পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অরক্ষিত রেলক্রসিং এবার কেড়ে নিল ট্রেন চালকের প্রাণ। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বক্তারপুর রেলক্রসিংয়ে বিদ্যুতের খুঁটিবাহী বিকল ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের সহকারী চালক নূর আলম শরীফের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ট্রেনের চালকসহ আরও অন্তত ১৫ জন। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিন মাস আগে গত ২৬ আগষ্ট খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস একই স্থানে একটি মাছের ট্রাককে ধাক্কা দিলে ৩ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারী কালিয়াকৈর উপজেলার গোয়ালবাথানের নয়ানগর এলাকায় রেলক্রসিংয়ে কলকাতাগামী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় প্রাইভেট কারে থাকা পাঁচজন নিহত হয়। কয়েক বছর আগে একই এলাকায় সংগঠিত দুর্ঘটনায় ৪৮ জন প্র্াণ হারায়। ট্রেন চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জয়দেবপুর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পর্যন্ত কমপক্ষে ৬২টি রেলক্রসিং আছে। এর মধ্যে ১২/১৩টিতে গেটকিপার বা রক্ষী আছে। বাকীগুলোতে নেই। যেগুলোতে গেটকিপার আছে সেগুলোর সিগন্যাল লাইট বহুদিন যাবত বিকল। এতে ট্রেন চালককে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। এজন চালক বলেন, এতোটা ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথ অথচ এই স্থানে ট্রেনের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। এর কমে ট্রেন চালালে জবাবদিহি করতে হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এই রেলপথে ট্রেনের গতি আরও কম নির্ধারণ হওয়া উচিত ছিল। আরেক ট্রেন চালক বলেন, ট্রেনের টাইমটেবিল নির্ধারণ করেন প্রকৌশলীরা। তারা খাতা-কলতে হিসাব করে সময় নির্ধারণ করে দেন। অথচ রেলপথের বাঁকে বাঁকে ট্রেনের গতি কমাতে হয়, তার উপর শত শত অরক্ষিত রেলক্রসিংতো আছেই। ওই চালক বলেন, টাইমটেবিল নির্ধারণের সময় একজন সিনিয়র লোকোমাস্টারের পরামর্শ নিলে ক্ষতি কি?
শুধু গাজীপুরের কালিয়াকৈর নয়, সারাদেশে অবৈধ ও অরক্ষিত রেলক্রসিং কিছুদিন পর পর কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ। তারপরেও টনক নড়ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। একটা দুর্ঘটনা ঘটলেই রেলক্রসিং নিয়ে সরব হয়ে ওঠেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। কিছুদিন পরে আবার ভুলে যান। চলতি বছর রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কিছু ট্রেনের গতি বাড়ানো হয়েছে। এতে করে অবৈধ ও অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। আলাপকালে কয়েকজন ট্রেন চালক অরক্ষিত লেবেল ক্রসিং নিয়ে তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, আমরা রেলপথ দেখেই বুঝতে পারি সামনে কোন কোন ধরনের ক্রসিং আছে। অরক্ষিত ক্রসিংগুলোর আগে তাই ট্রেনের গতি কমানো ছাড়া উপায় থাকে না। সাবধানতার পরেও যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা থাকে। অথচ আমাদেরকে ক্রমাগত প্রেসারের মধ্যে রাখা হয় নির্ধারিত গতিতে ট্রেন চালানোর জন্য। বলা হয়, ডিপার্টমেন্ট যে গতি নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই গতিতে চালাবেন। রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে আপনাকে কেউ দায়ী করবে না। লালমনি এক্সপ্রেসের সহকারী চালক (এএলএম) নূর আলম শরীফের মৃত্যুর কথা স্মরণ করে কয়েকজন ট্রেন চালক বলেন, এই দুর্ঘটনায় কে দায়ী সেটা বড় কথা নয়, শরীফের তিন মেয়ে কি আর তাদের বাবাকে ফিরে পাবে?
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারাদেশে রেল নেটওয়ার্কে মোট ২ হাজার ৫৪১টি লেবেল ক্রসিং আছে। যার মধ্যে অনুমোদিত ক্রসিংয়ের সংখ্যা মাত্র ৭৮০টি। বাকি ১ হাজার ৭৬১টিই অনুমোদনহীন। আবার ৭৮০টি অনুমোদিত ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ২৪২টিতে রক্ষী বা গেউটকিপার আছে। ৫৩৮টি অনুমোদিত ক্রসিংয়ে রক্ষী বা গেউটকিপার নেই। অর্থাৎ আনম্যান হিসোবে রয়েছে মোট ২ হাজার ২৯৯টি লেবেল ক্রসিং। এতে করে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ক্ষতি হচ্ছে রেল তথা দেশের সম্পদের। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেনকে মানুষ এখনও নিরাপদ ভ্রমনের জন্য উপযুক্ত মনে করে। অথচ ট্রেনের নিরাপদে চলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ। এই রেলপথকে ঝুঁকিমুক্ত রাখার জন্য লেবেল ক্রসিংগুলোকে সুরক্ষিত করা জরুরী। পরিসংখ্যান বলছে, গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ের প্রতি খুব একটা নজর নেই রেল কর্তৃপক্ষের। বরং প্রতিনিয়ত সারাদেশেই অবৈধ লেবেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা বাড়ছে। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোন স্থানে নতুন রেললাইন নির্মাণ করলে প্রয়োজনে লেবেল ক্রসিং নির্মাণ করে সেখানে রক্ষী বা গেউটকিপার নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু রেলকে না জানিয়ে বা অনুমোদন না নিয়ে এলহিজইডি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও রেল লাইনের উপর লেবেল ক্রসিং নির্মাণ করে থাকে। যা রেলওয়ের আইনে নিষিদ্ধ। এক সময় এই প্রবনতা এতো বেশি ছিল যে, তা রেল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এসব ক্রসিংয়েই এখন প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে। রেলের সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। সূত্র জানায়, অবৈধ ও অরক্ষিত লেবেল ক্রসিং নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ শতাধিক মামলা করেছে। যেগুলো এখন বিচারাধীন আছে। কোনো কোনা মামলা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কারনে মাঝপথে ঝুলে আছে। জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ লেবেল ক্রসিংগুলোতে রেল কর্তৃপক্ষ ‘সতর্কীকরণ’ সাইনবোর্ড টানিয়ে তাদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করে। এগুলো গাড়ির চালক বা জনসাধারণ মানে না। যেখানে গেইটম্যান দিয়েও দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না সেখানে শুধু একটা সাইনবোর্ড মোটেও নিরাপদ নয় জেনেও রেল কর্তৃপক্ষ নীরব। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিন বছরে সারাদেশে লেবেল ক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটেছে মোট ৮৩৭টি। এসব ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে অকার্যকর সিগন্যাল ব্যবস্থা, লেবেল ক্রসিংয়ের অব্যবস্থা এবং চালকের সিগন্যাল অমান্য করাকে দায়ী করা হয়েছে। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, গেইটম্যান লেবেল ক্রসিংয়ের গেইট বন্ধ না করার কারণে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষ বাধে। এসব দুর্ঘটনায় অনেক যাত্রী হতাহত হন। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেন। এসব দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে লেবেলক্রসিংগুলোকে সুরক্ষিত করতেই হবে। বাস্তবতা বিবেচনা করে এগুলো রাখা বা বন্ধ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং তা দ্রæত কার্যকর করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।