Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা ফেরতে সম্মত মিয়ানমার

ঢাকা-নেপিদো চুক্তি আজ

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অবশেষে রাখাইনে হত্যা- নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার সরকার। এ জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আজ (বৃহস্পতিবার) মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি’র সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ চুক্তি সই হবে বলে জানা গেছে। গতকাল দেশটির রাজধানী নেপিদোতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দফতরের মন্ত্রী খিও তিন্ত সোয়ের বৈঠক শেষে এ চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতা চুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
মঙ্গলবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দেয়ার পর এ চুক্তি সইয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
উল্লেখ্য, গত আগস্টে রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহীবিরোধী অভিযান শুরুর জেরে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি থেকে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। পুরনো রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ।
মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সফিউর রহমান বলেন, ‘বুধবার সকালে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে এবং পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, বৃহস্পতিবার (আজ) একটি চুক্তিতে উপনীত হতে পারবো।’
চুক্তিতে কী কী থাকতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি এখন বলা যাবে না।’
উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৭৮ সালে দু’দেশ চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তির অধীনে দুই লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ছয় মাসের মধ্যে ফেরত গিয়েছিল। পরে ১৯৯২ সালে দু’দেশের মধ্যে আরেকটি সমঝোতা হয়, যার অধীনে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দুই লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যায়।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য দু’পক্ষের মধ্যে স¤প্রতি ছয় বার প্রস্তাব-পাল্টা প্রস্তাব চালাচালি হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রথম প্রস্তাব দেওয়া হয় ২৩ সেপ্টেম্বর এবং মিয়ানমার ইউনিয়ন মন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময়ে গত ২ অক্টোবর ফের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেওয়া হয়।
মিয়ানমার গত ২০ অক্টোবর এর জবাব দিলে বাংলাদেশ পুনরায় ২ নভেম্বর পাল্টা প্রস্তাব দেয়। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ৬ নভেম্বর পাল্টা প্রস্তাব দেওয়া হলে বাংলাদেশ তার দু’দিন পর জবাব দেয়।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। আর গত বছরের অক্টোবর থেকে জুলাই পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসে প্রায় ৯০ হাজার রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছিল।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিধন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন মিয়ানমারের নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। এ সপ্তাহেই জাতিসঙ্ঘে রোহিঙ্গা ইস্যুটি এজেন্ডাভুক্ত করতে ১৩৬-১০ ভোটে প্রস্তাব পাস হয়েছে। মিয়ানমারে আসেম সম্মেলনে যোগদানের আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দিয়ে যান, যার ধারাবাহিতায় আজকের চুক্তি হতে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে শোনা গেছে সেনাসদস্যদের বর্বরতার কথা। কীভাবে তাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এই হত্যাকান্ডের জন্য সেনাবাহিনীকেই দায়ী করেছে। তবে বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে সেনা কর্তৃপক্ষ।
গত সোমবার আসেম সম্মেলনে ভাষণে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বলেন, ‘আমরা বলতে পারছি না, কিছু হয়েছে কিনা। তবে সরকারের দায়িত্ব হিসেবে আমরা নিশ্চিত করতে চাই যেন এমন কিছু না হয়।’
দেশে ফিরতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি খুব শিগগিরই বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবো আমরা। এতে করে যারা ফিরে আসতে চায় তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবো’।
এবারও কথা বলার সময় ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি সু চি। মিয়ানমার তাদের বাঙালি বলেই অভিহিত করার চেষ্টা করে। যুগ যুগ ধরেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার। জাতিসংঘও তাদের সবচেয়ে নিপীড়ত জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে। সু চির হাত ধরে সামরিক শাসন থেকে মিয়ানমার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসলেও রোহিঙ্গাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি খুব একটা।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ১৯৯০ সালের চুক্তি অনুসরণ করা হবে বলে জানান সু চি। সেসময়ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলো অনেক রোহিঙ্গা। তবে সেই চুক্তিতেও মিয়ানমারের নাগরিকত্বের কথা বলা হয়নি। যুগ যুগ ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে দেশটির সরকার। ফলে প্রায়ই রোহিঙ্গাদের ওপর চড়াও হতে পেরেছে সেনাবাহিনী।
সু চি বলেন, আমরা তাদের বসবাসের অধিকারের ভিত্তিতে ফিরিয়ে নিতে চাই। এটি অনেক আগেই দুই সরকার মেনে নিয়েছি। আমরা এই নিয়মই অনুসরণ করতে চাই।
এর আগে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু মিয়ানমারের এক কর্মকর্তার অভিযোগ, বিদেশি ত্রাণ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশই প্রক্রিয়া দীর্ঘ করছে। সু চি বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার চুক্তির কতটা কাছাকাছি রয়েছে তা বলা খুব কঠিন। তিনি দাবি করেন, ‘রাখাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্ভব সবকিছু করছে সরকার। তবে সেজন্য সময় প্রয়োজন।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা ফিরে গেলে কতচুকু নিরাপদ থাকবে সে বিষয়ে নিশ্চিত নন বিশ্লেষকরা। রাখাইনে এখনও হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে ‘মডেল ভিলেজ’ নামে নতুন এক শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেবে মিয়ানমার। তাদের নিজেদের জমি বা বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি তারা। সূত্র :



 

Show all comments
  • Md Alamin Kazi ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০৯ এএম says : 0
    যাক অবশেষে
    Total Reply(0) Reply
  • Mosharrof Hossain ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১:১০ এএম says : 0
    কার্যক্রমটি খুব উপযুক্তভাবে সমাধান করা উচিত।তাদের কে সেদেশের নাগরিক হিসাবে পূর্ণ অধিকার পায়।মায়ানমার আন্তর্জাতিক চাপ কমানোর জন্য এই সব অবস্থানে নতি স্বীকার করছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ashraf Hosen ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ৮:৫২ এএম says : 0
    আমরা চাই রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদান করবে এই চুক্তিতে ফিরিয়ে নেওয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • সিফাত ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ৮:৫৬ এএম says : 0
    তাদের পৈত্রিক ভিটায় স্থায়ী বসবাস, শিক্ষা কর্মসংস্থান, ভোটাধিকারসহ সকল নাগরিক সুবিধা দেয়ার শর্তে ফিরিয়ে নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ওয়াসিম ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ৮:৫৭ এএম says : 0
    শুধু ফেরত নিলে হবে না, যারা রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন করেছে তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মাসুদ ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ৮:৫৭ এএম says : 0
    এটা যেন আই ওয়াস না হয়
    Total Reply(0) Reply
  • তামিম ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ৯:০০ এএম says : 0
    চুক্তির ব্যাপারে স্পষ্ট হয়ে তারপরে স্বাক্ষর করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • কাসেম ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ৯:০১ এএম says : 0
    স্বাক্ষর করা আগে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মুখগুলোর কথা একটু ভাববেন।
    Total Reply(0) Reply
  • ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১:০৪ পিএম says : 0
    ।তাদের যেন আবার মার পিট করা না হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Suprakash Maitra ২৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১:২৯ পিএম says : 0
    Their lost right should be return.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ