পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের পক্ষ নেয়ায় চাপের মুখে পড়ে গেছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি যে চীন; ঢাকা সফররত সেই চীনের মন্ত্রীও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আলোচনায় বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। গতকালও জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেখতে ক্যাম্পে যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ও প্রভাবশালী তিন দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী। তারা কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ঘুরেন এবং শরণার্থীদের দুর্দশার চিত্র দেখেন। তারা শরণার্থীদের সঙ্গে কথাও বলেন। সরেজমিন শরণার্থী ক্যাম্পগুলো দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। বিদেশী মন্ত্রীরা বলেন, মানুষের এমন দূর্বিসহ জীবন চিত্র অতীতে দেখেননি। তারা জানান রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে আসিয়ান সামিটে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।
এদিকে ঢাকা সফরতর আমেরিকার সিনেটর জেফ ম্যার্কলি’র নেতৃত্বে সিনেটর দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাতকালে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা যুদ্ধাপরাধের শামিল এবং মানবাধিকারের মৌলিক লঙ্ঘন।
আগের দিন শনিবার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপে সহযোগিতা করতে আগ্রহর কথা জানিয়েছে ঢাকা সফররত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেদেরিকো মঘেরিনি, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্টার ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা। বেলা ১২টায় বিশেষ হেলিকপ্টারে তারা উখিয়ার ইনানীতে সেনাবাহিনীর রেস্ট হাউজ হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। সেখান থেকে কুতুপালং যান। বিদেশী প্রতিনিধিরা শরণার্থী ক্যাম্পে নির্যাতনের শিকার কিছু রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এছাড়া ক্যাম্পে আইওএম-এর প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র, জরুরি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। শরণার্থীদের ক্যাম্পের চিত্র দেখে বিদেশী তিনি মন্ত্রী জানান যে, এত অল্প জায়গায় এত বিপুল সংখ্যক মানুষের থাকা দেখে তারা বিস্মিত। প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা তাদের বক্তব্যেই শুনেছেন রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে আসিয়ান সামিটে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। সীমিত সম্পদের দেশ হয়েও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের স্থান দেওয়ায় প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে সাধুবাদ জানান। এর আগে গত শনিবার বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন ১০ সদস্যের একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল।
জেফ ম্যার্কলি’র নেতৃত্বে সফররত মার্কিন সিনেটের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। মার্কিন সিনেটররা বলেছেন, মিয়ানমার যা করছে তা চরম মানবাধিকার লংঘন। বিশ্বের প্রত্যেক দেশের এই অপরাধ ও জাতিগত নিধনের নিন্দা জানানো উচিত। এই সংকটের সমাধান ও উদ্বাস্তুদের তাদের নিজ দেশে ফেরাতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে আরো সোচ্চার হতে হবে। তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদার সহযোগিতার প্রশংসা করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র উদ্বাস্তুু সমস্যা সমাধানে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। উদ্বাস্তুরা তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি খুবই সন্তুষ্ট। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়ঙ্কর নিপীড়নের বর্ণনা দিয়ে জেফ ম্যার্কলি জানিয়েছেন, তারা কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে নির্যাতিতদের কাছ থেকে সরাসরি নিপীড়নের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেছেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে নির্মম নিপীড়ণের শিকার হয়ে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের ভারতে আশ্রয় নেওয়ার কথা স্মরণ করে মানবিক কারণে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার শিকার নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমার আমাদের নিকট প্রতিবেশী। আমরা চাই তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে।
গণভবনে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, তার দেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে দুদেশের সংলাপে সহায়তা করতে চায়। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অথচ এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, যা বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। এ সংকট নিরসনে আমরা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের অবসানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটিতে বৃহস্পতিবার প্রস্তাব পাস হওয়ার দুদিন পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে আসেন। ওই প্রস্তাবে অবিলম্বে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানের ইতি টানতে এবং রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে নাগরিকত্ব দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে ভোটাভুটিতে ১৩৫টি দেশ এর পক্ষে ভোট দেয়; বিপক্ষে যে ১০টি দেশ ভোট দিয়েছিল তার মধ্যে চীনও ছিল। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকেই মিয়ানমারে যাবেন। আগামী সোম ও মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে এশিয়া ও ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে তিনি যোগ দেবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।