Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাবি ও রুয়েটে ইয়াবা চক্র

তালিকায় সাত শিক্ষক, দুই ছাত্রী ও ১৪ নেতাকর্মী

| প্রকাশের সময় : ১১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাবি রিপোর্টার : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ঘিরে গড়ে ওঠা ইয়াবা ব্যবসা চক্রের ৪৪ জনকে শনাক্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাদক শাখা। যা প্রধানমন্ত্রীর দফতর হয়ে চলতি মাসের শুরুতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের দফতরে পৌঁছেছে। একই কপি রাবি ও রুয়েট কর্তৃপক্ষ কেও পাঠানো হয়েছে।
ওই তালিকায় রয়েছেন রাবির ৩৪ জন ও রুয়েটের ১০ জন। এদের মধ্যে রাবির ছয়জন শিক্ষক, আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারী, ১১ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী, তিনজন সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ছয়জন সাধারণ শিক্ষার্থী। আর রুয়েটের একজন শিক্ষক, দুইজন ছাত্রী ও সাতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম উঠে এসেছে গোপন ওই তালিকায়। এছাড়া রাজশাহী অঞ্চলভুক্ত পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) চারজন কর্মকর্তার নামও ইয়াবা চক্রের তালিকায় উঠে এসেছে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে যাচাই-বাছাই শেষে ওই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। যার সঙ্গে পাঁচটি মন্তব্য ও চক্র নিয়ন্ত্রণে চারটি সুপারিশ জুড়ে দেয়া হয়েছে।
তবে ওই প্রতিবেদনে থাকা কয়েকটি নাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। ‘এহসান’ নামে পরিসংখ্যান বিভাগের মাস্টার্সের একজন ছাত্রের নাম তালিকায় উল্লেখ করা হলেও বিভাগে খোঁজ নিয়ে ওই নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। আর তালিকা প্রণয়নে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ব্যক্তিগত শত্রæতার প্রতিফলন’ ঘটেছে বলে দাবি অভিযুক্ত কয়েকজনের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাভুক্ত ছয় শিক্ষক : গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, ড. মুসতাক আহমেদ, আইবিএ এর সহযোগী অধ্যাপক মোহা. হাছানাত আলী, লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক স্বপ্নীল রহমান, মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুস সালাম, চিত্রকলা প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আমির্বল ইসলাম। আট কর্মকর্তা-কর্মচারী : রাবির হিসাব শাখার সহকারী রেজিষ্ট্রার মাহমুদুর রহমান, বীমা ইউনিটের সেকশন অফিসার কেবিএম শাহীন, মেডিকেল সেন্টারের পিয়ন রবিউল সরকার রবি, প্রশাসন ভবনের নি¤œমান সহকারী মাসুদ, ফলিত গণিত বিভাগের ল্যাব এ্যাটেনডেন্ট তৌহিদুল ইসলাম কালু, স্টুয়ার্ড শাখার প্রহরী মো. লালন, হিসাব শাখার উচ্চমান সহকারী বোরহান উদ্দীন, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার নি¤œমান সহকারী সুগার।
তালিকভুক্ত রাবি ছাত্রলীগের ১১ নেতাকর্মী : আখতারুল ইসলাম আসিফ (ক্রপ সায়েন্স বিভাগ, সহ-সভাপতি), আবু খায়ের মোস্তফা রিনেট (ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, সহ-সভাপতি, ছাত্রলীগ ও সাবেক ছাত্রদলকর্মী), তাওশিক তাজ (বাংলা বিভাগ ও ছাত্রলীগ নেতা), রবিউল আউয়াল মিল্টন (দর্শন বিভাগ ও সহ-সভাপতি), এরশাদুর রহমান রিফাত (মাস্টার্স, ফিন্যান্স বিভাগ, সহ-সভাপতি), সাইফুল ইসলাম বিজয় (আইন বিভাগ, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা), শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম (ড্রপ আউট, লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা), অনিক মাহমদু বনি (রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ কর্মী), এস.এম আবু হানজালা (ফোকলোর, সহ-সম্পাদক), মুশফিক তাহমিদ তন্ময় (ফোকলোর, সাংগঠনিক সম্পাদক), রেজওয়ানুল হক হৃদয় (সহ-সভাপতি)।
তালিকাভুক্ত ছাত্রদলের তিন নেতা : আরাফাত রেজা আশিক (সাবেক আহŸায়ক, ছাত্রদল), দেলোয়ার হোসেন (সাবেক যুগ্ম-আহŸায়ক, ছাত্রদল), নুরুজ্জামান লিখন (সাবেক আহŸায়ক, হবিবুর হল ছাত্রদল)। তালিকাভুক্ত ছয় শিক্ষার্থী : শফিক (মাস্টার্স, ফিন্যান্স বিভাগ), সেলিম (মাস্টার্স, আইন বিভাগ), নাজমুল ইসলাম পলাশ (গণযোগাাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, তৃতীয় বর্ষ), পল্লব গুহ (মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগ), মাহমুদুল হাসান মুন্না (গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ), এহসান (মাস্টার্স, পরিসংখ্যান বিভাগ)।
তালিকাভুক্ত রুয়েটের ১০ জন : পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক কামরুজ্জামান রিপন, শাহনেওয়াজ সরকার সেডু (সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, রুয়েট), সংস্থাপন শাখার কম্পিউটার অপারেটর মুরাদ হোসেন, রাজিব হাসান রনি, আখতারুজ্জামান (জুনিয়র অফিসার, সিভিল বিভাগ), এসএম জাকির হোসেন (এমএলএসএস, সিভিল), আসাদুজ্জামান (এমএলএসএস, সিএসই), আশিকুল্লাহ (ল্যাব এটেনডেন্ট, লাইব্রেরি শাখা)। এছাড়া ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১২ সিরিজের একজন ছাত্রী (শেখ হাসিনা হল, রুম-১১১) ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২০১২ সিরিজের অপর একজন ছাত্রীর নাম রয়েছে ওই ইয়াবা চক্রের তালিকায়।
পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন : তৌফিকুল ইসলাম সৈকত (সেকশন অফিসার), শাহাদাত হোসেন (সহকারী টেকনিক্যাল অফিসার), দালাল সরদার বাবু (নিরাপত্তা প্রহরী) ও আহমেদ রায়হান তর্ব (কম্পিউটার অপারেটর, ফার্মেসী বিভাগ)।
তালিকায় নাম থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সেক্রটারী ভিত্তিহীন বলে মনে করেন। তারা বলেন, এটা পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে যাতে ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুন্য হয়।
তালিকায় নাম থাকা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন বলেন, ‘আজকে উছিলা মাদক, কাল হয়তো অন্য কিছু হবে। মুক্ত ক্যাম্পাসকে নষ্ট করে কোনো মঙ্গলের দিকে আমরা যেতে পারব না। ব্যক্তিগতভাবে আমার নাম ইয়াবা চক্রে যুক্ত হওয়ার ব্যাপার বলতে পারি- লেখাপড়া, শিক্ষকতা ছাড়া আমি তেমন কোনো কাজই করি না। একটু-আধটু কবিতা ও গান করি, ফলে এটা হাস্যকরও বটে। আবার খুব চিন্তারও বটে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাভারে কারা কাজ করছেন, তারা সবকিছু ঠিকঠাক করছেন কিনা? মনে হয় কোথাও একটু গোলমাল আছে।’
গত বুধবার রাজশাহীতে এসে এ বিষয়ে কথা বলেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকে, সে যত বড় গডফাদার হোক। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা যে দলের হোক বা যত প্রভাবশালী হোক, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিধানও আছে। আমরা কারও প্রতি অনুকম্পা দেখাবো না। কোনো পুলিশ কর্মকর্তাও যদি মাদক কারবারে যুক্তদের ব্যাপারে অনুকম্পা দেখায়, তবে তথ্য প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জানতে চাইলে রাবি ভিসি অধ্যাপক ড. এম. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে এটি গভীর পরিতাপের বিষয়, খুবই উদ্বেগজনক। শিক্ষকরা যখন এই অনৈতিক কাজে জড়ায়, তাদের কাছে যারা শিক্ষা গ্রহণ করে; তারা অনৈতিক কাজে জড়াবে এটা খুব স্বাভাবিক। এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন দারকার। বিশ্ববিদ্যালয়েও একটি আইন আছে, নৈতিক স্খলনের জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আমি মনে করি সেটি নেয়ার সময় এসেছে

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষক

১৪ অক্টোবর, ২০২২
৫ অক্টোবর, ২০২২
৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ