পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ জঙ্গীদের দমন-পীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঘরে ফেরার পথ তৈরি করতে সমঝোতা স্মারকে সই করেছে দুই দেশ। গতকাল (বৃহস্পতিবার) নেপিদোতে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চির পক্ষে তার দপ্তরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে এ বিষয়ে একটি সম্মতিপত্রে (অ্যারেঞ্জমেন্ট) সই করেন। এই সমঝোতাকে কূটনীতির ভাষায় ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অফ ডিসপ্লেসড পারসনস ফ্রম রাখাইন স্টেট’ বা রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যূত মানুষদের ফিরিয়ে আনার সমঝোতা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
পরে মাহমুদ আলী বলেন, এটা ‘প্রথম পদক্ষেপ’, দুই দেশকে এখন ‘পরের স্টেপে’ যেতে হবে।
‘এখন কাজটা শুরু করতে হবে। সব ডিটেইল এর (অ্যারেঞ্জমেন্ট) মধ্যে আছে। আমরা ঢাকায় ফিরে বিস্তারিত জানাবো’।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও চরমপন্থী বৌদ্ধ জঙ্গীদের দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা চার লাখের মত রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। আর গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর আরও সোয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
জাতিসংঘ ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে আসছে। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সা¤প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিন সপ্তাহের মধ্যে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠন করে দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু এবং তিন মাসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে সম্মতিপত্রে।
অবশ্য এ বিষয়ে বাংলাদেশের একটি টিভিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যে ফেরত না তো, এখন যেটা হচ্ছে এই কাজটা শুরু করতে হবে। ওখানে বাড়িঘরগুলো তো জ্বালিয়ে দিয়েছে, সমান করে দিয়েছে। এগুলো, বাড়িঘর তো তৈরি করতে হবে’।
অন্যদিকে মিয়ানমারের শ্রম, অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয় দপ্তরের পার্মানেন্ট সেক্রেটারি মিন্ট চিং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ফরম (রোহিঙ্গাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিবন্ধন ফরম) পূরণ করে আমাদের ফেরত পাঠালেই যত দ্রæত সম্ভব আমরা তাদের (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে আনতে চাই’।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনের বাস্তুচ্যূত নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে ওই সম্মতিপত্র তৈরি করা হয়েছে ১৯৯২ সালে দুই দেশের যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতে, যেখানে সনাক্তকরণ ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সাধারণ নীতিমালা ঠিক করা হয়েছিল।
রাখাইনে কয়েকশ’ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস থাকলেও ১৯৮২ সালে আইন করে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই রোহিঙ্গাদের বর্ণনা করে আসছেন ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ ও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে। স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তরের বিবৃতিতেও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সামরিক সরকার ও বাংলাদেশের মধ্যে বেশ কিছুদিন কূটনৈতিক আলোচনার পর ১৯৯২ সালে ওই যৌথ ঘোষণা আসে। সেখানে রোহিঙ্গাদের ‘মিয়ানমার সমাজের সদস্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ওই চুক্তির আওতায় মিয়ানমার সে সময় দুই লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে দেশে ফিরিয়ে নেয়। চুক্তি নির্ধারিত যাচাই প্রক্রিয়ায় আরও ২৪১৫ জন শরণার্থীকে সে সময় মিয়ানমার থেকে আসা বলে চিহ্নিত করা হলেও মিয়ানমার তাদের আর ফিরিয়ে নেয়নি।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মধ্যে এর ধারাবাহিকতায় সু চির দপ্তরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে অক্টোবরের শুরুতে ঢাকায় এলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে দুই দেশ একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নতুন একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব করা হয়, যেখানে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়টিও থাকবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়, যে প্রেক্ষাপটে ১৯৯২ সালের চুক্তির নীতিমালা ও যাচাইয়ের প্রক্রিয়াগুলো ঠিক করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার তুলনায় অনেকটাই আলাদা। সুতরাং ওই চুক্তি অনুসারে এবার রোহিঙ্গাদের পরিচয় শনাক্ত করার প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু মিয়ানমারের সাড়া না পাওয়ায় বিষয়টি আটকে থাকে দেড় মাস।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে একটি বিবৃতিও দেয়।
মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে : নিউইয়র্ক টাইমস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত নৃশংসতা প্রশ্নে আগের অবস্থান পাল্টানোর ফলে রোহিঙ্গা নিধনের সঙ্গে জড়িত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথ সুগম হলো বলে নিউইয়র্ক টাইমসে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে তিনি একথা কথা বলেন।
নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন একে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে শরণার্থী হয়েছে। এটা জাতিগত নিধন। টিলারসন মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর কর্মকান্ডের দ্ব্যর্থহীন সমালোচনা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘টার্গেটেড’ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার প্রচেষ্টা চালাবে। রেক্স টিলারসন বর্তমান সংকট সূত্রপাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর রোহিঙ্গা মিলিশিয়াদের হামলার কথা স্বীকার করে বলেন, কোনো উসকানিই এই লোমহর্ষক নৃশংসতাকে যৌক্তিকতা দিতে পারে না। এ বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার পর রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান জোরদার করে মিয়ানমার। এ অভিযানের পর ৬ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
জাতিসংঘ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞের অভিযোগ এনেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, রোহিঙ্গারা মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের কঠোর সমালোচনার মুখে মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দুই প্রভাবশালী সদস্য চীন ও রাশিয়া। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি ও নিউ ইয়র্ক টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।