Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আর কত বয়স হলে ভাতা পাবেন ফুলমালা-বনফুল

প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আতিয়ার রহমান, নড়াইল থেকে

শতবর্ষীয় ফুলমালার খবর রাখে না কেউ। স্বামীর মৃত্যুর পর ১৫ বছর কেটে গেলেও জোটেনি কোনো সাহায্য। সরকারের তরফ থেকেও আজ পর্যন্ত খোঁজ নেয়নি কেউ। অনেকটাই নীরবে নিভৃতে কেটে যাচ্ছে ফুলমালার জীবন। বয়সের ভারে রোগব্যাধি যেন পিছু ছাড়তে নারাজ। সাত সন্তানের জননী ফুলমালা। দেশ স্বাধীনের পর ৪ ছেলের মধ্যে ৩ ছেলে মাকে ছেড়ে পাড়ি জমায় ভারতে। এখন তিনি থাকেন ছোট ছেলে সত্তরোর্ধ আনন্দ বিশ্বাসের সংসারে। এই বয়সে আনন্দ বিশ্বাস সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এখন আর আগের মতো শরীর কাজ করে না তার। কোনো রকম সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। তার ওপর অসুস্থ বৃদ্ধ মাকে নিয়ে দিশেহারা হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে বয়স্ক ভাতা চালু থাকলেও ফুলমালা ও তার ছেলে আনন্দ বিশ্বাসের ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড। নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউপির ইতনা পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত তারাপদ বিশ্বাসের স্ত্রী ফুলমালা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অসুস্থ ফুলমালা বসে আছেন ঘরের এক কোণে। বয়সের ভারে নুব্জ ফুলমালা চোখে কম দেখেন এবং কানে ভালো শোনেন না। বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতা পান কিনা জানতে চাইলে তার ছেলে আনন্দ বিশ্বাস জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে ইতনা ইউপির ১নং ওয়ার্ডের মেম্বর শেখ আবুল কালাম আজাদকে ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা বলেছি। কিন্তু মেম্বর বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, আমাদের চেয়েও কম বয়সী লোকজন ভাতার কার্ড পেলেও আমরা পাই নি। একই গ্রামে ফুলমালার মতো মৃত বদ্ব নাথ বিশ্বাসের স্ত্রী শতবর্ষীয় বনফুল বিশ্বাসের ভাগ্যেও ভাতার কার্ড আজও জোটেনি। বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে হাতের ওপর ভর করে কোন রকম চলাফেরা করেন তিনি। ৮ সন্তানের জননী বনফুল বিশ্বাস দারিদ্র্যের কষাঘাতে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে একটি ভাতার কার্ডের আকুতি জানিয়েছেন। কিন্তু তার এই আকুতি ওয়ার্ড মেম্বরদের হৃদয়কে ছুতে পারেনি। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, দু’বছর আগে ওই ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর দুখি বেগমকে কার্ড করে দেয়ার কথা বললে সে আমার কাছে ৩ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় ভাতার কার্ড পাই নাই’- এমনটাই জানালেন বনফুলের ছোট ছেলে বউ বাসন্তী রানী বিশ্বাস। এ ব্যাপারে ইতনা ইউপির ১ ও ২নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর দুখি বেগমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ফুলমালার বয়স অনেক, যে কোন সময় উনি মারা যেতে পারেন, তাকে কার্ড দিয়ে কি লাভ? বনফুল বিশ্বাসের কাছে কার্ড করার জন্য ৩ হাজার টাকা দাবি করার বিষয়ে জানতে চাইলে দুখি মেম্বর বিষয়টি অস্বীকার করেন। ফুলমালা এবং বনফুলের বয়স্ক ভাতা পাওয়ার উপযোগী কিনা জানতে চাইলে ১নং ওয়ার্ড মেম্বর শেখ আবুল কালাম আজাদ বলেন, তারা ভাতা পাওয়ার উপযোগী, কিন্তু যে পরিমাণ কার্ড বরাদ্দ পাই, তা দিয়ে সবাইকে সস্তুষ্ট করা সম্ভব না। তিনি আরও বলেন, তাদের ব্যাপারে কেউ সুপারিশ করে নাই। যাদের সুপারিশ ও যোগাযোগ করার লোক আছে, তারাই ভাতার কার্ড পায়। এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. শামীম রেজা বলেন, যাদের বয়স বেশি তারা অগ্রাধিকার পাবেন। চেয়ারম্যান ও মেম্বরদের খামখেয়ালিপানার কারণে অনেক বয়ষ্ক দরিদ্র মানুষেরা ভাতা থেকে বঞ্চিত হন। তিনি আরও বলেন, আগামীতে ফুলমালা বিশ্বাস এবং বনফুল বিশ্বাসের মতো বয়ষ্কদের ভাতা প্রাপ্তির বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় আনব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আর কত বয়স হলে ভাতা পাবেন ফুলমালা-বনফুল
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ