রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
রেবা রহমান, যশোর থেকে
আগামীকাল ২২ মার্চ যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। সংঘাত-সংঘর্ষ হুমকি ধামকির মধ্য দিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চলেছে। নির্বাচনী সহিংসতায় আওয়ামী লীগের একজন কর্মী নিহত হয়েছেন। বেশীরভাগ স্থানে আওয়ামী লীগ ও এর বিদ্রোহী প্রার্থীও কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ১৬ ইউনিয়নে আ’লীগের ১৬ জন, বিএনপির ১৬ জন, আ’লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ৫৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চেয়ারম্যান পদে। আ’লীগ-বিএনপি’র দলীয় প্রার্থীরা স্বস্তিতে নেই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে। যে কারণে ভোটের হিসাব পাল্টে যাওয়া ছাড়াও সংঘাত সহিংসতা অনিবার্য বলে মনে করছেন সাধারণ জনগণ। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে আতংকিত রয়েছেন সাধারণ ভোটাররা। যশোরের মণিরামপুর এ উপজেলা ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে। মামলা থাকার কারণে একটি ইউনিয়ন হরিহরনগরে ২২ মার্চ নির্বাচন হচ্ছে না। যার কারণে ১৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত ১১ সালের নির্বাচনে ১৭টি ইউনিয়নে ৩টি আ’লীগ ২টি জামায়াত ইসলাম, ১২টি বিএনপি দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। এদিকে অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টরা কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে। আ’লীগের দলীয় প্রার্থী এবং তাদের কর্মী- সমার্থকরা বিরোধী দলীয় প্রার্থী এবং তাদের কর্মীদের উপর হামলা মারপিট করেছে বলে অসংখ্য অভিযোগ করেছেন বিরোধী ও বিদ্রোহী প্রার্থীসহ দলের উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। মামলা ও পাল্টা মামলার দায়েরের ঘটনাও ঘটেছে। মণিরামপুর উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে মোট ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৮১। কেন্দ্র ১৫০টি। খানপুর ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের গাজী মোহাম্মাদ আলী এবং বিএনপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান এড. মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের বর্তমান চেয়ারম্যান সরদার বাহাদুর আলী এবারও দলীয় প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন। ৭ম বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান এই বাহাদুর আলীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঠে নেমেছেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী আলতাফ হোসেন এবং স্বতন্ত্র হিসেবে মাও: আব্দুল আজিজ। এ তিন প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি দলীয় প্রার্থী আলতাফ হোসেন রয়েছেন কারাগারে। কুলটিয় ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের শেখর চন্দ্র রায়, বিএনপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান লক্ষণ চন্দ্র ধর এবং আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান পরিতোষ বিশ্বাস। বর্তমানে বিএনপি ও আ’লীগের মধ্যে বিরোধ থাকায় আ’লীগের দু’ প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন ইউনিয়নবাসী। নেহালপুর ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের ফারুক হোসেন, বিএনপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান নাজমুস শাহাদাত, প্রাক্তন চেয়ারম্যান জাপা নেতা এড. কামরুজ্জামান, স্বতন্ত্র আবু তালহা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মনোহরপুর ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের মশিউর রহমান, বিএনপি’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান আক্তার ফারুক মিন্টু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঝাঁপা ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের শামছুল হক মন্টু, বিএনপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন ডা. শরিফুল ইসলাম। মশ্মিনগর ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের আবুল হোসেন, বিএনপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান এড. আব্দুল গফুর, বিএনপি’র বিদ্রোহী ইয়ামিন হোসেন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন মাও: সেলিম জাহাঙ্গীর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খানের নিজ গ্রাম এই ইউনিয়নটি। মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম জাহাঙ্গীকে গ্রেফতার করে পুলিশ জেল হাজতে পাঠিয়েছে। বিএনপি দলীয় প্রার্থী এড. আব্দুল গফুর যশোর বারের একাধিক বার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এবারও তিনি লড়ছেন। চালুয়াহাটি ইউনিয়ন ঃ আওয়ামী কৃষকলীগ নেতা আবুল ইসলাম, আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল হামিদ সরদার, বিএনপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান বজলুর রহমান এবং ইশার আনছার আলী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন। এই ইউনিয়নে আ’লীগের দু প্রার্থী থাকায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান বজলুর রহমান। ইউনিয়নবাসী মনে করছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আবারও বজলুর রহমান নির্বাচিত হবেন। শ্যামকুড় ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের মনিরুজ্জামান মনির, বিএনপি’র থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান এস.এম মশিউর রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ডা. মনিরুজ্জামান চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। এই ইউনিয়নে আ’লীগ-বিএনপি’র মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় বিএনপি’র দু’ মেম্বর প্রার্থীর বাড়ী ঘর ভাংচুর হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মামলা হয়। বর্তমানে এলাকা অশান্ত থাকায় বিরোধীদলীয় কোন প্রার্থীকে নির্বাচনী কাযক্রম করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে বিএনপি দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। রোহিতা ইউনিয়ন ঃ এই ইউনিয়নে আ’লীগের আনছার আলী, বিএনপি’র মিজানুর রহমান, ইশার আক্তার হোসেন, স্বতন্ত্র মাও: দেলোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। এ প্রার্থীগণের মধ্যে আ’লীগের দলীয় প্রার্থী আনছার আলী এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী মিজানুর রহমান বর্তমানেও চেয়ারম্যান রয়েছেন। স্থানীয় জনগণ বলছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এ দুজনের মধ্যেই। কাশিমনগর ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের স্বপন কুমার দাস, বিএনপি’র জিএম আহাদ আলী, স্বতন্ত্র এড. তাজউদ্দীন আহম্মেদ প্রার্থী হয়েছেন চেয়ারম্যান পদে। বর্তমানে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রয়েছেন জামায়াত দলীয় মিজানুর রহমান। বিভিন্ন হামলা মামলার কারণে এবার তিনি নির্বাচন থেকে সরে রয়েছেন। গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বিএনপি দলীয় প্রার্থী জিএম আহাদ আলী। বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এই ইউনিয়ন টি। এই ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান তৌহিদুর রহমান। বর্তমানে তিনি ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন। দলের নীতিনির্ধারকরা তাকে চেয়ারম্যান পদে মনোনীত না করায় ইউনিয়ন আ’লীগের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ভোজগাতী ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপি’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান কওসার আলী হয়েছেন দু দলের দলীয় প্রার্থী। বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত দলীয় হুমায়ুন কবির মুক্তাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়াও ইশার আসাদুল ইসলাম এবং রেজাউল ইসলাম নামের আরও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনী মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক এবং কওসার আলীর মধ্যে। বর্তমান চেয়ারম্যান জামায়াত ইসলামের নেতা হুমায়ুন কবির মুক্তা অসংখ্য মামলার বোঝা নিয়ে আত্মগোপনেই চলছেন। যার কারণে স্থানীয় জনগণ নির্বাচনী সঠিক পরিসংখ্যানটা এ মুহূর্তে মিলাতে পারছেন না। ঢাকুরিয়া ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের দুর্গাপদ সিংহ, বিএনপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম মিজানুর রহমান, স্বতন্ত্র মাও: দেলোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের আলোচিত ইউনিয়নটি আ’লীগের খাঁন টিপু সুলতানের এমপি আমলে এই ইউনিয়নে আ’লী ও বিএনপি’র মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় বিএনপি’র এক কর্মী নিহতসহ অসংখ্য মানুষ পরিবার বাড়ী ছাড়া হয়। মামলার আসামী হয় প্রায় ৫ হাজার ব্যক্তি। এসব ঘটনার কারণে যশোরের প্রশাসনের সর্বচ্চো নজর রয়েছে এই ইউনিয়নটির প্রতি। বর্তমান চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রায় দেড় ডজন মামলার আসামী বর্তমানে। ওই সংঘের্ষর ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব ঘটে। যে কারণে জামায়াত নেতা মাও: দেলোয়ার প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। হরিদাসকাটি ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের বিপদ ভঞ্জন পাড়ে, আ’লীগের বিদ্রোহী স্বপন কুমার দাস এবং বিএনপি’র নবীরুজ্জামান প্রার্থী হয়েছেন। হিন্দু অধ্যুষিত ইউনিয়নটি বরাবরেই আ’লীগ দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হন এখান থেকে। এবারের নির্বাচনে আ’লীগ বিপদ ভঞ্জন পাড়েকে দলীয় প্রার্থী করায় ওই ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ তাকে মেনে নিতে পারছেন না যার ফলে জন সমর্থনের দিকে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্বপন কুমার দাস এগিয়ে রয়েছেন। তবে সাধারণ ভোটাররা ভাবছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি-না তা নিয়ে। মণিরামপুর ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের ইয়াকুব আলী সরদার, বিএনপি’র বর্তমান চেয়ারম্যান নিস্তার ফারুক এবং জামায়াত ইসলামের নেতা আহসান হাবীব লিটন প্রার্থী হয়েছেন। বরাবরে এ ইউনিয়টির প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন বিএনপি। বর্তমানে বিএনপি’র মধ্যে বিরোধ থাকায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আ’লীগ দলীয় প্রার্থী ইয়াকুব আলী সরদার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আহসান হাবীব লিটন মূল রড়াইয়ে থাকছেন বলে ইউনিয়ন বাসী মনে করছেন। খেদাপাড়া ইউনিয়ন ঃ আ’লীগের আব্দুল আলীম জিন্নাহ, বিএনপি’র শামছুজ্জামান শান্ত এবং আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান জিএম ওমর ফারুকের অকাল মৃত্যুতে ইউনিয়নটি হাতছাড়া হয় বিএনপি’র। তিন বার নির্বাচিত এই ওমর ফারুক গত বছর ষ্ট্রোকে মারা যান। ওই বছর ২২ মে উপনির্বাচনে বর্তমান আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হন। বর্তমানেও তিনি চেয়ারম্যান। এবারের নির্বাচনে মুজিবরকে দলীয় প্রার্থী না করে দলীয় প্রার্থী করেন আব্দুল আলীম জিন্নাহকে। ইউনিয়ন আ’লীগের দলীয় প্রার্থী আব্দুল আলীম জিন্নাহ’র লোকজনের হাতে মারপিটের স্বীকার হন ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আব্দুল মোমিন। এছাড়া বুধবার রাতে ইউনিয়নে দু প্রার্থীর লোকজনের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় আব্দুল আলীম জিন্নাহ বাদী হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী মুজিবুর রহমানের লোকজন কে আসামী করে মামলা করে। এসব ঘটনার ফলে ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ আতংকিত হয়ে পড়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।