Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মগবাজার- মৌচাক ফ্লাইওভার চালুর পর রাজধানীর যান জট কমছে

আগামী এক মাস পর যানজট আরো কমবে : এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজধানী বাসীর স্বপ্নের মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার চালু করার পরে রাজধানীর যান জট অকেটায় কমছে। যা আছে তা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সাথে সমন্বয় করে আগামী মাসের মধ্যে সমাধন করা হবে বলে জানিয়েছেন এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী। গতকাল বুধবার মগবাজার- মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রধান প্রকৌশী বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীবাসীর বহুল আকাঙ্খিত মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাইওভার জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর পরে নতুন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারটি দেখতে রাজধানীরসহ বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ ভীর জমায়। সে কারণে দুই একদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যান জটের সৃষ্ঠি হয়। অথচ কিছু পত্রিকায় বলা হয় এটি আরো যান জট বৃদ্ধি করেছে আসলে সেটি সঠিক নয়। এই ফ্লাইওভার তিন অংশে বিভক্ত এ ফ্লাইওভারের রমনা থেকে তেজগাঁও থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এবং ইস্কাটন থেকে ওয়্যারলেস পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ আগেই খুলে দেওয়া হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, বাংলা মটোরে কিছু যানজট হবে কারণ সেটা ভিআইপ সড়ক।এখানে আমাদের কিছুই করার নাই। তিনি বলেন. ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটারের এই ফ্লাইওভার। রাজধানীর সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ ও মগবাজার রেলক্রসিং এলাকায় নির্বিঘেœ যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এর ফলে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে এবং এসব এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট ২০০৫ সালে যান চলাচল ব্যবস্থা নিয়ে একটি সমীক্ষা করে। সেই সমীক্ষায় ঢাকা মহানগরীর ২০টি স্থানে ফ্লাইওভার, ইন্টারসেকশন, আন্ডারপাস, বাসস্ট্যান্ড, বাস টার্মিনাল, পার্কিং এরিয়া নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। পরে ২০০০ সালে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে যৌথ বিনিয়োগে ফ্লাইওভার নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করা হয়। তখনই মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য কুয়েত সরকার দুই লাখ কুয়েতি দিনার অনুদানের প্রতিশ্রæতি দেয়। কিন্তু ২০০৭ সালে কুয়েত সরকার ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিবর্তে শিকলবাহায় ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এতে করে ফ্লাইওভারের নির্মাণ প্রকল্পে ভাটা পড়ে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে আবার এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেক সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন পায়। ওই বছরই এর নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু ২০১০-১১ অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পরে তা সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সে বছরও কাজ শুরু করতে পারেনি সরকার। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে কাজ শুরু করে সময়সীমা বাড়ানো হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়েও কাজ শেষ করতে না পারায় সময়সীমা বাড়িয়ে এ বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। জুনে আবার সময় বাড়ানো হয়। এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজে সার্বক্ষণিক তত্ত¡াবধান করেছেন।
গতকাল মকবাজার- মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উমুক্ত হওয়ার খবরে অনেকেই আসছেন এই ফ্লাইওভার দেখতে। আশপাশের বাসা বাড়ীর ছাদে উৎসুক মানুষের ভিড় এখনো লেগেই আছে। যদিও চার লেনের ফ্লাইওভারটি এক স্থান থেকে পুরোপুরি দেখা সম্ভব নয়। বিশাল এই ফ্লাইওভার ছয়টি মোড় অতিক্রম করেছে। এগুলো হলো সাতরাস্তা, বিএফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর ও মালিবাগ মোড়। এর মধ্যে মগবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজারে রেললাইন অতিক্রম করেছে এই ফ্লাইওভার। বাস চালক ফরিদুল হাসান বলেন,রাজার বাগ থেকে বাংলামটর যেতে যেখানে ২/৩ ঘন্টা লাগতো সেখানে এটি চালু হয়োর পরে এখন সময় লাগে মাত্র ১০মিনিট। রামপুর এলাকার বাসিন্দার কাদের আলী (৪৫) জানান. রামপুরা থেকে কাকরাইল যেতে সময় লাগতে তিনঘন্টা সেখানে এখন সময় লাগে ৭থেকে ৮মিনিট।
তিন ভাগে বিভক্ত এই ফ্লাইওভারের একটি অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। এটি নির্মাণ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। গত বছরের মার্চ মাসে এ অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। একই বছর ১৫ সেপ্টেম্বর নিউ ইস্কাটন থেকে মৌচাক পর্যন্ত এক দিকের অংশ খুলে দেয়া হয়। এই অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন। তৃতীয় অংশ এফডিসি মোড় থেকে কারওয়ান বাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় চলতি বছরের ১৭ মে। এই অংশও তৈরি করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। সর্বশেষ মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশ খুলে দেয়ার মাধ্যমে পুরো ফ্লাইওভারটি চালু হয়েছে। শেষাংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা দিয়েছে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)। দেশে এখন পর্যন্ত যে কটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারটি দৈর্ঘ্যে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প ২০১১ সালে একনেকে চূড়ান্ত হয়। ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৯ কিলোমিটার লম্বা ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফ্লাইওভার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ