পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তিন মাসের নাটকীয় নানা ঘটনার পর অবশেষে পদত্যাগ করেছেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। গতকাল সকালে তিনি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে সিঙ্গাপুর থেকে কানাডার উদ্দেশে যাত্রা করেন। বিচারক অপসারণ নিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তাকে নিয়ে যে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্ট হয়, পদত্যাগের মাধ্যমে তার ইতি টানলেন তিনি। তার পারিবারিক সূত্র পদত্যাগের খবর আমাদের সময়কে নিশ্চিত করেছে।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, ‘নিয়মানুযায়ী তিনি পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি তা গ্রহণ করে দ্রুত সময়ে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। কারণ প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য থাকতে পারে না। তাই পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দিয়ে দায়িত্ব পালনেরও কোনো সুযোগ নেই।’
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) মাহবুবে আলম বলেন, ‘সংবিধানের ৯৬(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে কোনো বিচারপতি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠাতে পারেন। আমি মনে করি এটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠালেই হবে।’ প্রধান বিচারপতি বিদেশে রয়েছেন, তা হলে কার কাছে পাঠাবেন জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তিনি কীভাবে পদত্যাগপত্র পাঠাবেন বা না পাঠাবেন এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠালে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী পরামর্শ দেবেন।’ পদত্যাগপত্র পাঠানো হলে এটি কী গৃহীত হয়ে যাবে এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আগে পাঠাক না, তার পর রাষ্ট্রপতি কী করে দেখেন। সে পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
এসকে সিনহার পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি দেশে ফিরে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে সিঙ্গাপুরে বসেই পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। এ বিষয়ে তার স্ত্রী, দুই মেয়েসহ পারিবারের অন্য সদস্যরা বেশি ভূমিকা রেখেছেন। জানা গেছে, বাংলাদেশ সময় দুপুর পৌনে ১২টায় বিচারপতি এসকে সিনহা সিঙ্গাপুর থেকে কানাডার উদ্দেশে রওনা দেন। আজ ভোরে তার কানাডায় পৌঁছার কথা রয়েছে। সেখানে তার ছোট মেয়ের বাসায় উঠবেন। আপাতত তিনি সেখানেই থাকবেন।
সূত্র জানিয়েছে, পদত্যাগ কার্যকর হতে সময় লাগবে। এটি প্রথমে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের কাছে আসবে। তার পর সেটি আইন মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছবে। রাষ্ট্রপতি তার পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।
এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করলেও কোনো সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হবে না। কারণ সংবিধানে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলা আছে।
বিচারপতি এসকে সিনহা ছুটিতে গেলে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়, ‘প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে প্রধান বিচারপতি তাঁহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমত অন্য কোন ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপীল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।’
এর আগে ১ আগস্ট উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে করা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশিত হয়। এ রায়ে প্রধান বিচারপতির দেওয়া বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপন্থি আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তোলেন। সমালোচনার মধ্যেই ১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা হঠাৎ করেই এক মাসের ছুটির কথা জানিয়ে চিঠি দেন।
পরের দিন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়াকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। আইনমন্ত্রী জানান, প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারে আক্রান্ত। পরে ১১ অক্টোবর চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতির এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার ছুটি ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
গত ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান বিচারপতি। দেশ ছাড়ার আগে প্রধান বিচারপতি তার বাসভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অসুস্থ নয়। বিচার বিভাগের স্বার্থে ফিরে আসব। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে একটি মহল প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়েছেন।’ তিনি একটি লিখিত বিবৃতিও সাংবাদিকদের দিয়ে যান। পরের দিন ১৪ অক্টোবর সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ ওঠার পর তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এ কারণে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসতে চাননি আপিল বিভাগের বিচারপতিরা। এ অবস্থায় প্রধান বিচারপতির দেশে ফেরা নিয়ে ধূমজালের সৃষ্টি হয়।
গত সপ্তাহের প্রথম দিকে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা একাই অস্ট্রেলিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে আসেন। সেখানে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানের জন্য দফায় দফায় সমঝোতা বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ তৃতীয় একটি পক্ষও ছিল। বৈঠকে এসকে সিনহা ১১ অভিযোগের বিষয়টি নিষ্পত্তি করে সম্মানজনকভাবে দেশে ফিরে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য এজলাসে বসতে চেয়েছিলেন। অন্যথায় পদত্যাগ করতে চান। সূত্রটি আরও জানায়, কিছু দিন আগে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মাধ্যমে এ দেশ থেকে ই-মেইলযোগে পদত্যাগপত্রের খসড়া নেন। এর পর পদত্যাগপত্র তিনি নিজেই চূড়ান্ত করেন। পদত্যাগপত্রটি সঙ্গে করে তিনি সিঙ্গাপুরে আসেন।
আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আগেই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসে বিচারকার্য পরিচালনায় অপারগতা প্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়ায় মূলত সমঝোতার বিষয়টি ভেস্তে যায়। এ অবস্থায় প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা দেশে ফিরে পদত্যাগ করতে চান। কিন্তু তার স্ত্রী, সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা দেশে ফিরতে বারণ করেন। সিঙ্গাপুরে বসেই পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে কানাডায় ফিরে যান। পরিবারের সদস্যরা চান, আর কোনো ঝামেলায় না গিয়ে শান্তিতে তিনি বিদেশেই অবস্থান করবেন। আপাতত তিনি দেশেও ফিরবেন না।
ষোড়শ সংশোধনীর পর্যবেক্ষণ নিয়ে সমালোচনা : উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিয়ে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও সরকার সমর্থক আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির তীব্র সমালোচনা শুরু করেন। তার পদত্যাগের দাবি ওঠান কেউ কেউ। সরকার সমর্থক আইনজীবীরা পদত্যাগের আল্টিমেটামও দেন। পাশাপাশি রায়ে প্রধান বিচারপতির দেওয়া পর্যবেক্ষণও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারের দাবি জানান। তবে বিএনপিসহ কিছু দল এ রায়কে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দেশ মানবাধিকার ঝুঁকিতে, দুর্নীতি অনিয়ন্ত্রিত, সংসদ অকার্যকর, কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।’ ৭৯৯ পৃষ্ঠার রায়ে সরকার, সংসদ, রাজনীতি, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, সামরিক শাসন এবং রাষ্ট্র ও সমাজের বিষয়ে অনেক পর্যবেক্ষণ উঠে আসে। রায়ে কড়া সমালোচনা করেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘আমি ও আমিত্ব’র সংস্কৃতির। তিনি বলেন, “আমাদের সংবিধানের ভিত্তি হচ্ছে, ‘আমরা জনগণ’ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। ১৯৭১ সালে আমরা যে অলঙ্ঘনীয় ঐক্য গড়ে ছিলাম, তা শত্রুরা নস্যাৎ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। আজ আমরা একটি মুক্ত, স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে বাস করি। অথচ আজ ঔদ্ধত্য এবং অজ্ঞতাকে আমরা প্রশ্রয় দিয়ে চলছি। কোনো একজন ব্যক্তি দ্বারা কোনো একটি দেশ বা জাতি তৈরি হয়নি। আমরা যদি সত্যিই জাতির পিতার স্বপ্নে সোনার বাংলায় বাঁচতে চাই, তা হলে এই আমিত্বের আসক্তি এবং আত্মঘাতী উচ্চাভিলাষ থেকে আমাদের মুক্ত থাকতে হবে। এই আমিত্ব হলো কেবল এক ব্যক্তি বা একজন মানুষ সবকিছুই করতে পারেন এমন ভাবনা।’’
রায়ে প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি নিরপেক্ষভাবে এবং কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে না হতে পারে, তা হলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুপস্থিতিতে একটি গ্রহণযোগ্য সংসদও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সে কারণে আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং সংসদ শিশু অবস্থায় রয়ে গেছে। জনগণ এ দুটি প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা অর্জন করতে পারছে না। এ দুটি প্রতিষ্ঠান যদি জনগণের আস্থা এবং শ্রদ্ধা অর্জনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ থেকে বিরত থাকে, তা হলে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অভাবে বিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের দিয়ে সংসদ গঠিত হতে পারে না, বরং তা সংসদের নিজের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণকে ব্যাহত করতে পারে।’
প্রধান বিচারপতি রায়ে বলেন, ‘সংসদ যদি যথেষ্ট পরিপক্বতা অর্জন না করে, তা হলে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ করার ক্ষমতা সংসদের কাছে ন্যস্ত করা হবে একটি আত্মঘাতী উদ্যোগ। সংসদের কাছে বিচার বিভাগের জবাবদিহি করা উচিত নয়; বরং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে জাতীয় নির্বাচনে তাদের প্রার্থী বাছাইয়ে সতর্ক হওয়া।’
বিচারপতি সিনহার বাসায় ওবায়দুল কাদের : রায় নিয়ে এক রকম অস্থিরতার মধ্যেই ১২ আগস্ট রাতে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বাসায় নৈশভোজে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সূত্রমতে, ওই দিন রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে আলাপ করেন এসকে সিনহা ও ওবায়দুল কাদের। প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে কোথাও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় সংসদকে অসম্মান করে বক্তব্য লেখেননি বলে কাদেরকে জানান। প্রধান বিচারপতি বলেন, যারা এগুলো বলছেন, তারা পূর্ণাঙ্গ রায় নয় কয়েকটা লাইন পড়েই এসব সমালোচনা করছেন। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি কাদেরের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং আইন সচিবের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার কথা জানান।
হঠাৎ ছুটির আবেদন : ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই সুপ্রিমকোর্টের অবকাশ চলাকালে ৮ সেপ্টেম্বর রাতে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন রাতে। সেখানে তার ছোট মেয়ের বাসায় ছিলেন। এর পর ১৮ সেপ্টেম্বর জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার রাষ্ট্রগুলোর প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলনে যোগ দেন। সম্মেলন চলে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এর পর ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি দেশে ফেরেন। এর পর অবকাশ শেষে ৩ অক্টোবর থেকে সুপ্রিমকোর্ট চালু হওয়ার আগের দিন ২ অক্টোবর হঠাৎ করেই এক মাসের ছুটিতে যান। তিনি আবেদনে ৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে যাওয়ার কথা জানান রাষ্ট্রপতিকে। পরে ৪ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি অসুস্থ, ক্যান্সারে আক্রান্ত। এটা নিয়ে রাজনীতির কিছু নেই। আসুন আমরা সবাই মিলে প্রধান বিচারপতির সুস্থতার জন্য দোয়া করি।’
এর পর ১০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত সহকারীর বরাত দিয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন আইন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি লিখেন। তাতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি বিশ্রামের জন্য ১৩ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে থাকতে চান। ১১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ওই ছুটি বৃদ্ধির আবেদনে সই করেন। পরদিন আইন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ১০ নভেম্বর দেশে ফেরা অথবা স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেন।
অসুস্থ নই, আবার ফিরে আসব : ১৩ অক্টোবর রাতে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। ওইদিন রাতে তার হেয়ার রোডের বাসভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অসুস্থ নই। আমি চলে যাচ্ছি। আমি পালিয়ে যাচ্ছি না। আবার ফিরে আসব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটু বিব্রত। আমি বিচার বিভাগের অভিভাবক। বিচার বিভাগ যাতে কলুষিত না হয় সে জন্যই সাময়িকভাবে যাচ্ছি। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকুক এটাই আমি চাই। কারো প্রতি আমার বিরাগ নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। আমি আর কিছু বলব না। আমি লিখিত বক্তব্য দিচ্ছি। ’
১১ অভিযোগ ও একসঙ্গে বসতে বিচারপতিদের অস্বীকৃতি : দেশ ছাড়ার পরের দিন সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ছুটি ভোগরত প্রধান বিচারপতি ১৩ অক্টোবর বিদেশ গমনের প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের নিকট হস্তান্তর করেন। বিবৃতিটি সুপ্রিমকোর্টের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিবৃতিটি বিভ্রান্তিমূলক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রিমকোর্টের বক্তব্য নিম্নরূপ : ‘গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ব্যতীত আপিল বিভাগের অন্য পাঁচ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। বিচারপতি মো. ইমান আলী দেশের বাইরে থাকায় ওই আমন্ত্রণে উপস্থিত থাকতে পারেননি। অপর চারজন অর্থাৎ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ আলোচনার একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগসংবলিত দালিলিক তথ্য হস্তান্তর করেন। এর মধ্যে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বিচারপতি মো. ইমান আলী ঢাকায় ফেরার পর ১ অক্টোবর আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি এক বৈঠকে মিলিত হয়ে ১১টি অভিযোগ (সংযুক্তিসহ) বিশদভাবে পর্যালোচনা করেন। এর পর সিদ্ধান্ত নেন, ওই সব গুরুতর অভিযোগগুলো প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে অবহিত করা হবে। তিনি যদি ওইসব অভিযোগের ব্যাপারে কোনো সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন তা হলে তার সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকার্য পরিচালনা সম্ভব হবে না। ওই সিদ্ধান্তের পর ওই দিনই বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার অনুমতি নিয়ে পাঁচজন বিচারপতি তার হেয়ার রোডের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অভিযোগগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। দীর্ঘ আলোচনার পরও তার কাছ থেকে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতি তাকে সুস্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, অভিযোগগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বিচারকার্য পরিচালনা সম্ভব হবে না। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, সে ক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এ ব্যাপারে পরের দিন ২ অক্টোবর তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। ২ অক্টোবর তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতিদের কোনো কিছু না জানিয়েই রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির দরখাস্ত দিলে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন।
সর্বশেষ সিঙ্গাপুরে বৈঠক এবং পদত্যাগ : গত সপ্তাহের প্রথম দিকে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সিঙ্গাপুর যান। সেখানে দফায় দফায় বৈঠক করে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় পদত্যাগ করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।