মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
উদারবাদী অর্থনীতির এই পণ্যায়িত বাস্তবতায় কেবলমাত্র ফর্সা-চিকন আর উচ্চতায় লম্বা নারীদেরকেই ‘সুন্দর’ বিবেচনা করা হয়। ভারতীয় নৃবিজ্ঞানী সুসান রাঙ্কল মিস ফেমিনা নামের এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার পর্যবেক্ষক প্যানেলে বসে দেখেছিলেন, পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতির যুগে কী করে নারীর শরীরকে সুনির্দিষ্ট মাপজোক আর রং-এর ওই ছাঁচে ফেলে একমুখী সৌন্দর্য নির্মাণ করা হয়। কী করে নারীকে বানিয়ে তোলা হয় এক একটি প্রদর্শনযোগ্য ‘মানব মেশিন’-এ। শরীরকে এমন সুনির্দিষ্ট কাঠামোবদ্ধ বস্তু হিসেবে নির্মাণ করার প্রক্রিয়াকে সুসান ডেকেছেন সৌন্দর্য উৎপাদন নামে। বিশ্বজুড়ে যখন একমুখী এই সৌন্দর্য উৎপাদনের ধারণার জয়জয়াকার, তখন বিপরীতে দাঁড়িয়ে সময়ই কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে নারীর বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খোঁজে পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক রোমানিয়ান ফটোগ্রাফার মিহায়েলা নওরোক। এদিকে গণমাধ্যমে নারীর একমুখী সৌন্দর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধেরও খবর মিলেছে।
‘সৌন্দর্যের সীমান্ত’ (দ্য অ্যাটলাস অব বিউটি) নামের এক প্রকল্পের আওতায় মিহায়েলা নওরোক ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অলিগলিতে। ৩২ বছর বয়সী এই তরুণীর জন্ম রোমানের বুখারেস্ট শহরে। বিশ্বের ৫০ টি দেশ ভ্রমণ করে তিনি তুলে এনেছেন নারীদের ৫০০টিরও প্রতিরোধী অবয়ব, তাদের সৌন্দর্যের বৈচিত্র। নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, ‘বিশ্বজুড়ে নারীদের সৌন্দর্য বিবেচনায় একটা একমুখী দৃষ্টিভঙ্গির চাপ বিদ্যমান। তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যও খুব প্রকট। তবে আমার কাছে সৌন্দর্য হলো বৈচিত্র। আসলে গণমাধ্যমে উপস্থাপিত সৌন্দর্য প্রকৃত সৌন্দর্যের থেকে অনেক দুর্বল, আর আমাদের কাছে তা অধরাই থেকে যায়।’ তাই বিশ্বজুড়ে নারীদের সংগ্রাম এবং তাদের স্বপ্নগুলোর সৌন্দর্যময় প্রতিফলন আজকে বড্ড বেশি জরুরি বলে মনে করেন তিনি। মিহায়েলা নওরোক-এর অভিজ্ঞতাকে মিলিয়ে পড়া যায় নৃবিজ্ঞানী সুসান রাঙ্কলের ‘মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতা’য় অর্জিত অভিজ্ঞতার সঙ্গে। ২০০৩ সালের ‘মিস ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে নৃবিজ্ঞানী সৃসান রাঙ্কল একজন পুষ্টিবিদকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘ফর্সা ত্বক নিয়ে আসলেই আমাদের একটি মোহাচ্ছন্নতা আছে। এটা একটা বাতিক। যারা এমনকি ফর্সাদের মধ্যে ফর্সা তারা আরও ফর্সা হতে চায়।’
সুসান তার অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন, নারীর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর নামে প্রতিযোগিনীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে নানান প্রতিবন্ধকতা। প্রতিযোগিনীদের ওপর অপর্যাপ্ত ডায়েট চাপিয়ে দিয়ে, তাদের ‘মানব মেশিন’ হিসেবে গড়ে তুলাতে বলিয়ান হয়ে উঠেন প্রজেক্টের পুষ্টিবিদেরা। একজন পুষ্টিবিদ তাকে বলেন, ‘শরীর হলো একটা গাড়ির মতো যার সার্ভিসিং দরকার। আমরা যে ডায়েট দেই তা প্রতিযোগিদের যন্ত্রাংশ আরও সচল করবে।’ সুসান জানান, নিয়মিত ত্বকের খোসা ছাড়ানোর ঔষুধ, গভীর দাগ দূর করতে লেজারের ব্যবহারের পাশাপাশি প্রতিযোগিনীদের প্রতিনিয়ত বিøচ করার উপর জোর দিতেন বিউটিশিয়ানরা।
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় সুসান যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন, নওরোক-এর সৌন্দর্যের সীমানা নামের ফটোগ্রাফির প্রকল্পটি তার বিরুদ্ধেরই প্রতিবাদ। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির নারীদের অনুপ্রেরণাদায়ক কাহিনী তার ছবির মাধ্যমে সবার বিশ্বের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। ধারণকৃত ছবিগুলোর ব্যপারে তিনি বলেন, ‘তাদের(নারীদের) বেশিরভাগই কঠোর সংগ্রাম ও কঠোর পরিশ্রম করতেন, কখনও কখনও তাঁরা বৈষম্যমূলক আচরণের সম্মুখীন হয়েছেন বটে। কিন্তু এই কঠোর পরিবেশেও মর্যাদা, আত্মশক্তি আর সৌন্দর্যের বিবেচনায় তারা ছিলেন নক্ষত্রের মত উজ্জ্বল।’
নওরোক আলোকচিত্রে যে লড়াই জারি রেখেছেন, সেই লড়াইয়ের সমান্তরালে নিজেদের মতো করে প্রতিরোধ জারি রেখেছে ব্রিটিশ নজরদারি সংস্থাগুলো। ছকবদ্ধ সৌন্দর্য এবং নারীকে অধস্তন ও অক্রিয় (প্যাসিভ) যৌন বস্তু আকারে উপস্থাপন করে নির্মিত বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে কঠোর পর্যবেক্ষণে নেমেছে যুক্তরাজ্যের নজরদারি সংস্থাগুলো।
স¤প্রতি যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞাপন স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি (এএসএ) নজরদারি সংস্থার তত্ত¡াবধানে একদল পর্যবেক্ষণকারী প্রচারাভিযান শুরু করেছেন। বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে সংস্থাটি জোর দিচ্ছে লৈঙ্গিক অসমতামূলক বিজ্ঞাপনগুলোকে। এছাড়া যে বিজ্ঞাপনগুলোতে গৃহস্থালিতে পুরুষের অপারগতা, একাডেমিক শিক্ষায় নারীদের পিছিয়ে পরা কিংবা নারীকে অধঃস্তন ও অক্রিয় (প্যাসিভ) যৌন বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, তা নজরদারির আওতায় আছে। নারীর যৌনকরণ কিংবা অধস্তনতা নির্মাণ করে তৈরি করা বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ‘বিজ্ঞাপন স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি’ (এএসএ) কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
হিন্দুস্তান টাইমস-এর জুলাইয়ের এক খবরে সামনে আনা হয়েছে এক কৃঙ্গাঙ্গ মডেল গাচেককে। নিজের চকোলেট বø্যাক শরীরকে আফ্রিকান ঐতিহ্যের উপাদন মনে করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপলিস প্রদেশে বসবাসকারী ২৪ বছর বয়সী এই আফ্রিকান আমেরিকান মডেলের ইন্সট্রাগ্রামে প্রায় ২ লাখ ফলোয়ার আছে। সৌন্দর্যের একমুখী ধারণার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্চ ছুড়ে ইতোমধ্যেই ইন্সটাগ্রামে ঝড় তুলেছেন।
বেলারুসের এক পত্রিকা নিয়েছে অভাবনীয় উদ্যোগ। নাসা-নিনা নামের ওই সংবাদমাধ্যম স¤প্রতি জানিয়েছে, নারী পাঠকদের অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে নিজেদের কনটেন্ট নির্ধারণ করবেন তারা। নারীর জীবনপ্রণালী, তাদের ভালোবাসা, পরিবার, আত্মশক্তি আর তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিষয়বস্তু হিসেবে প্রাধান্য দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। এমনি আরও অনেক লড়াই নারীকে সামনে আনতে চাইছে তার নিজস্ব পরিচয়ে। সূত্র : ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।