Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন পরিকল্পনা বাদ দেয়ার আহ্বান অ্যামনেস্টির

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০৪ পিএম

জনমানবহীন ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের সব পরিকল্পনা বাদ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক বিরাজ পাটনায়েক বলেছেন, ওই দ্বীপটি শরণার্থীদের অন্যান্য আশ্রয়শিবির থেকে অনেক দূরে। বন্যায় তা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিপদজনক এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় সেখানে। এমন জনমানবহীন একটি দ্বীপে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হবে ভয়াবহ একটি ভুল সিদ্ধান্ত।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ: রোহিঙ্গা রিফিউজিস মাস্ট নট বি রিলোকেটেড টু আনইনহ্যাবিটেবল আইল্যান্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ওই ঠেঙ্গারচরে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তাদেরকে এমন সব পরিকল্পনা অবশ্যই বাতিল করতে হবে। উল্লেখ্য, ওই দ্বীপটি বসবাসের উপযোগী করতে ২৮ কোটি ডলার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। দ্বীপটি বিচ্ছিন্ন। বন্যাপ্রবণ। জনমানবহীন। রোহিঙ্গাদেরকে যতদিন মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যাবে ততদিন ওই দ্বীপেই অস্থায়ী ভিত্তিতে রাখা হবে রোহিঙ্গাদেরকে।
বিরাজ পাটনায়েক বলেন, তিন মাস ধরে বাংলাদেশ কমপক্ষে ৬ লাখ রোহিঙ্গার জন্য তার দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। আর এখন তারাই ঝুঁকির মুখে ফেলে দিচ্ছে তারা। এতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে যে প্রশংসা কুড়িয়েছিল তা নষ্ট হবে।
তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গারা আশ্রয় শিবির ত্যাগ করছে এবং তারা মিয়ানমারে ফিরে যাচ্ছে এমনটা দেখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। কিন্তু এতে ওই সব রোহিঙ্গার নিরাপত্তা ও কল্যাণ ঝুঁকিতে পড়বে।
উল্লেখ্য, ঠেঙ্গারচর স্থানীয়ভাবে ভাসানচর নামেও পরিচিত। এ চরটি দৃশ্যমান হয় ১১ বছর আগে। বর্ষার মওসুমে তা মারাত্মকভাবে বন্যাকবলিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তাই জনমানবহীন এই দ্বীপে রোহিঙ্গাদেরকে পুনর্বাসন করার বিষয়ে যে বিপদ রয়েছে সে বিষয়ে মানবাধিকার বিষয়ক সম্প্রদায় সতর্কতা দিয়েছে। নিকটবর্তী বসতি থেকে এই দ্বীপে সময় লাগে দু’ঘণ্টা। তাই রোহিঙ্গাদের কাছে মানবিক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া খুব কঠিন হয়ে পড়বে।
গত সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির অধীনে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা। ২০১৬ সালের অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ শে আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের কারণে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এ সমস্যার মৌলিক কারণ নিয়ে সম্প্রতি একটি বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তাতে দেখানো হয়েছে, রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট, প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য সহ সব রকম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে করা হচ্ছে বর্ণবাদী আচরণ।
রোহিঙ্গাদেরকে ঠেঙ্গারচরে পুনর্বাসন পরিকল্পনা নিয়ে বিরাজ পাটনায়েক বলেন, এখনও বাংলাদেশের হাতে সময় আছে এই অপরিণামদর্শী অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা। জোর করে রোহিঙ্গাদেরকে জোর করে ফেরত পাঠানোর মাধ্যমে অর্জিত সম্মান নষ্ট হবে, আর কিছু নয়। তাতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন হবে এবং রোহিঙ্গারা সেই একই রকম ভয়াবহতার শিকার হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অ্যামনেস্টি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ