Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কিলার মিলারে রক্তাক্ত বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 হেনড্রিক্সের শর্ট বলে সাইফ উদ্দিনের কাট, পয়েন্টে ক্যাচ নিলেন আমলা। ২৩ রানে আউট হলেন সাইফ উদ্দিন। তর সাথে সাথে ১৮.৩ ওভারে বাংলাদেশও গুটিয়ে যায় ১৪১ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকায় আরেকটি পরাজয় ৮৩ রানে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হারের তালিকায় এই হার থাকছে দুইয়ে। ২০০৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০২ রানের হারটিই কেবল এটির চেয়ে বাজে।

ম্যাচের প্রথম ভাগেই রানকে বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যান ডেভিড মিলার। দেখার ছিল রান তাড়ায় বাংলাদেশ কতটা রোমাঞ্চ উপহার দিতে পারে। কিন্তু হলো না কিছুই। আরেকটি বিবর্ণ পারফরম্যান্সে আরেকটি বড় হার। ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও বাংলাদেশের টপ-অর্ডার গুড়িয়ে যায় তাসের ঘরের মত। ইমরুল ৬, অধিনায়ক সাকিব ২, মুশফিকুর রহিম ২ ও সাব্বির ৫ ফেরেন রানে। ৪ উইকেটে ৩৭ রান নিয়েও ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি, দলীয় ৭২ রানে বিচ্ছিন্ন হলে মুখ থুবড়ে পড়ে লড়াইয়র চেষ্টা। ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৭ বলে ৪৪ রান করে আউট হন সৌম্য। বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হয়ে ২৪ রানে থামেন মাহমুদউল্লাহ। ৯ রানের বেশি করতে পারেননি লিটন কুমার দাসও। তাই ৯৮ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে হার নিশ্চিত করে ফেলে বাংলাদেশ।
এর আগে পচেফস্ট্রুমের সিনউইস পার্কে এক মিলার তাÐবেই শেষ হয় এক রক্তাক্ত সফর। উইকেটে গিয়েছিলেন দশম ওভারে। জীবন পেয়েছেন শূন্য রানে। আউট হতে পারতেন ২ রানে, ১৮ রানে। শেষ পর্যন্ত তিনিই তাÐব চালিয়ে করলেন সেঞ্চুরি! তাও আবার দ্রæততম! টি-টোয়েন্টিতে আগের ৫৬ ম্যাচে ছিল মোটে একটি ফিফটি। করেছিলেন অপরাজিত ৫৩। সেই মিলার গড়ে ফেললেন দ্রæততম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির রেকর্ড! স্বদেশি রিচার্ড লেভির ৪৫ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ডকে পেছনে ফেললেন অনায়াসেই। ৩৫ বলেই সেঞ্চুরি! ৭টি চারের পাশে ইনিংসে ৯টি ছক্কা। রেকর্ড গড়ে মিলার অপরাজিত থাকলেন ৩৬ বলে ১০১ রানে।
মিলারের টর্নেডো সেঞ্চুরির সঙ্গে হাশিম আমলার দুর্দান্ত ৮৫ রানের ইনিংস, দুইয়ের যোগফলে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ডও গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা- ৪ উইকেটে ২২৪! বাংলাদেশের বিপক্ষে এর আগে দুইশ রানের ইনিংস ছিল তিনটি। ২০১ ও ২০৩ করেছিল পাকিস্তান। ২০১৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের ২০৪ ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ। দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ অবশ্য এটি নয়। ২০১৫ সালে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তুলেছিল তারা ৬ উইকেটে ২৩৬। জবাবে একটি জয়ের খোঁজে নামা সাকিবের দল ধুঁকছে প্রোটিয়া বোলারদের সামনে। রিপোর্টটি লেখা পর্যন্ত (৭ ওভার শেষে) ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬০।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ১০ ওভার শেষে রান ছিল ৩ উইকেটে ৭৮। পরের ৫ ওভারে উঠেছে ৫৬ রান, মাত্র এক উইকেট খুইয়ে। আর শেষ ৫ ওভারে ৯০ রান! সেটিও সম্ভব হয়েছে খুনে মিলারের কল্যাণে। শুরুটা ছিল নড়বড়ে। কিন্তু যত সময় কাটালেন, ততই মিলার হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ফিফটি করলেন ২৩ বলেই। শূন্য রানে জীবন পেয়েছিলেন। ২ রানে তার তুলে দেওয়া বল পড়েছে তিন ফিল্ডারের মাঝে। ১৮ রানে বোল্ড হননি অল্পের জন্য। এরপর খেলেছেন দুর্দান্ত। পঞ্চাশ করতে মেরেছেন ৫টি চার, ৩টি ছক্কা।
এরপরের গল্পটা আরো ভয়ঙ্কর। এই দক্ষিণ আফ্রিকাতেই ওভারে ছয় ছক্কা দেখেছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। ২০০৭ টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপে স্টুয়ার্ট ব্রডের ওভারে যুবরাজ সিং মেরেছিলেন ৬টি ছক্কা। সেটি ছিল ডারবানে। এবার পচেফস্ট্রুমে খুব কাছে গেলেন মিলার। এক ওভারে মারলেন ৫টি ছক্কা! তরুণ সাইফ উদ্দিনের ওপর এই তাÐব চাললো মিলারের। ১৯তম ওভারের প্রথম ৫ বলেই মারেন ছক্কা। শেষ বলটি সাইফ উদ্দিন করেন অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে ফুল লেংথ। মিলার নিতে পারেন ১ রান। এক ওভারেই ৩১ রান!
তবে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল দারুণ। মুখোমুখি প্রথম বলেই সাকিবকে চার মেরেছিলেন ম্যাঙ্গালিসো মোসেলে। সেটি ছিল প্রথম ওভারের শেষ বল। নিজের পরের ওভারে সাকিব মেলে ধরলেন তার অভিজ্ঞতার ঝুলি। বোল্ড করে দিলেন মোসেলেকে। বলটি সাকিব করলেন অনেক ঝুলিয়ে। মোসেলে টাইমিং করতে পারলেন না ঠিক মত। পরের বলটি প্যাডল করতে গিয়ে ব্যর্থ। তৃতীয় বলে বোল্ড। একটু জোরের ওপর, উইথ দ্য আর্ম ভেতরে ঢোকা বল প্যাডে লেগে লাগল স্টাম্পে। সাকিবের পরের আঘাতটি আরো বড়। ওভারের প্রথম বলে বাজে ফিল্ডিংয়ে বাউন্ডারি। চতুর্থ বলে ক্যাচ মতো ছিল, দারুণ চেষ্টা করেও পারেনি লিটন দাস। শেষ বলে কাজ সারলেন সাকিব নিজেই। বোল্ড করে দিলেন জেপি ডুমিনিকে। আবারও একটু জোরের ওপর করা ফুল লেংথ বল। ডুমিনি সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড।
সাকিবের পথ ধরেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনও। আগের ম্যাচে নজর কেড়েছিলেন শেষের ওভারের বোলিংয়ে। তরুন এই পেস অলরাউন্ডার এবার প্রথম ওভারেই ধরলেন শিকার। সেটিও ‘বড় মাছ’। ফেরালেন বিপজ্জনক এবি ডি ভিলিয়ার্সকে। দারুণ গতিতে উড়িয়ে মেরেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। লং অফ সীমানায় ঝাঁপিয়ে ক্যাচটি নিয়েছেন ইমরুল কায়েস।
ওভারের প্রথম বলেই দারুণ এক ইয়র্কারে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন আমলাকে। এক বল পরে দারুণ এক ¯েøায়ারে আমলাকে ফিরিয়েই দিলেন সাইফ উদ্দিন। ¯েøায়ার বলটিকে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন আমলা। সীমানায় ক্যাচ নিয়েছেন সৌম্য। গত বছরের মার্চে কেপ টাউনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯৭ রানে অপরাজিত ছিলেন আমলা। এবারও সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত পারলেন না। ফিরলেন ৫১বলে ৮৫ রানে। ১১টি চারের পাশে ছক্কা একটি। বাংলাদেশের বোলারদের সাফল্য বলতে এতটুকুই।
প্রথম টেস্টের প্রথম সকালে টস জিতে নিষ্প্রাণ উইকেটে বোলিং নেওয়া দিয়ে যে দুঃস্বপ্নের শুরু, সফর জুড়ে বাংলাদেশ খাবি খেয়েছে সেই দুঃস্বপ্নের পাকেই। শেষ ম্যাচেও দল বের হতে পারল না সেই চক্কর থেকে। বরং মিলারের খুনে সেঞ্চুরি আর বড় হারে শেষটাও হয়ে ধাকল ভীষণ তেতো।



 

Show all comments
  • রাজা ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ১:০৬ পিএম says : 0
    আফ্রিকার বুতে ,,,,, যাকে পারে ছুতে,,,,,, তাকে বড়িয়ে দেয় রক্তাক্তে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ