Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

গণসংযোগহীন সাংবাদিকতা গণসংযোগহীন রাজনীতির মতোই ভয়ঙ্কর -ওবায়দুল কাদের

গ্রামের মানুষ সাংবাদিক নাম শুনলেই বলে উঠে সাংঘাতিক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গণমাধ্যমকে সঠিকভাবে সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ১৮ নভেম্বর আওয়ামী লীগ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশ করবে। এই সমাবেশকে বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি হিসেবে না দেখতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে এটাকে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ বানাবেন না। প্লিজ আমি আপনাদের কাছে মাফ চাচ্ছি। আমরা কোনো পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করতে চাচ্ছি না। আমাদের সমাবেশ নিয়ে রাজনীতি করতে চাচ্ছি না। সমাবেশ নিয়ে আমরা কোন রাজনীতি করছি না, আমাদের সমাবেশ পাল্টা-পাল্টি না। তিনি বলেন, গণসংযোগহীন সাংবাদিকতা গণসংযোগহীন রাজনীতির মতই ভয়ঙ্কর। এমন কতজন সাংবাদিক আছেন যারা যা চোখে দেখেন তা লিখতে পারেন? একই সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা যায়। একজনের নিউজ সবাই নিয়ে ছাপিয়ে দেন।
গতকাল সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সাংবাদিকদের আনন্দ সম্মিলনী’তে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) উদ্দ্যোগে ইউনেস্কো কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ প্রামান্য শাখায় স্বীকৃতি পাওয়ায় সাংবাদিকদের আনন্দ সম্মীলনী আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসন সমাবেশ করেছেন। এখন আমরা ১৮ তারিখে সমাবেশ করবো। এখানে দু-একদিনের মধ্যে আমি দেখবো অনেকে লিখছেন, আমরা পাল্টা সমাবেশ দিয়েছি। প্লিজ আমরা পাল্টা-পাল্টি কোন সমাবেশে যাচ্ছি না। তিনি বলেন, যা ছিল বাঙ্গালীর সম্পদ সেটা আজকে বিশ্বের সম্পদ; যা ছিল বাঙ্গালীর প্রামান্য দলিল তা আজকে বিশ্বের হেরিটেজ, এটা নিয়ে আমরা কোন রাজনীতি, কোন ডিভাইসিং পলিটিক্স করছি না।
কাদের বলেন, এখানে যারা আছেন এদের মধ্যে অনেকেই এটাকে পাল্টা-পাল্টি সমাবেশ হিসেবে দেখছেন, এটা দেখবেন না। কারণ বিএনপি সমাবেশের তারিখ ঘোষনার আগেই আমরা বঙ্গবন্ধুর সম্মানে এই সমাবেশের ঘোষনা দিয়েছি।
বিএনপি নেতাদের মুখে গণতন্ত্র রাজনীতির কথা ভুতের মুখে রাম নাম উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই দেশে যারা নষ্ট রাজনীতির সুচনা করেছে, এই দেশে যারা সা¤প্রদায়িক শক্তির শ্রেষ্ঠ উৎস, এই দেশে যারা জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটিয়েছে; তারা যদি বলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন করবে, এটা ভুতের মূখে রাম নাম ছাড়া আর কিছু না।
কাদের বলেন, রাজনীতির গুণগত মান পরিবর্তন করবে তারা? যারা আগুনে শতশত মানুষ পুড়িয়েছে, প্রতিহিংসা বিদ্ধেষে যারা মানুুষকে আগুনে পুড়িয়েছে, তারা বলে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন বিলবোর্ডে নিজের আত্মপ্রচারের জন্য নিজের ছবি বড় করে সাটান রাজনীতিবিদরা। রাজনীতি থেকে আজ সৌজন্যবোধ হারিয়ে গেছে। শুধু বিলবোর্ডেই দেখা মেলে ‘সৌজন্যে’ ওমুক।
সাংবাদিকদের এই সমাবেশে সাংবাদিকদের সমালোচনা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, সাংবাদিকরা এখন এই পেশাটাকে যে কি অবস্থায় নিয়ে গেছে। আমার এলাকার আশেপাশের এলাকার এক সাংবাদিক আছে, আমি জানি না সে এক লাইন শুদ্ধ ভাষায় বাংলা লিখতে পারে কি না। সে একটি কাগজের সাংবাদিক। আজকে এই উৎকর্ষ পেশাটাকে যে কি অবস্থায় আপনারা নিয়ে গেছেন, ব্যাঙের ছাতার মত মিডিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাঙের ছাতার মতই আজ বিভিন্ন জায়গা থেকে কাগজ বেরুচ্ছে। এসব পত্রিকা ছাপা হয় হাতে গোনা কয়েক কপি করে মাত্র। সাংবাদিকতায় আজ দুর্ভিক্ষ লেগে গেছে। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে কয়েক সাংবাদিককে দেখিয়ে তিনি বলেন, তাদের সব অনুষ্ঠানে দেখি। কিন্তু তারা কোথায় সাংবাদিকতা করে জানি না।
তিনি বলেন, কী কষ্ট করে সাংবাদিকরা জীবিকা নির্বাহ করেন তা আমি জানি। আমি নিজেও সাংবাদিক ছিলাম। যারা ভালো সাংবাদিক, প্রফেশনাল কাজ করে, পড়াশোনা করে সাংবাদিকতা করে তাদের নিয়ে আসুন।
সরকারের তথ্যমন্ত্রীকে সাংবাদিকদের পাশে দাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন সাংবাদিকরা যা পায় তাতে চলে না। সাংবাদিকরা বাসায় বসে পড়াশোনা করার জন্য তো একটা মুড লাগে; তাদের ইন্সপাইরেশন তো দরকার। আমার পেটে নেই ভাত, সংসারে ছেলে-মেয়েদের খরচ দিতে পারছি না, বাড়ি ভাড়া দিতে পারছি না। এ রকম করে কিভাবে সে ভালো সাংবাদিকতা করবে?
সড়ক পরিবহণমন্ত্রী বলেন, সে অবস্থায় আমি আগেও বলেছি, তথ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়ে সাংবাদিকদের বিষয়গুলো দেখবেন। সাংবাদিকদের সুবিধাগুলো দেখবেন। একটা মানবিক বিষয় আছে, এই মানবিক দৃষ্টিকোনটাও উপেক্ষিত নয়। কেন তারা সংঘাতের দিকে যাবে। সাংবাদিকরা তো ভিন্ন কোন গ্রহের বাসিন্দা না। তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। আমি বলবো যুক্তিসংগত সমাধান করে দিন।
বেশিরভাগ সাংবাদিকরা এখন কপি পেস্ট করছে বলে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে যা দেখবো তা লিখবো এটা কি আছে? একজন রিপোর্ট লিখেন অন্যদের কাছে শুনে শুনে। এখন দেখা যাচ্ছে একজন গেছেন অন্য কেউ যাননি। তার কাছ থেকে নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেছে। পরের দিন দেখা যায় এই রিপোর্ট সব পত্রিকায়। যখন তারা নিজে যান না, তখন অন্যের কাছ থেকে নেয়া রিপোর্টটি নিয়ে রাজনৈতিকভাবে রিপোর্ট তৈরি করেন। এই কাজটাই এখন হচ্ছে।
এ সময় সাংবাদিক নেতাদের মফস্বল সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে তাদের দেখার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, আমি অনুরোধ করবো প্লিজ মফস্বলে যান। ওখানে কোন সংবাদিকতা নেই। কিছু সাংবাদিক আছে মফস্বলে তারা শুধু কার্ড গলায় ঝুলিয়ে, প্যাড নিয়ে চাঁদাবাজি করে। তারা থানার ওসি, ভূমি অফিস, টিএনও অফিসে বসে থাকে। অথচ তারা একলাইন শুদ্ধভাবে লিখতে জানে না। গ্রামের মানুষ সাংবাদিক নাম শুনলেই বলে উঠে সাংঘাতিক।
‘সাংবাদিকের আনন্দ সম্মিলনী’তে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ছয় দফা মুক্তির সনদ হলে ৭ মার্চের ভাষন হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষণা। আমরা আশা করছি ৭ মার্চের মত ২৫ মার্চেও গণহত্যার দিবসটিও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে।
সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, বঙ্গবন্ধু এক বক্তব্যেই পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধেও জন্য উদ্বেলিত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
বিএসএমএমইউ‘র ভিসি কামরুল আহসান খান বলেন, সারাবিশ্বেও নানা বিখ্যাত বক্তৃতার মধ্যে এটি একমাত্র বক্তৃতা যেটির মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুধু একটি ভাষন নয়। এটি একটি রাজনৈতিক দর্শন। তার এক ভাষনেই পুরো জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে দেশ স্বাধীন করেছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ফলে সারা বিশ্বের মানুষ এখন এ বক্তব্য সম্পর্কে জানবে।
সুচনা বক্তব্যে ডিইউজে সভাপতি শাবান মাহমুদ বলেন, এ জাতি যতদিন বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুনবে ততদিন ভুল পথে পা বাড়াবে না। এ বক্তব্য এমন একটি রাজনৈতিক দর্শন যা অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে উদ্বেলিত করে, লালন করে।
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী।



 

Show all comments
  • SM Arif ১৪ নভেম্বর, ২০১৭, ৯:১০ এএম says : 0
    সাংবাদিক যেমন বাইরের দেশের মানুষ না তেমনি বিরোধি দলের লোক বাইরের দেশের না। মাফ করবেন মন্ত্রি সাহেব, আপনি বা আপনারা যেভাবেই বলুন যে আমাদের সমাবেশ পাল্টাপাল্টি না, এই কথা জাতী বিশ্বাস করবেনা। কোন ব্যাপার না গনতান্ত্রিক দেশে যে কেউ সমাবেশ করতে পারে তা পাল্টাপািইল্টি হোক আর যাই হোক। কিন্তু এবার দেখার পালা আপনাদের সমাবেশে সারা দেশে গাড়ি বন্ধ করে দেন কিনা। যদি না দেন তাহলে জাতীর কাছে পরিষ্কার হবে যে, বিরোধী দলের সমাবেশে কে সারা দেশে 12/11/17 তারিখে যাতায়াত দুর্ভোগ করেছিল। আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক অন্তত আমাদের কে আমাদের মতামত প্রকাশে বাধা দিবেননা Please.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওবায়দুল কাদের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ