Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়াকে দেখতে লাখো মানুষের অপেক্ষা

ফারুক হোসাইন কক্সবাজারে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দুপাশে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি, হাতে হাতে ব্যানার, ফেস্টুন, দলের প্রতীক ধানের শীষ, শীর্ষ নেতাদের ছবি, ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারবাসী। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি শিশু-কিশোর, সব বয়সী নারী-পূরুষ, এমনকি বৃদ্ধরাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছেন বিএনপি প্রধানকে এক পলক দেখার জন্য। মহাসড়কের পাশাপাশি ভবনের ছাদ, ঘরের জানালা, রিক্সা-ভ্যান, গাড়ির ভেতরে ও ছাদে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। বেগম খালেদা জিয়াও তাদেরকে হতাশ করেননি। মাত্র তিন ঘণ্টার সড়ক তিনি পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ৮ ঘণ্টায়। অপেক্ষমান নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অভ্যর্থনার জবাব দিয়েছেন। হাত নেড়ে নেড়ে তাদের অভিবাদনও জানিয়েছেন। ১৫৫ কিলোমিটারের পুরো পথেই দেখা যায় একই চিত্র।
নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেখতে এবং তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর পথে পথে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক এবং উৎসব মুখর। প্রিয় নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে নেতারা রাস্তায় এনেছেন হাতি, সাজিয়েছেন ব্রিজ আর ছিটিয়েছেন ফুলের পাপড়ি। খালেদা জিয়াকে এক নজর দেখতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ধানের শীষ ও ব্যানার হাতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেছেন রাস্তার পাশে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দুইপাশে ও পাশের ভবনগুলোতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মানুষের বিপুল ভীড়ের কারণে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মাত্র ১৫৫ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে ৮ ঘন্টা সময় লাগে গাড়িবহরের। যাত্রাপথের পরিবেশ দেখে মনেই হয়নি গত শনিবার ফেনীতে এই গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে মানুষের এমন বিপুল উপস্থিতিকে অভূতপূর্ব বলছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলছেন, মানুষের এ ভালোবাসা ও নেতাকর্মীদের এমন সমর্থনে উজ্জীবিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। যাত্রাপথে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে এবং হাত নাড়িয়ে অভিবাদনের জবাব দিয়েছেন খালেদা জিয়া। চলতি পথে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ঠাকুরদীঘি এলাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে বহনকারী গাড়ির চাকায় পেরেক ঢুকলে বহর থামিয়ে চাকা পরিবর্তন করা হয়। তবে এতে কোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে প্রিয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে রোববার সকালেই চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জড়ো হন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। সার্কিট হাউজ থেকে বেলা ১২টার সময় কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সামনে হাজার হাজার নেতাকর্মী মুহুর্মূহু শ্লো্গানে তাকে স্বাগত জানান। নগরীর কাজির দেউরি, জুবলী রোড, নিউমার্কেট, ফিরিঙ্গিবাজার ও কর্ণফুলী সেতুর উত্তরপ্রান্ত পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশে ব্যানার ফেস্টুনসহ দাঁড়িয়ে নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানান চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়াকে বরণ করতে ধানের শীষ হাতে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর উপর অবস্থান নেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের ভীড়ের কারণে কর্ণফুলী সেতু পার হতেই গাড়িবহরের কেটে যায় আধঘন্টার বেশি সময়। কর্ণফুলী ব্রিজের দক্ষিণপ্রান্ত থেকে মইজ্জার টেক হয়ে ত্রিমুনা রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রতিযোগিতা করে শোডাউন দেন সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক এমপি সরওয়ার জামাল নিজাম ও বিএনপি নেতা লিয়াকত আলীর সমর্থক নেতাকর্মীরা। পটিয়ার ভেল্লাপাড়া ব্রিজের দৃশ্যটি ছিল অন্যরকম। হাতি, ব্যান্ডপার্টি ও হলুদ শাড়ি পরে নারীরা কুলো থেকে ফুল ছিটিয়ে খালেদা জিয়ার বহরকে বরণ করেন। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এনামুল হকের আয়োজনে পুরো ব্রিজটি সাজানো হয জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিশাল আকারের ছবি, কাঁচাফুলের মালা দিয়ে। পটিয়ার শান্তির হাটে সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল, মনসার টেকে সাবেক মন্ত্রী মোরশেদ খান, এরশাদ উল্লাহর অনুসারী নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ বিপুল উপস্থিতির মাধ্যমে গাড়িবহরকে স্বাগত জানায়। পটিয়া পৌরসভায় সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া, চন্দনাইশের রওশনহাটে ডা. মহসিন জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরা ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও ধানের শীষ নিয়ে নেত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। চন্দনাইশের গাছবাড়িয়ায় অবস্থান নিয়ে জোটনেত্রীকে স্বাগত জানান শরিক দল এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের অনুসারীরা। দোহাজারি শঙ্খনদী ব্রিজের দুইপারে বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে শোডাউন দেন ডা. মহসিন জিল্লুর রহমান ও শফিকুল ইসলাম রাহী। সাতকানিয়ার কেরানীহাটে বান্দরবান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাচিং প্রæ জেরি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিএনপি নেতা প্রফেসর শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও মজিবুর রহমান, লোহাগাড়া বাসস্টেশনে নাজমুল মোস্তফা আমিন ও ফৌজুল কবির ফজলুর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক মানুষ খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। আজিজনগর শিল্পাঞ্চলে বান্দরবান জেলা বিএনপির সভাপতি ম্যা মা চিং, আজিজনগর ব্রিকফিল্ড, হারবাং, বানিয়ারছড়া ও চিরিঙ্গা পৌরসভায় বিপুল শোডাউনের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানান ভারতে অবস্থানরত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। ঈদগাঁও স্টেশন থেকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরকে শতাধিক মোটর সাইকেলের স্কোয়াড করে নিরাপদে কক্সবাজার পৌছে দেন সাবেক এমপি লুৎফর রহমান কাজলের অনুসারী নেতাকর্মীরা। পথে জোয়ারিয়ানালা, পানিছড়া, রামু বিশ্বরোড, খরুলিয়া, লিংক রোড, কলাতলী ডলফিন মোড় ও সার্কিট হাউসে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান। রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার সার্কিট হাউসে পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সেখানে দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে জাতিগত নির্মূল ও গণহত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণে আজ উখিয়ার বালুখালী, হাকিমপাড়া ও ময়নার ঘোনা যাবেন খালেদা জিয়া। বিএনপির মহাসচিব জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া তার এই সফরে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে ত্রাণ দেবেন। সন্ধ্যায় কক্সবাজার ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই ফিরতি পথ ধরবেন তিনি। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রাত্রীযাপন শেষে আগামীকাল ঢাকা ফিরবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।



 

Show all comments
  • আসিফ ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ২:৫২ এএম says : 0
    সরকারের বুঝা উচিত এই হামলা বেগম জিয়াকে আরো জনপ্রিয় করে তুলছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২৫ অক্টোবর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ