Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দখলদারদের হৃদকম্পন

যশোরের ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদের খনন শুরু অচিরেই

মিজানুর রহমান তোতা : | প্রকাশের সময় : ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অবশেষে যশোরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী ভৈরব নদ দখলমুক্ত হচ্ছে। শত চেষ্টা করেও এবার রক্ষা পাচ্ছে না অবৈধ দখলদাররা। প্রশাসন অনড় ‘যেভাবেই হোক উচ্ছেদ করেই ছাড়বো’। বছরের পর বছর ধরে পৈত্রিক সম্পত্তির মতো নদের জমিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর নির্মাণ করে ভোগদখল করেছে যারা, ইতোমধ্যেই তাদের হৃদকম্পন শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফ উদ্দিন গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ১শ’১৮ জন অবৈধ দখলদার চিহ্নিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। নোটিশ দেওয়া হয়েছে আগামী ৭দিনের মধ্যে দখলমুক্ত না হলে, অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে। পানি উন্য়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, ২শ’৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে মরা ভৈরব খননের কাজ শুরু হবে জানুয়ারী মাসের শেষে। সংশ্লিষ্ট সুত্রমতে, ভৈরব নদের জমি দখল করে দুইপাড়ে বেশকিছু ভবন ও অসংখ্য দোকানপাট নির্মিত হয়েছে। যার দখলদাররা প্রভাবশালী। ওয়ান ইলেভেনের সময় কিছু উচ্ছেদ হলেও আবার তা বহাল তবিয়তে দখল হয়। ’৮০এর দশক থেকে মূলতঃ নদ দখল শুরু হয়। সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে বাঁশের খুটি তারপর কংক্রিটের পিলার, পরবতীর্তে বিশাল বিশাল অট্রালিকা, একপর্যায়ে হয়ে যায় পৈত্রিক সম্পত্তি। এভাবেই হয়ে যায় ব্যক্তিগত সম্পত্তি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র জানায়, এবার উচ্ছেদ হবেই। নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডর যৌথভাবে জরিপ চালায়। ভৈরব নদ খননের আগে নদের সীমানা নির্ধারণ করা হবে। একইসাথে উচ্ছেদ করা হবে অবৈধ দখলদার। এটি বাস্তবায়ন হলে যশোর শহরের চেহারা পাল্টে যাবে। ভৈরব নদ খননের মাধ্যমে দুইপাড়ে পায়ে হাটার রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। বহুদিন ধরে ভৈরব নদ খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা যশোর শহরের সৌন্দর্যবৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন যশোরের মানুষ। মন্ত্রী ও এমপিরা বরাবরই কথা দিয়েছেন কিন্তু বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেননি। এবার বাস্তবায়ন হওয়ায় যশোরের মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে প্রত্যাশা রেখেছেন, যাতে সত্যিকারার্থে নিরপেক্ষভাবে নদের সীমানা পরিমাপসহ অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে ভৈরবের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোন পক্ষ থেকে গড়িমসি করা না হয়। ভৈরব নদ খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের খবরে ইতোমধ্যে হৃদকম্পন শুরু হয়েছে পৈত্রিক সম্পত্তির মতো নদের জমি দখল করে বাড়িঘর দোকানপাট নির্মাণকারী ভোগদখলকারীদের। আনুমানিক কতটুকু নদের জমি দখল হয়েছে বিভিন্নসময়ে তা ভেঙ্গে ফেললে বড় ধরণের ক্ষতি হবে কিনা নিজেরা পরিমাপ করে দেখতে শুরু করেছেন দখলদাররা।
সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে টেকসই ও সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, ভৈরব নদের রিভার বেসিন এলাকার পানিবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ভৈরব নদের প্রকল্পটি গ্রহণ করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত¡াবধানে যশোরের চৌগাছার তাহেরপুর থেকে যশোরের আফ্রাঘাট পর্যন্ত ৯৬ কিলোমিটার ভৈরব নদ খনন, চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদার জীবননগর বুড়ি ভৈবর (আপার ভৈরব) নদের সঙ্গে মাথাভাঙ্গা নদীর সংযোগ স্থাপনের জন্য ৩৩ কিলোমিটার নদী খনন করা হবে। ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয়, ঐহিত্যবাহী ভৈরব নদটি গঙ্গা থেকে বের হয়ে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ভেতর দিয়ে সীমান্ত জেলা মেহেরপুরে ঢুকেছে। মেহেরপুরের সুবলপুর পয়েন্টে মিশেছে মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে। ভৈরব আর মাথাভাঙ্গা অভিন্ন ধারায় দর্শনা রেলস্টেশন এলাকা পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। কিন্তু ১৮৬১ সালে শিয়ালদহ-কুষ্টিয়া রেলপথ স্থাপনের সময় ভৈরব নদ ভরাট করে মাথাভাঙ্গা নদীকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ওই পয়েন্ট থেকে দর্শনা ও জীবননগর হয়ে ভৈরব নদ এসে মিশেছে চৌগাছার তাহেরপুরে কপোতাক্ষের সাথে। সেখান থেকে ভৈরব নদ যশোর ও শিল্পশহর নওয়াপাড়া হয়ে শিল্পনগরী খুলনা ছুঁয়ে সুন্দরবনের পশুরনদীতে গিয়ে মিশেছে। ভৈরব নদকে ঘিরেই মূলত যশোর, নওয়াপাড়া ও খুলনায় নগর, শহর ও শিল্প গড়ে ওঠে। ব্যবসা-বাণিজ্যও স¤প্রসারিত হয়। ভৈরব নদে একসময় বড় বড় জাহাজ ভিড়তো। এখন ভৈরবে নদীপথ নেই বললেই চলে।



 

Show all comments
  • সিফাত ৭ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৩০ এএম says : 0
    দখলদারদের কারণেই অনেক নদী ও খাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ