পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পথে পথে সরকারদলীয় ক্যাডারদের হামলা ও বাধা উপেক্ষা করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে চট্টগামে পৌঁছেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আজ রোববার তিনি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করবেন। দলীয় নেত্রীকে স্বাগত জানাতে সকাল থেকে ঢাকা থেকে ফেনী পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে জড়ো হন বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। কিন্তু সরকারদলীয় অঙ্গ সংগঠনের ক্যাডাররা খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গীদের গাড়িবহরে হামলা চালায়। তাদের হামলায় বিএনপি নেতাকর্মীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ হামলায় কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনের গাড়ি ও গণপরিবহন ভাঙচুর করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবির সফর নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। কারো কারো মতে, এটি বিএনপির নির্বাচনপূর্ব শোডাউন। মূলত, বিএনপির নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতেই চেয়ারপারসন দীর্ঘ সড়কপথে টেকনাফ যাচ্ছেন। আবার কারো কারো বক্তব্য হচ্ছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বিদেশ সফরকালে সরকারদলীয় তথা আওয়ামী লীগের হাই-প্রোফাইলের অনেক নেতা বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। তখন কেউ কেউ বলেছিলেন, খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের পাশে না দাঁড়িয়ে বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছেন। খালেদা জিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ওইসব নেতিবাচক মন্তব্যের জবাব হয়েছে। বিএনপি সমর্থকরা বলছেন, সঠিক সময়েই খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করছেন। তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন। তিনি রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে সরকারকে সবসময় চাপ দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথা বলে আসছেন।
খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর প্রসঙ্গে গতকাল দুপুরে বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, দলীয় নেত্রীকে স্বাগত জানাতে কক্সবাজারের পথে প্রায় ৪০০ কিলোমিটারজুড়ে বিভিন্ন স্থানে তোরণ নির্মাণ করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তার মতে, খালেদা জিয়ার এ সফরের মধ্য দিয়ে পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলসহ সব এলাকার নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠবে। রাজনীতির উপযুক্ত পরিবেশ কিংবা প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে পলাতক কিংবা ঝিমিয়েপড়া কর্মীরা সরব হয়ে উঠবে। কাজেই রাজনীতির বিচারে খালেদা জিয়ার এ সফরের গুরুত্ব অনেক।
গতকাল শনিবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে খালেদা জিয়া তার গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে গাড়িবহর নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। আজ খালেদা জিয়া কক্সবাজার পৌঁছবেন। দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানাতে ঢাকার অদুরে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, ল²ীপুর, চাঁদপুরসহ পথের বিভিন্নস্থানে নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে স্বাগত জানান।
গুলশান থেকে বের হওয়ার পর গুলিস্তানের মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার অতিক্রমের পর কাঁচপুর ব্রিজের আগে বিএনপি নেত্রীর এ বিশাল গাড়িবহর প্রথম যানজটে কিছু সময় আটকে পড়ে। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে প্রিয় দেশনেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপি ও এর সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তার দু’ধারে জড়ো হন। পথে পথে খালেদা জিয়া নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। খালেদা জিয়াকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শুভেচ্ছা জানান নারায়ণগঞ্জ বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী। মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে মেঘনা ঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তার দুই পাশে অবস্থান নেন তারা। খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ওই পথে যাওয়ার সময় শুভেচ্ছা জানাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রঙের প্ল্যাকার্ড, দলীয় প্রতীক ধানের শীষ, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের রঙিন ছবি সংবলিত বিভিন্ন ব্যানার প্রদর্শন করেন। দুপুর দেড়টার দিকে তিনি কাঁচপুর অতিক্রম করেন।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম বলেন, এতদিন আমরা মিছিল-মিটিং কিছুই করতে পারিনি। আজ খালেদা জিয়ার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সফর উপলক্ষে আমরা মহাসড়কে অবস্থান নিতে পেরেছি। তাই এই সফর আমাদের উজ্জীবিত করেছে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল বলেন, আমরা আজ খালেদা জিয়ার সফর উপলক্ষে সবাই একত্রিত হয়েছি। আমরা অনুপ্রাণিত, এই ঘটনায় আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম ত্বরান্বিত হবে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজার যাওয়ার পথে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে নেতাকর্মীদের জমায়েতের উপর সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীরা বাধা ও হামলা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ইনকিলাবকে বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে প্রাণভয়ে আশ্রয় নেয়া অসহায় রোহিঙ্গাদের খোঁজখবর নিতে ও তাদের সহযোগিতা করতে আমাদের নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কক্সবাজার যাচ্ছেন। তার সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। এটা অরাজনৈতিক একটি মানবিক কর্মসূচি। অথচ বিএনপি ও খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকার আমাদের এ কর্মসূচিতেও বাধা দিচ্ছে। ম্যাডামকে শুভেচ্ছা জানাতে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের উপর সরকারের গুন্ডাবাহিনী হামলা চালাচ্ছে। শাহজাহান অভিযোগ করেন, কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর ছাগলনাইয়া, মহিপাল ও লালপুল, নোয়াখালীর সেবার হাট ও চট্টগ্রামের মিরসরাইতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে। তাদের হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন নেতাকর্মী। আমরা তাদের এ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের নিন্দা জানাই। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছে তারা।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সুশৃঙ্খল যাত্রাপথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা বিভিন্নস্থানে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। তারা আমাদের নেত্রীকে স্বাগত জানাতে আসা দলীয় নেতাকর্মীদের বাধা দেয়। এ্যানি আরো বলেন, বিএনপির জনস্রোত ঠেকাতে পথে পথে কৃত্রিম যানজট কোথাও কোথাও একেবারেই রাস্তায় ব্লক সৃষ্টি করেও সন্ত্রাসীরা আমাদের সফর ঠেকাতে পারবে না। পুলিশ কোথাও কোথাও আমাদের সহযোগিতা করেছে। যেখানে পুলিশের সহযোগিতা পাইনি সেখানেই হামলা হয়।
মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহর যাওয়ার আগেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়েছিলাম। এসময় দুপুর পৌনে ১২টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গাড়ি আটকে রাখার চেষ্টা চালায়। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা অবরোধ মোকাবেলা করেন।
এদিকে, কক্সবাজার সফরের কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকা থেকে রওয়ানা হওয়ার পর দুপুরে ফেনী সার্কিট হাউজে যাত্রা বিরতি করেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও তার সফরসঙ্গীরা। বিকেলে যাত্রা শুরু করে রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন। আজ রোববার সকালে চট্টগ্রাম থেকে রওয়ানা দিয়ে বিকেলে কক্সবাজার সার্কিট হাউজে পৌঁছাবেন এবং সেখানে রাতে অবস্থান করবেন তিনি। কাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খালেদা জিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করবেন।
এরপর আবার কক্সবাজার সার্কিট হাউজে বিশ্রাম শেষে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন খালেদা জিয়া। সেখানে রাতে থেকে ৩১ অক্টোবর ফেনী হয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন বিএনপি প্রধান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।