ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মিয়ানমারের নির্দয় সামরিক বাহিনী এবং উগ্রবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মিলে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে দেশটির প্রাচীন বাসিন্দা রোহিঙ্গা মুসলমানদের জাতিগতভাবে বিনাশ করার জন্য গণহত্যায় লিপ্ত রয়েছে। তারা নির্বিচারে এই জনগোষ্ঠীর নারী পুরুষ শিশু যুবকদের হত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও বাস্তুভিটা থেকে অস্ত্রের মুখে উচ্ছেদ করার মত নৃশংস খেলায় উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। গত দুই মাসে তারা অগণন রোহিঙ্গাকে খুন-গুম করেছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করেছে, দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে। অথচ, এইসব মানুষ বারো চৌদ্দশত বছর ধরে আরাকানে বসবাস করছে, তারা আরাকানকে উন্নত সভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। তারাই আজ অধিকারহীন, রাষ্ট্রহীন দশায় নিক্ষিপ্ত। সাত পুরুষের ভিটেবাড়ি, জমিজমা, ব্যবসা-বাণিজ্য ধন-সম্পদ সব ফেলে তারা প্রাণ ও সম্ভ্রম বাঁচাতে বাংলাদেশে ছুটে আসছে। বিপদসংকুল দীর্ঘ বনপাহাড়ি পথ অতিক্রম করে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছবার আগেই অনেকে হারিয়ে যাচ্ছে, কেউবা ক্ষুধা তৃষ্ণায় মারা পড়ছে, কেউ বা পিছু ধাওয়াকারী বর্বর বর্মী সেনাদের গুলিতে লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে। জানা গেছে, বহু শিশু পথেই জন্মগ্রহণ করেছে, কতক শিশু পথচলার ধকল, ক্ষুধা ক্লান্তিতে পথেই মারা পড়েছে। তারপরও বনজঙ্গলে লুকিয়ে থেকে, নদীখাল পাড়ি দিয়ে যে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবশেষে এসে পৌঁছেছে, তাদের মধ্যে কমবেশি শতকরা পঞ্চাশ জনই শিশু। এদের মধ্যে প্রায় ত্রিশ হাজার শিশুকে চিহ্নিত করা হয়েছে- যাদের কেউ নেই, ইয়াতিম। পরিবারের অন্য সবাই বর্মীদের হাতে মারা পড়েছেÑ আতঙ্কিত জন¯্রােতের সাথে এরা চলে এসেছে। এখন এই শিশুরা নিঃসঙ্গ, অসহায়। কোন আশ্রয় নেই, আহারের সংস্থান নেই, ¯েœহাদরের কেউ নেই। কোথায় দাঁড়াবে তা তাদের জানা নেই। এদের পৃথিবীর রঙ বদলে গেছে, লÐভÐ হয়ে গেছে চঞ্চল শৈশব। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে থাকা শিশুদের অবস্থাও অত্যন্ত করুণ। অর্ধাহারে, অপুষ্টিতে ও নিদ্রা-বিশ্রামের উপযুক্ত স্থানাভাবে কিংবা রোগাক্রান্ত হয়ে এরাও অকালে ঝড়ে পড়ার অপেক্ষায়। উন্মুক্ত আকাশের নিচে, কিংবা এক টুকরো পলিথিনের ঝুপড়ির মধ্যে শিশুদের দুর্দশা দেখলে কোন হৃদয়বান মানুষ অশ্রæ সংবরণ করতে পারবেন না। নানা তরফ থেকে এই উদ্বাস্তু রোহিঙ্গারা মানবিক সহায়তা/রিলিফ পাচ্ছে বটে। কিন্তু সুস্থ থাকার জন্য, বিশেষভাবে শিশুদের নিরাপদে থাকার মতো কোনো বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যায়নি। তার উপর রোদবৃষ্টি, নি¤œচাপ, ঝড়-বাতাস, শীত প্রভৃতি তাদের ঘিরে ধরছে। এর মধ্যেই কিছু শিশু জন্মগ্রহণ করছে- আবার কেউ কেউ ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের টিলার ঢালে, খোলা ময়দানে থাকা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুরা এক মর্মন্তুদ দশায় দিনাতিপাত করছে। এই দুদর্শার প্রধান ভিকটিম হচ্ছে শিশুরা। তাদের জীবন বিপন্ন, ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন। এদের মধ্যে সাড়ে চার লক্ষাধিক স্কুলে যাবার বয়সী। নিজ দেশেও এরা ছিল চরম সুবিধাবঞ্চিত, স্কুলে যাবার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এখানেও আরেক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পতিত। উদ্বাস্তু এই রোহিঙ্গারা আমাদের মতই মানুষ, তাদের সন্তানেরা আমাদের সন্তানদের মতই নাজুক, নিষ্পাপ। কিন্তু মিয়ানমারের কষাই (ইঁঃপযবৎ ড়ভ ইঁৎসধ) জেনারেল লিং রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের প্রধান পুরোহিত। আর শান্তির ধ্বজাধারী ভÐ বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মুসলমানদের রক্ত দু’হাতে মেখে উল্লাসনৃত্য করছে। আর এহেন ঠাÐা মাথায় গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলকরণের (ঊঃযহরপ পষবধহংরহম) নিষ্ঠুর কাÐ দেখে হৃদয়হীনা নেত্রী সুচি নির্বিকার। তার নোবেল পুরষ্কার বিশ্ববাসী আগেই কেড়ে নিয়েছে। রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে হাজারো কষ্টে থাকা শিশুদের কান্না, অসুস্থ কচি-কাঁচা মুমূর্ষু বাচ্চাদের মৃত্যু যন্ত্রণা, স্বামী-সন্তান হারা নারীদের বিলাপ, ইয়াতিমদের আজাহারী কোন কিছুই যেন গৌতমবুদ্ধের দুর্জন অনুসারীদের কর্ণকুহরে পৌঁছায় না। এরা মহামতি বুদ্ধকে অপমান করছেন বৈকি।
উদ্বাস্তু এই রোহিঙ্গারা কবে বাড়ি ফিরবে তা তারা জানে না, তারা নাগরিকত্বের স্বীকৃতি তথা রাষ্ট্রীয় পরিচয় ফিরে পাবে কিনা তাও কেউ বলতে পারে না। কিন্তু তাদের ন্যূনতম মানবিক চাহিদা মেটানোর দায় বিশ্বসম্প্রদায়ের উপর বর্তায়, তাদের কোমল-কচি শিশুদের রক্ষার দায়িত্বও পৃথিবীর সভ্য মানুষদেরই নিতে হবে। একা বাংলাদেশের পক্ষে এতো আদম সন্তানকে সামাল দেয়া অসম্ভব। সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের সিইও ম্যাডাম হ্যালে স্মিথ বলেছেন, রোহিঙ্গা শিশুদের বিষয়টি এখন একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। একে আন্তর্জাতিকভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। ঠিকই এদের জন্য বিদেশ থেকে সহায়তা আসছে, তাই বলে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না।
রোহিঙ্গা শিশুদের প্রতি আমাদের সকলের সদয় হাত বাড়াতে হবে। অপুষ্টি ও রোগব্যাধির শিকার ঐ শিশুদের বাঁচাতে হবে। দেশে-বিদেশে যে যেখানেই থাকুন, ‘মানুষ মানুষের জন্য’ এই চেতনায় যার যতটুকু সাধ্য আছে সেই মতো রোহিঙ্গা শিশুদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসুন। আর সেই সাথে দিকে দিকে আওয়াজ তুলুন মিয়ানমারের কষাই সেনাপ্রধান জেনারেল মিং অঙ লাই, নষ্ট ভিক্ষু, অং সান, বিরথা ও তাদের সহযোগীদের গণহত্যার দায়ে বিচারের সম্মুখীন করা হোক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।