Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দু’টি নিখোঁজের ঘটনায় এখনও অন্ধকারে তদন্ত কর্মকর্তারা

সাখাওযাত হোসেন : | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আমার ভাইকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াবেন না-মানববন্ধনে সিজারের বোন
রাজধানীর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোবাশ্বের হাসান সিজার নিখোঁজের ঘটনায় কূলকিনারা করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই অবস্থা এক মাসেরও বেশি সময় আগে নিখোঁজ হওয়া সাংবাদিক উৎপল দাসের। দুটি পরিবারেই তাদেরকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটা ব্যর্থতা নয়, একটু সময় দিতে হবে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, সিজারকে উদ্ধারের বিষয়ে জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস, ইউএনডিপিসহ আন্তর্জাতিক একাধিক সংস্থা থেকেও তার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ কারণে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটগুলো আলাদা আলাদা ভাবে সিজারকে উদ্ধারের েেচষ্টা করছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে গত তিন বছরে তিন শতাধিক মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন। এদের মধ্যে একটি বড় অংশের স্বজনরা নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নেয়ার অভিযোগ করেছেন। তবে র‌্যাব বা পুলিশ এসব অভিযোগ স্বীকার করেনি। অবশ্য সিজার বা উৎপল-কারও পরিবার এই ধরনের কোনো অভিযোগ করেনি। অন্যদিকে সিজারের সন্ধানের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে সিজারকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য না ছড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন তার বোন তামান্না তাসমিন। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষক, বন্ধু ও স্বজন ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে এ অনুরোধ করেন তিনি। গত ৭ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোসিওলজি বিভাগের এই সহকারী অধ্যাপক। তাসমিন বলেন, আমি আমার ভাইকে ফেরত চাই। আমার ভাইয়ের নামে কেউ মিথ্যা তথ্য ছড়াবেন না। দরকার হলে আমাদের সঙ্গে তার ব্যাপারে কথা বলুন। কোনও তথ্য লাগলে আমরা আপনাদের দেবো। ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা (এমসিজে) বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সিজারের সন্ধানের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী ও স্বজনরা অংশ নেন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মফিজুর রহমান বলেন, রাষ্ট্র প্রয়োজনে যে কোনও নাগরিককে প্রশ্ন করতে পারে। তবে সেটি নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে গুম ভয়াবহ ব্যাপার। যে-ই গুম হোক না কেন, তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে একই বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, গত কয়েক মাস ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, প্রতি ১০০ ঘণ্টায় একজন করে গুম ও নিখোঁজ হচ্ছে। এটা দেশের জন্য খুবই হতাশাজনক। সিজার একজন গবেষক। তার গবেষণা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। কিন্তু এমন ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। দ্রæত তাকে আমাদের সামনে দেখতে চাই। অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, মানুষ রাষ্ট্র বানায় নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু এ রাষ্ট্রে যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে। সিজারের যদি কোনও দোষ থাকে তার বিচার না করে কেন নিঃশেষ করে দিতে হবে? এ রকম যারা নিখোঁজ থেকে ফিরে এসেছে তারাও অজ্ঞাত কারণে চুপ রয়েছেন। এ নীরবতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আমাদের সবাইকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রসঙ্গত, গত ৭ নভেম্বর সকালে দক্ষিণ বনশ্রীর বাসা থেকে বের হয়ে সিজার নিজের কর্মস্থল নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে যান। ক্যাম্পাস থেকে বিকালে আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের একটি মিটিংয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বের হওয়ার পরপরই নিখোঁজ হন তিনি। ওই দিন সর্বশেষ ৬টা ৪১ মিনিটেও আগারগাঁও এলাকাতেই তার মোবাইল ফোন চালু ছিল। গতকাল খিলগাঁও থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে সিজারের ব্যাপারে তার বাবা একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। আমরাও সেটি তদন্ত করছি। তবে তার ব্যাপারে অন্য কোন তথ্য নেই আমাদের কাছে। সিজার দক্ষিণ বনশ্রীর বাসায় তিনি বাবা-মা, বোন এবং কন্যা সন্তানের সঙ্গে বসবাস করতেন। কিছুদিন আগে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তার।
অপেক্ষায় উৎপলের পরিবার
গত ১০ অক্টোবর নিখোঁজ হন অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি ডট কমের সিনিয়র রিপোর্টার উৎপল দাস। এ ঘটনায় তার বাবা চিত্তরঞ্জন দাস মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। তার অফিসের পক্ষ থেকেও মতিঝিল থানায় আরেকটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। কিন্তু একমাসের বেশি সময় পার হলেও উৎপল দাসের কোন সন্ধান করতে পারেনি পুলিশ। উৎপল দাসের বাবা চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, এখনও পর্যন্ত আমার ছেলের কোন সন্ধান পাইনি। আমরা আপনাদে কাছে সহযোগিতা চাচ্ছি আপনারা দ্রæত আমার ছেলেটা খোঁজার জন্য সহযোগিতা করেন। তিনি জানান, ১০ অক্টোবর দুপুরে উৎপলের সঙ্গে তার মা বিমলা রানী দাসের সর্বশেষ কথা হয় মোবাইল ফোনে। তখন উৎপল অফিসে ছিলেন। এরপর বিকাল থেকে তার মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ, শত্রুতা নেই। তাই কেউ আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে বা তুলে নিয়ে গেছে- এমন সন্দেহও করতে পারছি না। মতিঝিল থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম রাব্বানি বলেন, এখনও পযন্ত উৎপল দাসের কোন খবর পাওয়া যায়নি। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তদন্ত কর্মকর্তা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ