Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাঙাচোরা সড়কে দুর্ভোগ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আব্দুল্লাহপুর থেকে উত্তরা হয়ে ঢাকা বিমান বন্দর। পূর্বদিকের সড়কটি দেখলে মনেই হবে না-রাজধানীর অভিজাত এলাকার সড়ক এটি। শুধু সড়ক নয়, এটা ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল ব্যস্ত মহাসড়কেরও অংশ। বড় বড় গর্তে ভরা সড়কটিতে এখনও পানি জমে আছে। একেবারে চলাচলের অযোগ্য এই সড়কটি অভিজাত এলাকা উত্তরার বাসিন্দাদের প্রধান সমস্যা। স্থানীয়রা জানান, গেলো বর্ষার শুরু থেকেই আব্দুল্লাহপুর থেকে উত্তরা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পেরিয়ে আরও কিছু সামনের অংশজুড়ে সড়কটির এই বেহাল অবস্থা। যানবাহনের চাপে খানাখন্দ এখন বড় বড় গর্তে রুপ নিয়েছে। একই অবস্থা বিমানবন্দর রেলস্টেশনের সামনের সড়কেরও। খানাখন্দে ভরা এই সড়কটিও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শুধু উত্তরা নয়, রাজধানীজুড়ে সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। প্রধান সড়ক থেকে অলি-গলি পর্যন্ত খানাখন্দে ভরা। এর সাথে খোঁড়াখুঁড়িতো আছেই। এসব সড়কে যানবাহনের ধীর গতিতে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। বাড়ছে ভোগান্তি।
দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রাথমিক হিসাব মতে, রাজধানীর ৬’শ কিলোমিটারের বেশি সড়কের অবস্থা খারাপ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেহাল ছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীন মালিবাগ থেকে রামপুরা ব্রিজ হয়ে বাড্ডা পর্যন্ত সড়ক। এলজিইডি ফ্লাইওভারের সুবাদে মালিবাগ থেকে রামপুরা পর্যন্ত সড়কটি সংস্কার করেছে। তবে মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে এখনও কিছু অংশ খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কুদরতুল্লাহ গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, উত্তরার সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। আর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সড়কগুলো মেরামতের কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অগ্রাধিকারভিত্তিতে মেরামত করা হচ্ছে। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ইনশাল্লাহ আগামী ডিসেম্বরের পর উত্তর সিটি কর্পোরেশনে কোনো খারাপ সড়ক থাকবে না। উত্তরার সড়ক সম্পর্কে জানার জন্য সড়ক ও জনপথ ঢাকা সার্কেলের সুপারিনটেন্ডডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সবুজ উদ্দিন খানের কাছে ফোনে জানতে চাইলে তিনি এক ঘণ্টা পরে ফোন করতে বলেন। কিন্তু এক ঘণ্টা পরে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেছেন, আমাদের মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। মেরামতের পাশাপাশি নতুন করেও সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী দু’মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
অভিজাত এলাকা উত্তরা দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাড়িগুলো রাজধানীতে প্রবেশ করে। অথচ ঢাকার প্রবেশ আব্দুল্লাহপুর থেকে রাজউক স্কুল ও কলেজের সামনের সড়কটি একেবারে চলাচলের অযোগ্য। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের বর্ষার শুরুতে প্রথমে সড়কটিতে ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এরপর সেগুলোতে পানি জমে থাকায় গর্তগুলো বড় আকার ধারন করে। এ অবস্থায় এই রাস্তার উপর দিয়ে যানবাহন চলতে থাকায় সড়কের অস্থিত্বই বিলীন হয়ে গেছে। এখন কাদা পানিতে একাকার। ভাঙতে ভাঙতে পুরো রাস্তাটি ভেঙ্গে গেছে। যেটুকু বাকী আছে সেগুলো দিয়ে রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। শুধু এই সড়ক নয়, বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাহপুরের দিকে যেতে রাস্তার উপর গর্ত করে ফেলে রাখা হয়েছে দিনের পর দিন। উত্তরা গোলচত্বর এলাকায় সড়কের উপরে বিশাল গর্তের সাথে তিনটি মোটা রডও উপরের দিকে উঠে আছে। পাশে ড্রেনেজের পাইপ পড়ে আছে। ভুক্তভোগিরা জানান, একটা মহাসড়কে এমনভাবে গর্ত ও রড থাকা বিপদজনক। রাতের অন্ধকারে চলতে গিয়ে একটু অসাবধান হলেই ঘটে যেতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, কিছুদিন আগে মহাসড়ক কেটে ড্রেনের লাইনের পাইপ বসানো হয়েছে। কিন্তু ড্রেনেজের মুখগুলো রাস্তার চেয়ে উঁচু করা হয়েছে। চলতে গিয়ে গাড়িগুলো ওই সব উঁচু ঢাকনায় প্রায় হোঁচট খায়। ছোট গাড়িগুলো উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। বেহাল সড়ক দেখা গেছে বিমান বন্দর রেলস্টেশনের সামনেও। মূল সড়ক থেকে যে শাখা সড়কটি বিমানবন্দর রেল স্টেশনের দিকে ঢুকছে সেটি দেখলেও মনে হবে না এটি আন্তর্জাতিক একটি বিমান বন্দরের সামনের অংশ। খানাখন্দে ভরা সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে আছে বহুদিন ধরে। জানতে চাইলে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, মহাখালী থেকে উত্তরা হয়ে যে সড়কটি গাজীপুরের দিকে গেছে সেটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ)। এর সাথে সংযুক্ত সার্ভিস রোডগুলোও সওজের আওতাধীন। অভিজাত এলাকা উত্তরা ভিতরের সড়কগুলোরও একই অবস্থা। উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে অনেক রাস্তা বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। কোনো কোনো সড়কে প্রাইভেট কার তো দূরের কথা, রিকশাও যেতে চায় না। অথচ দুই সন্তানকে নিয়ে চলাচলের অযোগ্য সড়ক দিয়েই তাকে নিয়মিত স্কুলে যেতে হয়। পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের অবস্থা আরো করুণ বলে জানান ওই ভুক্তভোগি। সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে উত্তরে ৩৫০ কিলোমিটার এবং দক্ষিণে ১৫০ কিলোমিটার সড়ক চলাচলের অযোগ্য। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য এলাকাগুলো হলো, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড, আলাউদ্দিন রোড, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, দনিয়া, রাজারবাগ, শান্তিনগর, রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁও, বাসাবো, মিরপুরের কালশী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ১২ নম্বর, মানিকদী, মুগদা ও বাড্ডা এলাকা। বেশির ভাগ এলাকায় পিচ ঢালাই, ইট, খোয়া উঠে মাটি বেরিয়ে এসেছে। কোনো কোনো এলাকার সড়কে আবার মাটিও সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আবার কোনো কোনো এলাকার সড়কের মাঝখানে থাকা ম্যানহোলগুলো কোথাও খোলা, কোথাও আবার উঁচু-নিচু হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে রামপুরা টেলিভিশন ভবন সংলগ্ন থেকে বনশ্রী আবাসিক এলাকায় সড়কটি একেবারে অচল হয়ে গেছে। বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা সারোয়ার মোর্শেদ জানান, আবাসিক এলাকা ঘেঁষা হলেও এ সড়ক দিয়ে সব ধরনের ভারি যানবাহন চলাচল করে। অতি বৃষ্টিতে এই সড়ক ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে সংস্কার করা হলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই তা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়কের মাঝখান ভাঙ্গা। এছাড়া কিছু কিছু সড়ক রয়েছে যার সম্পূর্ণটাই ভাঙ্গা। পাড়া- মহল্লার সড়কের অবস্থা বেশি খারাপ। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সচিবালয়ের পাশে পল্টন থেকে প্রেসসক্লাবের দিকে যেতে বড় বড় গর্ত রয়েছে। একই সাথে রাস্তার পিচ উঠে ছোট ছোট গর্ত তৈরী হয়েছে। কমলাপুর স্টেডিয়াম থেকে রেল স্টেশন পর্যন্ত সড়কটিও ভেঙ্গে একাকার হতে চলেছে। এমনই অবস্থা রাজধানীর শাহবাগ থেকে ফার্মগেট সড়কের। মৎস্য ভবন মোড় থেকে সায়েন্সল্যাব মোড়, নিউ মার্কেট থেকে গাবতলী সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। এমনকি সড়কের মাঝের বড় বড় গর্তের কারণে যানবাহনকে বারবার সাপের মতো চলতে হচ্ছে। অন্যদিকে, মুগদা বিশ্ব রোড থেকে মান্ডা সড়কে পিচ উঠে নিচের ইট সরে মাটি বেরিয়ে গেছে। একই অবস্থা খিলগাঁও থেকে গোঁড়ানের রাস্তার। টিকাটুলি, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গোপীবাগ এলাকার মহল্লার রাস্তাগুলোর নাজুক অবস্থা। মহাখালী বাসস্টান্ড থেকে সাত রাস্তা মোড়টি ইতোমধ্যে মেরামত করা হয়েছে বলে জানান উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। তিনি বলেন, গাবতলী থেকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর পর্যন্ত রাস্তাটিও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কগুলো সাধারণত মানসম্মতভাবে মেরামত করা হয় না। তাড়াহুড়া করে জোড়াতালি দিয়ে কাজ করা হয়। তার উপর রাজধানীর সড়কগুলো সাধারণত ১০ থেকে ১৫ টন ওজনবাহী গাড়ি চলাচলের জন্য তৈরী করা হয়। কিন্তু চলাচল করে ৩০-৪০ টন ওজনের গাড়ি। এ কারণে সেগুলো তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তাগুলো মান বজায় রেখে সঠিকভাবে মেরামত করা হলে আরও কয়েক বছর চলতো। কিন্তু ঢাকার অধিকাংশ রাস্তাই নির্মাণ করার পরের বছরই ভেঙ্গে একাকার হয়ে যায়।



 

Show all comments
  • রফিকুল ইসলাম ৩ নভেম্বর, ২০১৭, ৩:০১ এএম says : 0
    আমাদের মন্ত্রী মহোদয় সাহেব কী এগুলো দেখেন না?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ