পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগুনে ভস্মীভ‚ত রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রামগুলোর ছবি ও লাখ লাখ মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য করার ঘটনা মিয়ানমারের বিকাশমান পর্যটন শিল্পে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর জাতিগত নিধন অভিযান বিশ্বব্যাপী সৃষ্টি করেছে ব্যাপক ক্ষোভ। তার পরিণতিতে পর্যটকরা একের পর এক তাদের মিয়ানমার ভ্রমণ বাতিল করছেন।
গত দু’মাসে ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। উদ্বাস্তরা সবাই সৈন্য ও তাদের দোসর উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের নির্মম হত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। এ সব নিষ্ঠুরতার লোমহর্ষক বিবরণ বিশ^ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর মিয়ানমারের পর্যটন শিল্পে ধস নেমেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে মিয়ানমারের বিকাশমান পর্যটন খাতে সেনাশাসনের যুগের মত ফের অন্ধকার নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আগস্ট মাস থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম বিরোধী সেনা অভিযান শুরু হয়। তারপর থেকেই পর্যটন পরিচালনাকারীরা পর্যটকদের মিয়ানমার ভ্রমণসূচি বাতিলের সম্মুখীন হন। মিয়ানমারে পর্যটনের সেরা সময় শুরু হয় অক্টোবর মাস থেকে। নিউ ফ্যান্টাস্টিক এশিয়া ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর-এর তুন তুন নাইং বলেন, রাখাইন রাজ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দেশে যে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে তার ফলে অক্টোবর ও নভেম্বরে প্রায় সকল ভ্রমণসূচিই পর্যটকরা বাতিল করেছেন। তিনি বলেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের পর্যটকরা ভ্রমণ বাতিলের কারণ হিসেবে নিরাপত্তার কথা বলেছেন। তবে কিছু ইউরোপীয় পরিষ্কারভাবে বলেচেন যে মানবিক পরিস্থিতির কারণেই তারা মিয়ানমারকে বর্জন করেছেন।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের জন্য মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু কির উপর চাপ সৃষ্টি করলেও তিনি এ পর্যন্ত এ হত্যাকান্ডের নিন্দা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর পরিচালক লুই সারবনু রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাথে মিয়ানমারের আচরণকে জাতিগত নিধন অভিযান বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সারবনু বলেন, মিয়ানমারকে তাদের জাতিগত নিধন অভিযান বন্ধে বাধ্য করার জন্য জাতিসংঘের শক্তিশালী পদক্ষেপ প্রয়োজন।
ঔপনিবেশিক যুগের স্থাপত্য সম্বলিত ব্যস্ত শহর ইয়াঙ্গনে মিয়ানমারের গর্ব বলে পরিচিত শোয়েডাগন প্যাগোডা পরিদর্শনে আসা কিছু বিদেশীকে এখনো দেখা যায়। তবে তারা স্বীকার করেন যে মিয়ানমারের চলমান সংকট তাদের অবকাশ যাপনের উপর কালোছায়া ফেলেছে।
পুরো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরাসি মহিলা পর্যটক ক্রিস্টাইন বলেন, দেশটি যে অবস্থায় পৌঁছেছে তা দুঃখজনক। আমাদের গাইড বলেছে যে মুসলমানরা বিপজ্জনক ও তারা বর্মী নয়।
কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিও মিয়ানমারের সাথে দূরত্ব বজায় রাখছেন। শরতে ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স চার্লস ও তার স্ত্রী ক্যামিলার এশিয়া সফরের কর্মসূচি রয়েছে। তাদের সফর সূচি থেকে মিয়ানমারকে বাদ রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন সেনা শাসনে থাকার সময় মিয়ানমারের শাসকদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার দমনের গুরুতর অভিযোগ ছিল। সেনা শাসকদের পকেট যাতে ভারি না হয় সে জন্য বহু পর্যটক মিয়ানমার সফর পরিহার করতেন। এখন রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের পর্যটনকে সেনা শাসকদের সেই অন্ধকার দিনগুলোতে নিয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০১১ সালে আংশিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলে মিয়ানমারের পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়। এ পদক্ষেপের কারণে পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। মিয়ানমারে পর্যটকরা ভিড় জমাতে শুরু করেন। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যটন অবকাঠামো বিকশিত হতে শুরু করে।
২০১৭ সালের প্রথম অর্ধাংশে আগের বছরের চেয়ে ২২ শতাংশ বেশি পর্যক আগমন ঘটে। মিয়ানমারের পর্যটন মন্ত্রণালয় ২০২০ সাল নাগাদ পর্যটক সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে।
কিন্তু আগস্টের শেষ সপ্তাহে রাখাইনে সহিংসতার আগুন জ¦লে ওঠে। রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা কবলিত এলাকা থেকে কয়েক ঘন্টার দূরত্বে এ রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী ব্রাউক উ অবস্থিত। সেখানে রয়েছে সমৃদ্ধ প্রত্মতাত্তি¡ক নিদর্শন। স্থানটিতে আগে পযটকদের ভিড় লেগে থাকত। সহিংসতা শুরুর দু’মাস পর স্থানীয়রা জানান ব্রাউক উ এখন পর্যটক শূন্য। গাইড অং সোয়ে মিন্ট বলেন, পর্যটন যাদের জীবিকা উৎস ছিল তাদের এখন কোনো কাজ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।