Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ : দুদককে মনে রাখতে হবে অকারণে হয়রানি নয়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৭, ৯:২৯ পিএম

ভবিষ্যতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অবশ্যই বিশেষ নজর রাখতে হবে। যাতে অকারণে তাদের মর্যাদাহানি না ঘটে বা হয়রানির শিকার না হন। বিচারপতির সঙ্গে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও গৌরব জড়িত। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে সাতবছর ধরে অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যর্থতা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। দুদককে দেয়া সুপ্রিম কোর্টের চিঠি কেন বেআইনী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে রায়ে এসব পর্যবেক্ষণ দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, বিচারপতি জয়নুলকে নিয়ে চিঠি দাপ্তরিক, আদালতের মতামত নয়।
মঙ্গলবার সাতটি পর্যবেক্ষণ দিয়ে রুলটি নিষ্পত্তি করে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত আরো বলেন, বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান বন্ধে দুদককে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া চিঠি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি খর্ব করেছে। ওই চিঠি জনগণের মধ্যে বার্তা দিয়েছে যে ফৌজদারি অপরাধে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিচারের ক্ষেত্রে দায়মুক্ত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রেসিডেন্ট ছাড়া আর কেউ দায়মুক্তি পেতে পারে না। তবে প্রেসিডেন্ট শুধুমাত্র তার পদে বহাল থাকাবস্থায় এ দায়মুক্তি পাবেন। আপিল বিভাগের প্রশাসনিক ক্ষমতায় দেয়া আলোচিত চিঠি দেয়া যথাযথ হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে জারি করা রুলের বিচার চলতে পারে। এ চিঠি দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছু অপ্রাসঙ্গিক ও নিজ এখতিয়ার বহির্ভূত যুক্তি গ্রহণ করেছে, যা কর্তৃপক্ষকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এ চিঠি আপিল বিভাগ তার প্রশাসনিক ক্ষমতায় দিয়েছে। এটা কোনোভাবেই সুপ্রিম কোর্টের মতামত হিসেবে বলার সুযোগ নেই। গত ৩১ অক্টোবর এ রুলের ওপর শুনানি শেষে যেকোনোদিন রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল।
রায়ের পর দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ে প্রমাণিত হয়েছে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বন্ধে সুপ্রিম কোর্টে দেয়া চিঠি অবৈধ। ওই চিঠির আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। ফলে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাতে কোনো বাধা নেই।
জয়নুল আবেদীনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তিনি বলেন, একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের বিরুদ্ধে সাত বছরেও অনুসন্ধান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে না পারায় দুদকের সমালোচনা করেছেন আদালত। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, এ রায়ের ফলে অনেক বিতর্কের অবসান হবে। এ রায় অত্যন্ত ভাল রায়। আদালত রায়ে বলেন, এটা বিবেচনার বিষয় যে ইতোমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তথ্য দুদককে সরবরাহ করেছে। দুদক অনুসন্ধান প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় নিন্মোক্ত পর্যবেক্ষণ দিয়ে রুলটি নিষ্পত্তি করা হলো।
বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। একারণে তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে গত ২ মার্চ সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দেয় দুদক। এর জবাবে তদন্ত না করতে গত ২৮ মার্চ দুদককে পাল্টা চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এ চিঠি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়। এনিয়ে কয়েকদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সরকার সমর্থক আইনজীবীরাও প্রতিক্রিয়া জানানোর পর গত ৩১ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিষয়ে মোট ২৩ ফর্দ নথি দুদকের কাছে সরবরাহ করে। এরপর থেকে দুদক জোরেশোরেই অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।এ অবস্থায় দুদককে দেয়া গত ২৮ মার্চের চিঠি গত ৯ অক্টোবর আদালতের নজরে আনেন বদিউজ্জামান তরফদার। এদিন শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইকোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ