Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মিয়ানমার থেকে সুদূর জিম্বাবুয়ে চীনের গতিময় বিশ্ব অভিযাত্রা

দি ইকনোমিক টাইমস | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চীন ঐতিহ্যগতভাবে মার্কিন ধরনের হস্তক্ষেপ করে না, কিন্তু অধিকতর জোরালো বিশ্বভূমিকা পালনের উচ্চাকাক্সক্ষা বেইজিংকে মিয়ানমার ও জিম্বাবুয়ের মত দুর্বল দেশগুলোর সাথে তার অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতা গভীরতর করার লক্ষ্যে চীনকে ধাবিত করছে বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন।
১৯৫৪ সালে চীন যখন অনেক দুর্বল এক রাষ্ট্র ছিল তখন তার পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন করা হয়। সে পররাষ্ট্র নীতির নীতি নির্দেশনা ছিল অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।
বেইজিং এ অবস্থানে অঙ্গীকারবদ্ধ থেকেই এখন একেবারেই এক ভিন্ন শক্তি, তার সেনাবাহিনী বিশে^র বৃহত্তম এবং তার অর্থনীতি বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম।
চীনের কূটনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে এ পরিবর্তন সাযুজ্যপূণর্ যা অতিসম্প্রতি দেখা গেছে মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে মুসলিম উদ্বাস্তুদের ঢল নামার ফলে সৃষ্ট সংকট নিরসনের লক্ষ্যে কৌশল হিসেবে বেইজিংয়ের নেয়া অস্বাভাবিক পদক্ষেপে। চীন মধ্যপ্রাচ্যেও তার ভ‚মিকা জোরদার করেছে যার তেলের উপর সে নির্ভরশীল। বারুদাগার এ অঞ্চল থেকে সে দীর্ঘদিন সরে থাকার পর এখন সে সিরিয়া সমস্যা ও ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিরোধ নিয়ে আলোচনার আয়েজন করার প্রস্তাব দিয়েছে। লন্ডনের কিংস কলেজের লাউ চায়না ইনস্টিটিউটের পরিচালক কেরি ব্রাউন বলেন, চীন যেহেতু এখন আর কোনো ক্ষুদ্র শক্তি নয় তাই সে বৈশি^ক বিষয়ে বৃহত্তর ভ‚মিকা গ্রহণের আশা করছে। তিনি বলেন, আপনি একটি হাতিকে ইঁদুর গণ্য করতে পারেন না।
বহির্বিশে^ চীনের উপস্থিতি বাড়ছে তার ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড অবকাঠামো প্রকল্পের সাথে। এক বিশাল রেল ও নৌ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রাচীন সিল্ক রুট পুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে এশিয়া ও ইউরোপকে সংযুক্ত করার এ মহাপ্রকল্পে বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা এক ট্রিলিয়ন ডলার।
চীনের রাজনৈতিক ভাষ্যকার চেন দাওয়িন বলেন, বেইজিংয়ের বৈদেশিক স্বার্থ সম্প্রসারণের সুযোগ যখন বাড়ছে সে সাথে স্বাভাবিক ভাবেই এ সব স্বার্থ কিভাবে নিরাপদ থাকবে সে প্রশ্নও আসছে।
গত মাসে অনুষ্ঠিত চীনা কম্যুনিস্ট পার্টি কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি প্রথম শ্রেণির সেনাবাহিনীসহ চীনকে একটি বিশ^ পরাশক্তিতে পরিণত করার উচ্চাকাক্সক্ষী লক্ষ্য উপস্থাপন করেন।
চেন উল্লেখ করেন যে শি ক্রমবর্ধমানভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরূপ অনেক বেশি সক্রিয় ভ‚মিকা পালনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার শপথ ব্যক্ত করেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের এ ভ‚মিকাকে এক সময় অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ বলে চীন তার নিন্দা করেছে।
চেন বলেন, চীন অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতি থেকে প্রকাশ্যে সরে না এলেও সে ক্রমশ তা বিলোপ করে হস্তক্ষেপ না করা থেকে হস্তক্ষেপের নিরপেক্ষতায় পৌঁছবে। তিনি বলেন, যখন বিদেশে চীনের জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তখন সে সৈন্য মোতায়েনের কারণ হিসেবে তার বিনিয়োগ ও প্রবাসী চীনাদের রক্ষার প্রয়োজনকে ব্যবহার করবে।
বেইজিং তার সামরিক পেশির সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে। গত আগস্টে সে জিবুতিতে তার প্রথম বৈদেশিক সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে এবং বিরোধিত পূর্ব সাগরে (যা দক্ষিণ চীন সাগর নামে আন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত) সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে।
এখন সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই চীন রাজনৈতিক শক্তির সাথে সম্পর্কহীন থাকার ইচ্ছা সত্তে¡ও নিজেকে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে দেখতে পাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট মুগাবের কাছ থেকে ক্ষমতা নেয়ার আগে সেনা প্রধান জেনারেল কনস্টান্টিন চিওয়েনগা সরকারী সফরে চীনে যান। জল্পনা কল্পনা আছে যে তার ক্ষমতা নেয়ার সিদ্ধান্তের পিছনে চীনের কিছু ভ‚মিকা ছিল।
রবার্ট মুগাবের সাথে চীনের দীর্ঘ সম্পর্ক ছিল এবং জিম্বাবুয়েকে রক্ষায় চীনের গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ রয়েছে।
কম্বোডিয়ায় চীন সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস। ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ এখানে চীনের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ১১২০ কোটি ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক থিংকট্যাংক স্টিমসন সেন্টারের দক্ষিণপূর্ব এশিয়া কর্মসূচির পরিচালক ব্রায়ান আইলার বলেন, দারিদ্রগ্রস্ত দেশটির চীনা অর্থের উপর নির্ভরতা থেকে প্রধানমন্ত্রী হুনসেন এমন রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছেন যা গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করেছে।
তিনি বলেন, চীন যতদিন কম্বোডিয়ার উপর অর্থনৈতিক প্রাধান্য বজায় রাখবে কম্বোডিয়া ততদিন বিরোধীদলহীন স্বৈরতান্ত্রিক দেশ হয়ে থাকবে।
রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের উপর সামরিক দমন চালিয়ে মিয়ানমার বিশ^ব্যাপী ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ একে জাতিগত নিধন বলে আখ্যায়িত করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এ ব্যাপারে চীনের কাছ থেকে অব্যাহত সমর্থন পেয়ে আসছে। চীন মিয়ানমারে বন্দর, রাখাইনে গ্যাস ও তেল ক্ষেত্রে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ২৪৫ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত গ্যাস পাইপ লাইন গত এপ্রিলে উদ্বোধন করা হয়।
এ মাসের গোড়ার দিকে চীনের প্রচন্ড বিরোধিতার কারণে রাখাইনে সহিংসতা অবসানের দাবিতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব গ্রহণে ব্যর্থ হয়। এর পরিবর্তে বেইজিং যুদ্ধ বিরতি, উদ্বাস্তু প্রত্যাবাসন ও দারিদ্র দূরীকরণের মাধ্যমে এ সংকট নিরসনের প্রস্তাব দেয়।
কেরি ব্রাউন মিয়ানমারের আরেক নাম ব্যবহার করে বলেন, এখন সব কিছুর সাথেই চীনের একটি সম্পর্ক আছে বলে মনে হয়, সে জিম্বাবুয়ে বা বার্মা বা শ্রীলংকা বা নিউজিল্যান্ডে রাজনৈতিক সমস্যা যাই হোক। এ এক অসাধারণ পরিবর্তন।
তিনি বলেন, হস্তক্ষেপ না করার ধারণা এখন এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমনকি চীন যদি সগর্বে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে তাহলেও সমস্যাগুলো এখন আসবে ও তাকে খুঁজে বের করবে।



 

Show all comments
  • তামিম ২৬ নভেম্বর, ২০১৭, ৬:৩৮ এএম says : 0
    এই জন্যই চীন রোহিঙ্গা ইস্যুতে চুপ ছিলো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ