ্টানদের মধ্যে দানোৎসব ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভর করত’(জাস্টিস সৈয়দ আমীর আলী, দি স্পিরিট অব ইসলাম, পৃ. ২৫৭)।
সামাজিক ন্যায়বিচার ও ইনসাফ সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে মহানবী (সা:) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী ঘোষণা দেন যে, মূলত সম্পদের মালিকানা নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর। মানুষ ভোগ-দখলের অধিকারী মাত্র। আবার ভোগ-দখলের ক্ষেত্রে তার নিজের সাথে সমাজের অপরাপর দুঃস্থ ও বঞ্চিত সদস্যরাও শরিক। জাকাত ছাড়াও ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার বা হক রয়েছে। ‘হক’ বা অধিকার শব্দের দ্বারা সমাজের ধনী-দরিদ্রের পারস্পরিক সহমর্মিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। রাসূলুল্লাহ (সা:) সম্পদ বিকেন্দ্রীকরণ ও সুষম বণ্টনের এমন এক সুসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, যাতে সম্পদ শুধু সমাজের ধর্ণাঢ্যদের মাঝে আবর্তিত হতে না পারে। ধনী আরো ধনী, গরিব আরো গরিব হওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (সা:) স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যে, যেসব ধনকুবের অর্থ-সম্পদ সঞ্চিত করে দুঃখি মানুষের কল্যাণে ব্যয় করে না, কিয়ামতের দিন এসব ধনরাশি তার শাস্তির উপকরণ হয়ে দাঁড়াবে।
রাসূলুল্লাহ (সা:) সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে আদর্শ সমাজ গড়ে তোলেন। বংশ কৌলীন্য ও আভিজাত্যের গৌরবের পরিবর্তে মানবতার ভিত্তিতে সমাজ বন্ধন সুদৃঢ় করেন। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা দেন, আরবের উপর অনারবের, অনারবের উপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সব মানুষ একে অপরের ভাই। সব মানুষ আদমের বংশধর আর আদম মাটি হতে তৈরি (আহমদ ইবনে হাম্বল, মুসনাদ, ৫ খ., পৃ. ৪১১; জাহিজ, আল বয়ান ওয়াত তিবঈন, ২ খ., পৃ. ৩৩)। ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যার মধ্যে খোদাভীতি প্রবল।’ রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর এ ঘোষণা ছিল তৎকালীন সমাজের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ ও দ্রোহ। কারণ বংশ কৌলিন্য ও রক্তের মর্যাদা ছিল সামাজিক আভিজাত্যের ভিত্তি। তিনি ঈমানদারদের সুভ্রাতৃত্বের বন্ধনে সুদৃঢ় করে এক অখন্ড দেহ সত্তায় পরিণত করেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন-
‘সকল মু’মিন এক মানব দেহের মতো, যদি তার চোখ অসুস্থ হয়; তখন তার সর্বাঙ্গ অসুস্থ হয়ে পড়ে, আর যদি তাঁর মাথা ব্যথা হয়; তখন তার সমস্ত দেহই ব্যথিত হয় (মিশকাত আল মাসাবিহ, ৯ খ., পৃ. ১২৮)।
এই পৃথিবীতে সব মানুষই যে আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান, কৃষ্ণ-শ্বেত, ধনী-নির্ধন সকলই যে আল্লাহর সৃষ্ট মানুষ, সব মানুষই যে পরস্পর ভাই ভাই, ধর্মীয় ও কর্মীয় অধিকার যে সব মানুষেরই সমান- এ কথা বলিষ্ট কণ্ঠে ঘোষণা করেন এবং স্বীয় কর্মে ও আচরণে প্রমাণ করেন ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা:)। রাসূলুল্লাহ (সা:)-ই সর্বপ্রথম ঘোষণা করেন মানুষের মুক্তি-বাণী। সারা জীবনের সাধনায় তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন এমন এক সমাজ, যে সমাজে মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়, ব্যক্তি ও জাতি-গোত্র পায় পূর্ণ স্বাধীনতার আস্বাদন। মানুষ সমাজের বুকে মানুষ রূপে শির উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ লাভ করে। মানব জাতির প্রতি ইসলামের বৈপ্লবিক অবদানের মধ্যে মানুষের প্রতি ন্যায় বিচারই হলো অন্যতম (ব্যারিস্টার এস এ সিদ্দিকী, ন্যায়বিচার, ব্যক্তি ও ধর্মীয় স্বাধীনতায় ইসলামের বৈপ্লবিক অবদান, পৃ. ক, ঙ)। সমাজ জীবনে মানুষ একে অপরের উপর নির্ভরশীল। তাই পারস্পরিক সহানুভ‚তি, ভ্রাতৃত্ব, সমঝোতা প্রভৃতি সদাচরণ সমাজে অন্যায় ও জুুলুমের অবসান ঘটায় এবং ক্রমান্বয়ে মানবসভ্যতাকে গতিশীল করে তোলে। তাই দেখা যায়, মানুষ যখন পারস্পরিক সমঝোতা ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে অখন্ড ভ্রাতৃসমাজ গঠন করেছে তখন তারা অগ্রগতি ও শান্তির উচ্চমার্গে পৌঁছে গেছে। আর যখনই বিভেদ মাথাচাড়া দিয়া উঠেছে, তখন পতন হয়েছে অনিবার্য পরিণতি। ইতিহাসের ঘটনা পরম্পরা এইরূপ অসংখ্য দৃষ্টান্তে ভরা। সমাজের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক দয়া, সৌহার্দ ও সৌজন্য সুস্থ সমাজ প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত। সহমর্মিতাসুলভ গুণাবলি মানুষকে একে অপরের নিকটে নিয়ে আসে। হিংসা-বিদ্বেষ বিভেদের বীজ বপিত করে। যার ফলশ্রæতিতে সামাজিক সংহতি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সা:) এমন এক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন, যার ভিত্তি ছিল পারস্পরিক সম্মানবোধ, ন্যায় বিচার ও মানবিকতাবোধ (আল হায়সামি, কাশফুল আসতার, ২ খ., পৃ. ৩৫)।
রাসূলুল্লাহ (সা:) শতাব্দীর এমন এক ক্রান্তিকালে নতুন সমাজ গড়ার প্রয়াসী হন যখন গোটা দুনিয়ার বিভিন্ন সমাজে বর্ণপ্রথা, বর্ণবৈষম্য, বংশ কৌলিন্য ও আভিজাত্যের দম্ভ মানুষকে গৃহপালিত জন্তু অথবা বিশেষ বৃক্ষের চেয়ে হীন পর্যায়ে নিয়ে আসে। জন্তু বিশেষ ও বৃক্ষবিশেষকে পবিত্র জ্ঞানে অর্চনা করা হতো তখন। সাধারণ মানুষের তুলনায় এসব জন্তু-বস্তুর মর্যাদা ছিল অনেক বেশি। রাসূলুল্লাহ (সা:) মানুষের মনন ও মানসিকতায় এ কথা চিত্রায়িত করতে সক্ষম হন যে, সৃষ্টিজগতে সবচেয়ে বেশি মূল্যবান, সম্মানের যোগ্য ও ভালোবাসার পাত্র হলো মানুষ (সায়্যিদ আবুল হাসান ‘আলী নদভী, নবীয়ে রহমত, ২ খ., পৃ. ২২০)। মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। দুনিয়ার সবকিছু মানুষের কল্যাণের জন্য আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। মানুষ জগতের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আল কুরআনের ভাষায় :
‘নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করিয়াছি; স্থলে ও সমুদ্রে উহাদের চলাচলের বাহন করিয়া দিয়াছি; উহাদিগকে উত্তম রিজিক দান করিয়াছি এবং আমি যাহাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছি তাহাদের অনেকের উপর উহাদিগকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছি’ ( সূরা বনি ইসরাঈল : ৭০)।
রাসূলুল্লাহ (সা:) মদীনায় ইনসাফপূর্ণ যে সমাজ কায়েম করেন, তার ভিত্তি ছিল নৈতিকতা ও মানবজাতির সার্বজনীনতা। মানুষ যদি রিপুর তাড়নার নিকট পরাভ‚ত হয় তা হলে সুস্থ সমাজের বিকাশধারায় সে কোনো তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখতে পারে না। মনুষ্যত্বের উজ্জীবন, চারিত্রিক, উৎকর্ষ ও নৈতিক উপলব্ধি সুস্থ সমাজ বিকাশের সহায়ক আর ইন্দ্রিয়জাত প্রবণতা, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ, অনিষ্টকর প্রথা সমাজের সুস্থতার ভিত্তিমূলকে একেবারে নড়বড়ে করে দেয়, জন্ম হয় জুলুম ও না-ইনসাফির। এই উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সা:) জুয়া খেলা, মদ্যপান, নেশাগ্রহণ, কুসিদপ্রথা, জিনা-সমকামিতা ও অহেতুক রক্তপাত নিষিদ্ধ করে দেন (জালালউদ্দীন সায়ুতি, দুর আল মানসুর, ১ খ., পৃ. ৩৯১; ইবনে কাসির, সিরাতুন নবুবিয়াহ, ৪ খ, ১৯৭৮, পৃ.৩৯২)। ফলে সমাজবিরোধী কার্যকলাপের ভয়াবহতার হাত হতে মানুষ রেহাই পায়। উল্লেখ্য, মদ্যপান, জুয়া যাবতীয় অমার্জিত, নীচ স্বভাবের অনিষ্ট কার্যকলাপ ও সব ধরনের আতিশয্য হলো খ্রিষ্ট-ইয়াহুদি ও পৌত্তলিক সমাজের অভিশাপ। রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো সভ্যতার অভিশাপ হতে মানুষকে মুক্তি দিয়ে ধর্ম নিয়ন্ত্রিত ও মানবিকতায় উজ্জীবিত নতুন সমাজের গোড়াপত্তন। বিশ্ব মানবতার প্রতি এটা মহান রাসূলের ইহসান।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আমরা যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় রাসূলুল্লাহ (সা:) যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তা ছিল যুগান্তকারী ও বৈপ্লবিক। মদীনায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত সমাজ কাঠামোতে যে শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছিল পৃথিবীর অন্য কোনো সমাজে তার নজির পাওয়া মুশকিল। রাসূলুল্লাহ্ (স:)-এর শিক্ষা ও আদর্শের অনুসরণে খুলাফায়ে রাশেদিন যে সমাজব্যবস্থা কায়েম করেন, তা ছিল পুরাপুরি সুবিচার ও ন্যায়-ইনসাফ নির্ভর। মানুষের প্রতি ন্যায়বিচারের যে নজির ইসলামের মহান রাসূল (সা:) দুনিয়ার বুকে স্থাপন করে গেছেন, তার আলোক শিখা এখনো পৃথিবীতে অনির্বাণ।

লেখক : ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ওমর গণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম;, সম্পাদক, মাসিক আত-তাওহিদ, চট্টগ্রাম;ঊ-সধরষ: ফৎশযধষরফ০৯@মসধরষ.পড়স



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন