Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টিপিপি’র ব্যাপারে ঐকমত্য যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়েই

ইনকিলাব ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম


এশিয়া প্যাসিফিকের ১১টি দেশের মন্ত্রীরা গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি সম্পন্ন করার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের শুরুতে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ অর্থনীতির জন্য একলা চলো নীতি অবলম্বন করে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ সেøাগান গ্রহণ করেন। ওই সময় তিনি এ জোট থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। টিপিপি থেকে ট্রাম্পের এ প্রত্যাহার যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। এছাড়া পরিবেশ ও শ্রমিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিম্ন শুল্কের ঘোষণা এ চুক্তির ভবিষ্যত্ অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়। ভিয়েতনামের শহর দানাংয়ে এপেকের শীর্ষ বৈঠকে বিশ্বের শীর্ষ নেতারা মিলিত হন এবং তাদের মধ্যে কেবল ট্রাম্পকেই দেখা যায় সংরক্ষণ নীতির সমর্থনে কথা বলতে। এমনকি সেখানে উপস্থিত চীনের প্রধানমন্ত্রী শি জিনপিংও মুক্ত বাণিজ্য ও বহুমুখী চুক্তির সমর্থনে উচ্চকিত ছিলেন। গত শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র বাদে টিপিপির বাকি দেশগুলো, যাদের এখন টিপিপি-১১ বলা হচ্ছে, ‘মূল বিষয়য়গুলোয় একমত’ হয়েছে বলে জানায়। এর আগে টানা কিছুদিনের আলাপে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল যে চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে না। মন্ত্রীরা জানান, চুক্তিটি চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন করার আগে আরো আলোচনার প্রয়োজন। আর এর নামটি আরো লম্বা হয়ে এখন ক¤িপ্রহেনসিভ এন্ড প্রগ্রেসিভ এগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপে (সিপিটিপিপি) রূপ নেবে। জাপানের আলোচক দলের প্রধান তোশিমিতসু মোতেগি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ফিরে আসতে চায় তাহলে বাকি সদস্যরা তাকে সাদরে গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, এখন ১১টি সবাই সব একজোট এবং তারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য এশিয়া প্যাসিফিক দেশগুলোকে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাবে। কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শম্পাইন এক টুইট বার্তার মাধ্যমে এ আলোচনাকে ‘বিরাট অগ্রগতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এর আগে আলোচনায় কানাডা চুক্তিটির মাধ্যমে আরো বেশি মুক্ত বাজারের পাশাপাশি পরিবেশ ও শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যাপারে জোর দিয়েছিল। এ বছরের গোড়ায় যুক্তরাষ্ট্র জোট থেকে হঠাত্ করে নিজেকে সরিয়ে নেয়ায় এসব বিষয় ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। আর ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, চিলি ও পেরুর মতো দেশের কাছে পরিবেশ ও শ্রমিক সুরক্ষার মতো ধারাগুলোর আবেদন কমে যায়। কারণ বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির বাজারে প্রবেশাধিকার হারিয়ে এ চুক্তির ব্যাপারে দেশগুলোর আগ্রহ তলানিতে ঠেকে। শুক্রবার বিশ্বনেতাদের বৈঠকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প বহুমুখী বাণিজ্য চুক্তির সমালোচনা করে বলেন, ‘আমরা আর কাউকে আমেরিকা থেকে সুবিধা নিতে দেব না।’ এর কিছুক্ষণ পরেই চীনের প্রধানমন্ত্রী শি ঠিক উল্টো বক্তব্য দিয়ে তার নিজের দেশকে মুক্ত বাণিজ্যের নতুন বৈশ্বিক নেতা হিসেবে দাবি করেন। চীনের বাণিজ্যশক্তি খর্ব করতেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রশাসনের নেতৃত্বে টিপিপির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে এখন চীন যুক্তরাষ্ট্রের শূন্যস্থান পূরণে আগ্রহ প্রকাশ করছে, যদিও সে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের অনেকটা অংশই সংরক্ষণবাদী নীতিতে পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্ অর্থনীতি জাপান টিপিপির বাকি দেশগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছার ব্যাপারে বিশেষভাবে উদগ্রীব, কেননা দেশটি আশঙ্কা করছে, তা না হলে কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলে আসার পর চুক্তিটি বাস্তবায়ন নাও হতে পারে এবং এতে আঞ্চলিক বাণিজ্যে চীনের কর্তৃত্ব আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। কানাডা অবশ্য এ ব্যাপারে তাড়াহুড়া করতে চাইছে না। কানাডার প্রতিনিধি দলের একজন জানান, এ চুক্তিকে তারা দেখছেন আগামী কয়েক প্রজন্মের বাণিজ্য চুক্তি হিসেবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে যাওয়ার পর যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল, দানাং আলোচনা তা অনেকটাই দূর করে এ ব্যাপারে প্রাণ ফিরিয়ে এনেছে। এশিয়ান ট্রেড সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক দেবোরাহ এলমস জানান, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও টিপিপি-১১ গত ২০ বছরে করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের ফলে কোম্পানিগুলো অনেকটাই আশাহত হয়েছিল। এএফপি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ