Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আওয়ামী লীগ ছেড়ে ভোট করলে কী হবে ইনুও জানেন -ওবায়দুল কাদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতি সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিকে সহযোগিতা : নিজেরা ‘মারামারি’ করে বলে বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দিতে পুলিশও ‘ভয় পায়’
সরকারের শরিক জাসদ একাংশের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটানোর পর জবাব দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, জাসদ যদি আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচনে যায়, তার ফল কী হবে-তা ইনু নিজেও জানেন। কাদের আরও বলেন, আলোচনা করা ঠিক নয়। উনার যা ক্ষোভ আছে, এটা আমরা দলীয় ফোরামে, সরকারি ফোরামে আলাপ করে নেব। চিন্তার কোনো কারণ নেই।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বিতরণ উপলক্ষে গতকাল টিএসিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছাত্রলীগ।
এর আগে গত বুধবার কুষ্টিয়ায় এক সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, তারা সংখ্যায় বিপুল না হলেও তাদের ছাড়া ‘হাজার বছরেও’ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তিনি বলেন, আপনারা ৮০ পয়সা থাকতে পারেন। আপনি এক টাকার মালিক না। যতক্ষণ এক টাকা হবেন না ততক্ষণ ক্ষমতা পাবেন না। আপনি ৮০ পয়সা আর এরশাদ, দিলীপ বড়ুয়া, মেনন আর ইনু মিললে তবেই এক টাকা হবে। আমরা যদি না থাকি তাহলে ৮০ পয়সা নিয়ে আপনারা (আওয়ামী লীগ) রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরবেন। এক হাজার বছরেও ক্ষমতার মুখ দেখবেন না। সুতরাং ঐক্য করেছি জাতির জন্য, দেশের জন্য, মানুষের জন্য। সেই ঐক্যের ফসল হিসাবে আজ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপিবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে এক পর্যায়ে গঠন হয় ১৪ দলীয় জোট। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ইনু কুষ্টিয়ার একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ইনু কখনও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদ পায় পাঁচটি আসন। ইনুকে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ওবায়দুল কাদের বলেন, ইনু সাহেব অভিমান, ক্ষোভ থেকে বোমা ফাটিয়েছেন। কেন এ অভিমান? উনি নিজেও জানেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন করলে রেজাল্ট কী হবে? আগে করে তো টেস্ট করেছি। আমাদের দলের শরিক, তবে নির্বাচন এক সঙ্গে করব। সরকারের সঙ্গে নির্বাচন করে কিছু আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন।
ইনুর বক্তব্যকে অভিমান হিসেবে দেখছেন জানিয়ে তার (ইনু) সঙ্গে কথা বলতে ১৪ দলের সমন্বয়ক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। কাদের বলেন, অভিমান করে হঠাৎ করে ইনু সাহেব একটা বোমা পাঠালেন। আমাদের ১৪ দলের আহ্বায়ক নাসিম ভাইকে বলেছি বিষয়টি দেখার জন্য আসলে তার আমাদের ওপর এত ক্ষোভ কেন, অভিমান কেন। আমরা জানতে চাই। হয়ত কোন কারণে এত অভিমান। এই কথার মাধ্যমে হয়তো কিছু আত্মতৃপ্তির ঢেকুর হয়েছে।
বিএনপির সমালোচনা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ওই দলটি নিজেদের অনুষ্ঠানে ‘মারামারি’ করে বলে তাদের সমাবেশের অনুমতি দিতে পুলিশও ‘ভয় পায়’। আপনারা নিজরাই নিজেদের সঙ্গে মারামারি করে, বিশৃঙ্খলা করে, পাল্টাপাল্টি চেয়ার ছোড়াছুড়ি করে সভাসমাবেশ পন্ড করেছেন। আপনাদের অনুমতি দিয়ে পুলিশকে নিজেদের কর্তব্য পালনে হিমশিম খেতে হয়। তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশের অনুমতির সঙ্গে গণতন্ত্রের কোন সম্পর্ক নেই। আওয়ামী লীগ সমাবেশের অনুমতি দেয় না, অনুমতি দেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশ করতে চাওয়া প্রসঙ্গে কাদের বলেন, বিএনপি ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে, তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চাচ্ছে, সরকার দিচ্ছে না। ধৈর্য্য হারালে চলবে না। আপনারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন দ্বারে দ্বারে ধরনা দিয়েও অনেক অন্যায় নির্যাতন সহ্য করেছি। আমাদের কত মিটিং লাঠিচার্জ করে ভেঙে দেয়া হয়েছে। অফিসের সামনেও আমরা মিটিং করতে পারিনি।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপিকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে দাবি করে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, পুলিশ (সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশে বিএনপিকে) অনুমতি দিয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে পেয়ে যাবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমতি আপনারা পেয়েছেন, এটাই সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই ১৭ মিনিটের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস, আমাদের পরাধীনতা আমাদের রক্ত, আমাদের বিদ্রোহ, হাহাকার, নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন। স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছেন দেশবাসীকে। ভাষণটি আমাদের পরম সম্পদ, গৌরব এবং আনন্দের। যেখানে সেখানে যত্রতত্র এই ভাষণটি ব্যবহার করা উচিত নয়।
অন্তর্কোন্দলে ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সংগঠনটির বর্তমান কর্মকান্ডের সমালোচনা করেন এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল কাদের। ছাত্রলীগের কিছু কিছু অনাকাঙ্খিত খারাপ কাজের জন্য আমাদের লজ্জিত হতে হয়, বিব্রত হতে হয়। ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উদ্দেশে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কর্মী পরিমাণ বেড়েছে, কিন্তু গুণগত সমৃদ্ধি নয়। গুণগত গভীরতার ঘাটতি আছে। ছাত্রলীগের কিছু কিছু ঘটনা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাসড়ক দেশকে যে সমৃদ্ধ করছে, তাকে ম্লান করে। যদি ম্লান হয়ে যায়, তবে সেটা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্য।
সংঘর্ষ হলে কেন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হবে, কেন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ছাত্রলীগের কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে, প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যারা দোষী তাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান এবং সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদের সদস্য রিয়াজুল কবির কাওছার ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওবায়দুল কাদের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ