গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
![img_img-1720470937](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678211639_df.jpg)
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
রাজধানীর কাকরাইলে মা-ছেলে খুনের ১২ঘন্টার মধ্যে বাড্ডায় বাবা ও মেয়ে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে বাড্ডার ময়নারবাগ কবরস্থান রোডের একটি বাড়ি থেকে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে। নিহতরা হলেন, জামিল (৩৮) ও মেয়ে নুসরাত (৯)। জামিল পেশায় পাইভেটকার চালক। এ ঘটনায় পুলিশ জামিলের স্ত্রী আজরিনা বেগমকে আটক করেছে। পুলিশ ধারনা করছে, ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করে জামিলকে খুন করা হয়েছে। আর এ ঘটনা দেখে ফেলায় মেয়ে নুসরাতকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের স্ত্রী আরজিনা বেগমের পরকীয়া প্রেমের কারনে হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে পুলিশ ধারনা করছে। জানা গেছে, বাড্ডার ময়নারবাগের ৩০৬ নম্বরস্থ তৃতীয় তলার বাড়ির ছাদে চিলেকোঠার ভাড়া বাসায় খুন করা হয় বাবা-মেয়েকে। গত বছরের অক্টোবর থেকে পেশায় গাড়িচালক জামিল স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে এ বাসায় থাকতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের বনগ্রাম এলাকায়। ঘটনার বর্ণনায় জামিলের গ্রামের প্রতিবেশী ও ময়নারবাগের বাসিন্দা তুহিন বলেন, গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলে লোকজনকে বলতে শুনি, জামিলকে মেরে ফেলেছে। তারপর জামিলের ঘরে প্রবেশ করে দেখি, খাটের উপর জামিলের মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে এবং নুসরাতের মুখের উপর একটি বালিশ রাখা। তাদের মাঝখানে জামিলের ছেলে আলভি (৫) বসা অবস্থায় ছিল। তাদের পাশে একটি কাঠের টুকরা পড়ে ছিল, কিন্তু কোনো ধারালো অস্ত্র দেখিনি। জামিলের স্ত্রী আরজিনা রুমের বাইরে ছাদের এক কোনায় বসে নিচুস্বরে কাঁদছিলেন। তার শরীরে রক্ত এবং হাতে আঁচড়ের দাগ ছিল। বাসার বিপরীত দিকে মসজিদ দেখিয়ে তিনি বলেন, গতকাল ভোরবেলা মানুষজন নামাজ পড়তে এসে এই বাসা থেকে হালকা কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিলেন। এরপর তারা বাড়িওয়ালাকে বললে বাড়িওয়ালার স্ত্রী ছাদে গিয়ে এ অবস্থা দেখলে ঘটনা জানাজানি হয়। তিনি বলেন, এ অবস্থা দেখে আমি জামিল ভাইয়ের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম- কিভাবে হল? তিনি একবার বলেন, ডাকাত আসছিল। আরেকবার বলেন, রাত ১১টায় কয়েকজন লোক এসে তার হাত-পা বেঁধে তার স্বামী ও মেয়েকে খুন করে চলে গেছে। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কাউকে ডাকেননি কেন? আপনাকে বাঁধলে কে খুলে দিছে? তখন তিনি বলেন, মুখ চেপে ধরছিল, কিন্তু তার হাত-পা কে খুলে দিয়েছে কিছু বলেননি। আলভিকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম-কি হয়েছে, সে বলে- আব্বু আর আপু ঘুমাচ্ছে। পরে পুলিশ এসে আরজিনা ও ছেলে আলভীকে নিয়ে যায়। জামিলের বড়ভাই দুলাল শেখ বলেন, আমরা সাত ভাই একবোন। জামিল ছিলো পঞ্চম। এর মধ্যে চার ভাই আমরা এই এলাকাতেই থাকি। ১০ দিন আগে জামিল নতুন চাকরিতে জয়েন করেছে। প্রায় ১২ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু গত ৭-৮ বছর ধরে তাদের মধ্যে ঝামেলা ছিল। গত কোরবানি ঈদের সময় তার স্ত্রী দুই মাস বাবার বাড়িতে ছিল। তারপর থেকে তার স্ত্রীকে মোবাইল ব্যবহার করতে দিতো না জামিল। বড় ভাই ইবু গত বুধবার রাত ১০টার দিকে জামিলের বাসা থেকে ভাত খেয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, আমি আসার সময় দেখলাম তারা সবাই এবং পাশের রুমের সাবলেট ভাড়াটিয়া টিভি দেখছে। এক লোক তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে পাশের রুমে জামিলের সঙ্গে সাবলেট থাকতো। কিন্তু সকালে গিয়ে তাদের রুম তালা মারা দেখেছি। জামিলের স্ত্রী এ বিষয়ে আমাদের বলেন, রাত ১১টার দিকে বাড়ি থেকে ফোন আসায় তারা চলে গেছে। তিনি বলেন, বাসার মালিক রাত ১০টায় বাড়ির গেট বন্ধ করে দেন। ভাড়াটিয়াদের কাছে চাবি থাকে, ভেতর থেকে কেউ না খুললে বাইরের মানুষ ভেতরে আসা হওয়া সম্ভব না। ঘটনার পরে জামিলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, নিহত জামিলের মাথায় ধারালো অস্ত্রের দাগ ছিল। আর মেয়েটাকে সম্ভবত শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ঘরের ভেতর থেকে কেউ সহযোগিতা না করলে এ হত্যাকান্ড কঠিন। পারিবারিক কলহ বা সম্পর্কের টানাপড়েন থেকে এ হত্যাকান্ড হতে পারে। তার বাসার পাশে সাবলেটরা সকাল থেকে নিখোঁজ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। তাদের বিষয়ে বাড়িওয়ালাও সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেন নি। তিনি বলেন, তদন্তে প্রযুক্তির সহায়তাও নেয়া হচ্ছে। জামিলের স্ত্রী আরজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুততম সময়ে আমরা এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারব। বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী জানান, নিহতদের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বাবাকে পিটিয়ে ও মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়, তবে প্রাথমিকভাবে পরকীয়া ও আর্থিক কারণ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত চলছে। থানা হেফাজতে নিয়ে ঘটনা সম্পর্কে নিহতের স্ত্রী আরজিনা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।