Inqilab Logo

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অনিশ্চয়তায় ফিরতে আগ্রহ নেই রোহিঙ্গাদের!

| প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দীপন বিশ্বাস, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে : রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। শনিবার ঢাকা বলছে, এ চুক্তি রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার আগাম সুযোগ তৈরি করবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে সীমিত সময়ের জন্য তাদেরকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হবে।’
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, মিয়ানমার তাদের স্বল্প সময়ের জন্য অস্থায়ী আশ্রয় নিশ্চিত করবে। বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা মেনে শরণার্থীরা রাখাইন প্রদেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অনুমতি পাবে। ২০১২ সালে রাখাইনে সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা সেখানে শরণার্থী শিবিরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বসবাস করে আসছে।
এছাড়া মিয়ানমার ছেড়ে আসা শরণার্থীদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় রাখাইনে তাদের নিজ বাড়িতে অথবা আশপাশের ‘নিরাপদ এবং সুরক্ষিত’ স্থানে ফেরাতে উৎসাহ দেবে ইয়াঙ্গুন।
এদিকে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীতে আশ্রয় নেওয়া অধিকাংশ রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, দুঃখ কষ্ট হলেও আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে তাদের কোন কিছুর ঘাতটি নেই। বরঞ্চ দৈনন্দিন পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ত্রাণ সামগ্রী অন্যত্র বিক্রি করছেন তারা।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২ এর একটি বøকের মাঝি মুস্তাকিম উল্লাহ। তার অধীনে রয়েছে ১২০টি রোহিঙ্গা তাঁবু। এসব তাঁবুতে আছে প্রায় ৭০০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু। এর মধ্যে গর্ভবতী মহিলা আছেন ৩৮ জন, শারীরিক প্রতিবন্ধী দুজন এবং রয়েছেন মিয়ানমার সেনা সদস্য দ্বারা ধর্ষিতা দু’জন নারীও। তারা খুব ভাল সময় পার করছেন। ত্রাণের তেমন ঘাটতি নেই। তাই এখন অভাবও এদের তাড়া করছে না।
শিবিরের বেশিরভাগ রোহিঙ্গারাই জানালেন, তাদের ফিরিয়ে নেওয়া চুক্তির আতঙ্ক! গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি সমঝোতা হয়েছে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়া শুরু করবে মিয়ানমার। এর পর থেকেই জানা-অজানা আতঙ্ক ভর করেছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।
রোহিঙ্গারা বলছেন, ‘এখানে কষ্টে আছি। তবু বেঁচে তো আছি। দেশে গেলে বেঁচে থাকতে পারব তো!’ অনেকেই বলেন, ‘নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়, নিজেদের বসতভিটায় স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস ফেলতে চায়’।
আবার অনেকেই বলেন, মিয়ানমার মিলিটারি যদি আবার নির্যাতন শুরু করে, আবার যদি আমাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয় তাহলে কী হবে। যদি মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ আবার সন্ত্রাসী-জঙ্গি দমনের নামে নারী নির্যাতন, ধ্বংসাত্মক তান্ডব চালায় তাহলে আমরা কোথায় যাব?’ নানা অজানা আতঙ্ক মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিরাজ করছে। তারা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে যেমন আতঙ্কে, তেমন তাদের ভিটেমাটি ফেরত পাবেন কিনা, তা নিয়েও আশঙ্কায় রয়েছেন।
এদিকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মনে করে, তাদের ফেরত নেওয়া হলেও আগের সেই বসতভিটা, জমিজমা আর ফেরত দেবে না মিয়ানমার সরকার। তাদের মতে, মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে শরণার্থী হিসেবে। তাদের নিজেদের যেমন বাড়িঘর নেই, নেই জাতিগত পরিচয়ও। শরণার্থী করেই রাখা হয়েছে এই ৫ লাখ রোহিঙ্গাকে। নিজ দেশে শরণার্থী হয়ে থাকতে হবে কিনা, তা নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নতুন-পুরান রোহিঙ্গারা বেশ আতঙ্কিত।
জাতিসংঘ বলছে, গত আগস্টের শেষের দিকে রাখাইনে শুরু হওয়া সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়েছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান থেকে পালিয়ে আসা এ রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। ওয়াশিংটন এবং জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে ১৯৯২ সালে সম্পাদিত যৌথ চুক্তির আলোকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হবে। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপ’ তৈরি করা হবে। এ ছাড়া দ্রæত সময়ের মধ্যে আরেকটি চুক্তি বা সমঝোতা স্বাক্ষরের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার মূল কার্যক্রম শুরু হবে।
সচেতন অনেক রোহিঙ্গারাই জানালেন, রোহিঙ্গারা কখনোই স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি হবে না, যদি তাদের গ্রামে ফেরা এবং জমির মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা না করা হয়। মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত ১৯৯২ সালের একই ধরনের একটি চুক্তির ব্যাপারে তারা বলেন, ওই চুক্তির পর প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইনে ফিরলেও এখনো নাগরিকত্বসহ অন্যান্য সঙ্কটের সমাধান হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ