Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এস কে সিনহার পদত্যাগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

একের পর এক নাটকীয়তা এবং নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলেন দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এস কে সিনহা)। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়া এস কে সিনহার চাকরির মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেয়াদপুর্তির ৮১ দিনি আগে তিনি পদত্যাগ করলেন। বাংলাদেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম অমুসলিম প্রধান বিচারপতি। ছুটিতে থাকা এস কে সিনহা ১০ নভেম্বর সিংগাপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ বরাবরে পদত্যাগ পত্র জমা দেন। ওই হাইকমিশনের মাধ্যমে তাঁর পদত্যাগপত্র গতকাল বঙ্গভবনে পৌঁছেছে। এর আগে এক মাসের ছুটি নিয়ে চিকিৎসার জন্য তিনি অস্ট্রেলিয়া যান। প্রধান বিচারপতির পদ থেকে এস কে সিনহার পদত্যাগ বাংলাদেশকে নতুন একটি অভিজ্ঞতার মুখে দাঁড় করালো। কেননা এর আগে কোনো প্রধান বিচারপতি নাটকীয় ভাবে পদত্যাগ করেননি। রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত বিচারাঙ্গনের সর্বচ্চো প্রধান বিচারপতি পদ থেকে এস কে সিনহার পদত্যাগের খবর গতকাল দুপুরে বঙ্গভবন থেকে প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন নিশ্চিত করেন।
প্রধান বিচারপতির পদ থেকে এস কে সিনহার পদত্যাগে সংবিধানিক সংকটের সৃষ্টি হয়নি দাবি করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। যতদিন পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না হচ্ছে ততদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। আইনমন্ত্রী দাবি করেন এস কে সিনহার প্রধান বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ সরকারের হস্তক্ষেপে হয়নি। তিনি (এস সে সিনহা) যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই ব্যবস্থা হয়েছে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ দাবী করেছেন ষোড়শ সংশোধনীর রায় সরকারের বিপক্ষে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিষ্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ বিচার বিভাগ ও আদালতের স্বাধীনতার জন্য কলঙ্ক। তাকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। বিচার বিভাগের যে সামান্য স্বাধিনতা ছিল এই সরকার তা নস্যাৎ করে দিল। দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেছেন, যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য পূর্বশর্ত। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে বিচার বিভাগের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
কয়েক মাস ধরে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। একটি রায়কে কেন্দ্র করে দেশি বিদেশী মিডিয়ায় তাকে নিয়ে ফলাও করে খবর প্রচার হয়। চলে তর্ক বিতর্ক। তার অসুস্থতা, ছুটি, বিদেশ যাত্রা, দুর্নীতির অভিযোগ, সহকর্মীরা তার সাথে এজলাসে না বসার সিদ্ধান্তসহ নানা নাটকীয়তা ঘটেছে। ১০ নভেম্বর এক মাস ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় এসকে সিনহার দেশে ফিরে ‘প্রধান বিচারপতির পদে’ বসা না বসা নিয়ে গুঞ্জন-আলোচনা চলছিল। এরই মধ্যে সরকারের তরফে জানিয়ে দেয়া হয় তিনি না ফেরা পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ‘ভারপ্রাপ্ত’ দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। এর আগে গত ২ অক্টোবর এক মাস ছুটির কথা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বরাবর চিঠি পাঠান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। ছুটির মেয়াদ ছিল পহেলা নভেম্বর পর্যন্ত। ছুটিতে থাকা অবস্থায় প্রধান বিচারপতির ১৩ অক্টোবর বা কাছাকাছি সময়ে বিদেশে যাওয়ার এবং ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে থাকার ইচ্ছা পোষণের বিষয় অবহিত করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের মাধ্যমে চিঠি পাঠান। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় ১২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে। এস কে সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি অভিযোগ ওঠার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে জানানো হয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানায় ওই সব অভিযোগের ‘গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা’ এস সে সিনহা না দিতে পারায় সহকর্মীরা (আপিল বিভাগের বিচারপতি) তার সঙ্গে এজলাসে বসতে নারাজ। এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলে আসছিলেন যে, একজন বিচারপতি না থাকলে বিচারবিভাগ ভেঙ্গে পড়বে না। সহকর্মীরা বসতে না চাওয়ায় এস কে সিনহার ছুটি শেষে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ফেরা ‘সুদূর পরাহত’। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘অসুস্থতার কথা বলে এস কে সিনহা ছুটি নিয়েছেন’ এবং অ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম ‘এস কে সিনহা ক্যান্সারের রোগী’ উল্লেখ করে ছুটি নিয়েছেন প্রচার করেন। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার সময় এস কে সিনহা স্পষ্টভাবে বলেছেন, তিনি সুস্থ আছেন। আর কোনো অসুস্থতা নেই। তার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে। এদিকে বঙ্গভবন থেকে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ গতকালই প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
প্রধান বিচারপতি সাংবিধানিক পদ। তিনি নিজে নিজেই ছুটি নেন এটাই রেওয়াজ। কিন্তু এবার তিনি প্রেসিডেন্ট বরাবরে আবেদন করে ছুটি নিয়েছেন। তাঁর পদত্যাগে সাংবিধানিক শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছে কি এমন প্রশ্ন করছেন অনেকেই। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমতে অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।’ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেছেন, সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ বলা আছে প্রধান বিচারপতি অনুপস্থিত থাকলে কি হবে। এখন সেই ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচার বিভাগ চলবে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যাস্ত করে। পরবর্তীতে আদালত ‘উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেয়া’ সেই সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়। চলতি বছরের ৩ জুলাই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের সেই রায় বহাল রেখে রায় প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতির নের্তৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। পহেলা আগষ্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। ওই রায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ অন্যান্য বিচারপতিরা ৭শ পৃষ্ঠার পর্যবেক্ষণ দেন। রায়ে একক নের্তৃত্বের সমালোচনা করায় বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে আওয়ামী লীগ। শুরু হয় রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে তর্ক বিতর্ক।
৯ অগাস্ট রায়ের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। সংবাদ সম্মেলন করে তিনি রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে এস কে সিনহার কঠোর সমালোচনা করেন। অন্যদিকে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান পদে থেকে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তোলের দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। বিচার বিভাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১০ আগাস্ট ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ অবিহিতকরে তা এক্সপাঞ্জ করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন। আওয়ামী লীগের তিনজন সিনিয়র নেতা এস কে সিনহার সঙ্গে দেনদরবার করে রায় পুনবির্বেচনার অনুরোধ জানান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১২ আগষ্ট প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে দেখা করে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে দলীয় বক্তব্য তুলে ধরেন। কিন্তু এস কে সিনহাকে টলানো যায়নি। রায়ের পক্ষ্যে-বিপক্ষ্যে অবস্থান নিয়ে ১৩ আগাস্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। ১৬ আগাস্ট রায় নিয়ে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনা করেন। বাইরে থেকে ‘রায় লিখে দেয়া হয়েছে’ অভিযোগ তুলে ২২ আগাস্ট প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব ছাড়তে বিচারপতি এস কে সিনহাকে সময় বেঁধে দেয় আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা। তা না হলে তাকে অপসারণে আন্দোলনের হুমকি দেয়া হয়।
২৪ আগাস্ট সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরুর আগে শেষ অফিস করেন এস কে সিনহা। ২৪ আগাস্ট আদালতের কার্যক্রম চলাকালে বক্তব্য ভুলভাবে উদ্ধৃত না করতে সংবাদকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিচারপতিরা যেহেতু মাঠে বক্তব্য দিতে পারেন না; বা তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে জবাব দিতে পারেন না; সে জন্য তাদের কথাবার্তা ভুল ভাবে মিডিয়ায় যেন তুলে ধরা না হয়। এ সময় তিনি রায়ের পর্যবেক্ষণে বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করা হয়নি দাবী করেন। ১০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে অবকাশের (ছুটি) শুরু হলে এস কে সিনহা ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর বিদেশ সফরে ছিলেন। ১৩ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং এস কে সিনহার কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নিতে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। কয়েকজন মন্ত্রী ও এমপি রায় প্রসঙ্গে বিক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান বিচারপতির কঠোর সমালোচনা করে বক্তৃতা দেন। মন্ত্রীদের কেউ তাকে (এস কে সিনহা) দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলেন কেউ পাকিস্তানী এজেন্ট হিসেবে অবিহিত করেন। এসময় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা যেমন এস কে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী বক্তব্য দেন; তেমনি বিএনপি, জাতীয়তাবাদী ধারার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোট বার কাউন্সিলের নেতারা এস কে সিনহার সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য অভিনন্দন জানান। টিভির টকশো, পত্রপত্রিকার সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় ও সভা-সেমিনারে এ নিয়ে চলে তীব্র তর্ক-বিতর্ক।
প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে আপিল বিভাগের কয়েকজন বিচারপতিকে ৩০ সেপ্টেম্বর বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের ১৪ অক্টোবরের বিবৃতিতে সেই তথ্য জানিয়ে বলা হয় প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতিদের ডেকে নিয়ে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে ‘১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ’ কাগজ তুলে ধরেন। বঙ্গভবনের ওই বৈঠক থেকে ফিরে পরদিন পহেলা অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, বিচারপতি ইমান আলী নিজেরা বৈঠক করে বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর পাঁচজনই প্রধান বিচারপতির কাকরাইলের বাসায় গিয়ে এই বিষয়ে কথা বললে এস কে সিনহা ‘দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনের’ওই অভিযোগগুলোর ‘গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা’ দিতে পারেননি বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। ২ অক্টোবর নানা নাটকীয়তার পর অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে ৩ অক্টোবর থেকে পহেলা নভেম্বর এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার আবেদন করেন প্রধান বিচারপতি। পরে আরেক আবেদনে ছুটির সময় বাড়িয়ে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেলেও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দেখা করতে বাধা দেয়া হয়। ৬ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির শরীরের খোঁজ-খবর নিতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে কাকরাইলের বাসায় যেতে চান বিএনপি সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে থাকা আইনজীবী সমিতির নেতারা। পুলিশ তাদের গাড়ি আটকে দেয় এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেয়। ১৩ অক্টোবর ছুটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় যান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। তার আগে সাংবাদিকদের বলেন, বিচারের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা তিনি বিব্রত, শঙ্কিত। তিনি সুস্থ আছেন এবং পালিয়ে যাচ্ছেন না। তিনি আবার ফিরে আসবেন বলেও জানান। বিদেশ যাওয়ার জন্য স্বস্ত্রীক বিমানবন্দরে গেলে তাঁর স্ত্রীকে বিদেশে যেতে দেয়া হয়নি। কয়েক দিন পরে অবশ্য তার স্ত্রী বিদেশ যান। ১৪ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট কার্যত বোমা ফাটানো বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ করা হয়। সে দুর্নীতি দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করবে বলেও জানানো হয়। গতকাল (১১ নভেম্ববর) সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমে পাঠানো এস কে সিনহার পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনে পৌঁছায় এবং তা গৃহিত হয়।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায় ইস্যুতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে নিয়ে এই বিতর্ক ও তোলপাড়ের আগেও তাকে নিয়ে ‘বিতর্ক’ হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইবুনালে যুদ্ধাপরাধের মামলার শুনানিতে একাত্তরে নিজের শান্তি কমিটিতে থাকার কথা তুলে ধরে আলোচিত হন বিচারপতি এস কে সিনহা। তবে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে ওই সময় তিনি শান্তি কমিটির ছদ্মাবরণে কার্যত মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করার’ অভিযোগ নানা সময় তোলেন তিনি। নিম্ন আদালতের বিচারক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ নিয়ে তার সঙ্গে সরকারের বিরোধও ছিল আলোচিত। এ বিষয়ে দফায় দফায় সময নেয় সরকার। সংসদে তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদী বক্তৃতা দেয়া হয়। বিচারপতিদের অবসরের পর রায় লেখা নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সহকর্মী বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তার বাদানুবাদ বিচারাঙ্গন ছাড়িয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও উত্তাপ ছড়ায়। দুই বিচারপতির মধ্যে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের যুদ্ধ চলে দীর্ঘদিন। তবে এস কে সিনহার শেষ বিতর্কের শুরু সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহালের পর্যবেক্ষণ নিয়ে। যা প্রথমে এক মাসের ছুটি এবং শেষে পদত্যাগের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ওই রায় প্রকাশের পর থেকে নভেম্বর এই পাঁচ মাসেই ঘটে যায় এসব ঘটনা।
এস কে সিনহা ‘প্রধান বিচারপতি’র পদ থেকে পদত্যাগ করেছেনর কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, ‘প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের বিষয়টি নজিরবিহীন। তিনি আদৌ পদত্যাগপত্র লিখেছেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। উনি সিঙ্গাপুরে থেকে কীভাবে প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠালেন তা জনগণের জানার অধিকার রয়েছে। ##



 

Show all comments
  • রবিন ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ২:০৪ এএম says : 2
    অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সাহেবে বক্তব্যের সাথে আমি একমত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধান বিচারপতি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ