Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ডুবি ৭ জনের লাশ উদ্ধার

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ থেকে : | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। তারা আসছেন এবার নির্যাতন নয়, ক্ষুধার জ্বালায়। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে রাতের আঁধারে এপারে ঢুকছে। সীমান্তের নাফ নদীর শাহপরীরদ্বীপের দক্ষিণপাড়া, জালিয়াপাড়া, ঘোলারচরসহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু এ পারে প্রবেশ করেছেন। ওই পয়েন্টগুলোতে প্রশাসনের কড়াকড়ির ফলে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে টেকনাফ ও উখিয়ায় পৃথক দু’টি নৌকা ডুবির ঘটনায় ৭ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ৭ জনের মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। অন্যন্যদের নাম পাওয়া যায়নি। এরা হলেন, মিয়ানমারের বুচিডং ইয়ংচং এলাকার মোঃ ইসলামের পুত্র এনামুল হাসান (৪), আলী জোহারের মেয়ে মিনারা বেগম (৫), আবুল হাশেমের স্ত্রী জুহুরা বেগম (৬০)।
বেঁচে যাওয়া জাবেদ নামে এক রোহিঙ্গা জানান, মিয়ানমার সীমান্তের দমংখালী থেকে রাতের বেলায় এক নৌকার ৩০-৩৫ জনের নারী-পুরুষ ও শিশু এপারে আসতে পাড়ি দেয়। প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়ে রাত ১২টার দিকে টেকনাফ উপক‚লে পৌঁছে। মহেশখালীয়া পাড়ার সৈকত পয়েন্ট দিয়ে রাতের আঁধারে ক‚লে ভিড়ার সময় বড় ঢেউয়ের কবলে পড়লে নৌকা ডুবির এ ঘটনা ঘটে। এসময় নৌকায় থাকা রোহিঙ্গারা সাঁতরিয়ে ক‚লে উঠলেও দুই শিশুর মৃত্যু ঘটে এবং এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় কয়েকজন শিশুর অবস্থা বেগতিক হলে টেকনাফ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বুছিডংয়ের রহিমা নামে এক রোহিঙ্গা নারী জানান, মিয়ানমারের সীমান্তের ধংখালীর বালুচরে নৌকার জন্য অপেক্ষায় থেকে এক মাস একদিন পর এপারে আসতে পেরেছে। সেখানে আরো শত শত রোহিঙ্গারা তাবু গেড়ে নৌকার অপেক্ষায় রয়েছে। সে আরো জানান, খাদ্যের অভাবে ক্ষুধার জ্বালায় এপারে আসছে। তার স্বামীও তাকে ছেড়ে কোথায় চলে গেছে জানেনা। আত্মীয় স্বজনদের সাথে ২ ছেলেকে নিয়ে তাদের পিছু নিয়ে দেশ ত্যাগ করেছে। এপারে এসে ক‚লে ভিড়ার সময় ঢেউর কবলে পড়ে নৌকা থেকে ছিটকে তাহার এক ভাইপোর ছেলের মৃত্যু হয়েছে ও তাহার এক ছেলেকে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকে বলেছেন, মিয়ানমারে নির্যাতন এখনো কমেনি। তারা নির্যাতনের ধরণ ও কৌশল পাল্টিয়েছে মাত্র। পালিয়ে আসা বেশীর ভাগ রোহিঙ্গা রাখাইনের বুছিডং ও রাছিডং থানার বাসিন্দা।
টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান মিয়া জানান, রাতে একটি রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ২ শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা এবং আরো ৫ জন নিখোঁজ রয়েছে বলেও জানান।
বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাওঃ আজিজ উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলারটি বাহারছড়ার উপক‚ল দিয়ে অনুপ্রবেশকালে কোস্টগার্ড বাধা প্রদান করেন। কোস্টগার্ডের ধাওয়া খেয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই ট্রলারটি ইনানীর দিকে চলে যায়।
বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কাঞ্চন শামলাপুর পয়েন্ট থেকে ৩ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধারের সতত্য নিশ্চিত করেছেন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের লাশ উদ্ধার ও ৩২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আরও ছয়জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২৯ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাবাহী ২৮টি নৌকাডুবির ঘটনায় প্রায় ২শ’ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ