পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কোকোর কথা স্মরণ করে আদালতে কাঁদলেন মা
বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে আদালতের এজলাশে দাঁড়িয়ে কাঁদলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন তিন বার নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বললেন, মাসের পর মাস আইন শৃংখলাবাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ থাকাবস্থায় আমার ছোট ছেলে ইন্তেকাল করেছেন। তার মুখ পর্যন্ত ভাল ভাবে দেখতে পারিনি।
অথচ আমাকে আদালতে হাজির হতে হচ্ছে ওই সময়ের দায়ের করা মামলায়। শেখ হাসিনা সৌভাগ্যবান। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুনীর্তি ও চাঁদাবাজির অসংখ্য মামলা হলেও তাকে মাসের পর মাস বছরের পর বছর এভাবে আদালতে হাজির হতে হয়নি, হচ্ছে না। কারণ তারা নিজেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো তুলে নিয়েছে। আমার কী অপরাধ যে আমাকে এ রকম আদালতে ঘুরতে হচ্ছে? গতকাল বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে দ্বিতীয় দিনের মতো বক্তব্যে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়া। আদালতে প্রায় ঘন্টব্যাপী লিখিত বক্তব্য দেন তিনি।
ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে তিনি তার অসমাপ্ত বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য শেষ না হওয়ায় ২ নভেম্বর ফের বক্তব্য দেয়ার দিন ধার্য করেছে আদালত। এর আগে খালেদা জিয়া ১১টা ৫৮ মিনিটে আদালতে হাজির হন। এ সময় কয়েকশ আইনজীবী তাকে ঘিরে রাখেন। গত বৃহস্পতিবার অস্থায়ী ৫ নং বিশেষ জজ আদালত উপস্থিতির এ দিন ধার্য করেন। এদিন তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে মুচলেকা দিয়ে জিয়া অরফানেস ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন নেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার প্রথম দিনের বক্তব্য শেষ না হওয়ায় আবার তিনি অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
উল্লেখ ওয়ান ইলেভেনের পর ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা দায়ের করে। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। দুই শীর্ষ নেত্রীকে গ্রেফতার এবং কয়েক মাস কারাভোগের পর তারা জামিনে মুক্তি পান। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগে সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা কয়েক হাজার মামলা তুলে নেয়া হয়। কিন্তু একই অভিযোগের ভিত্তিতে বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর কার্যক্রম চলতে থাকে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারও বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে সারাদেশে হাজার হাজার মামলা দায়ের করে। সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় সেই মামলাগুলো দ্রæত নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে।
আদালতে দাঁড়িয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচিত নয় গণতান্ত্রিকও নয়। জনগণ এদের ভোট দেয়নি। এরা জোর করে ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু গণতান্ত্রিক দেশে আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণপ্রতিনিত্বশীল সরকার গঠন করতে চাই। রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব সংঘাতের বদলে দেশে শান্তি সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বক্তব্যের এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেন দৃঢ়চেতা নেত্রী খালেদা জিয়া। আদলতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সেইদিন (কোকোর মৃত্যুর দিন) আমি ও আমার সঙ্গে যারা গুলশান অফিসে পুলিশী অবরুদ্ধ ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে সম্পূর্ণ বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়। এটা কি কোনো সভ্য মানসিকতা হতে পারে? তিনি আরো বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে সাংবিধানিক সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে। সেই সঙ্কট থেকে দেশকে আমরা মুক্ত করতে চাই। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই।
খালেদা জিয়া তাঁর লিখিত বক্তব্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতা ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তার অবদান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাননীয় আদালত, আপনি নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছেন, সা¤প্রতিক বছরগুলোতে আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। জারি করা হচ্ছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। চার দশকের স্মৃতি বিজড়িত বসতবাড়ি থেকে আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। আমাকে বাসা ও রাজনৈতিক কার্যালয়ে বালুর ট্রাক দিয়ে মাসের পর মাস অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমি অফিসে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। আমি অবরুদ্ধ অবস্থাতে বিদেশে চিকিৎসাধীন ছোট ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পাই। মা হয়ে মৃত্যুর আগে ছেলের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে পারিনি। এর পরই খালেদা জিয়া আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ছোট ছেলের স্মৃতি রোমান্থন করে কেঁদে ফেলেন। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যেও শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরক্ষণেই আবার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বক্তব্য শুরু করেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সেইদিন (কোকোর মৃত্যুর দিন) আমি ও আমার সঙ্গে যারা অফিসে অবরুদ্ধ ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় গাড়ি পোড়ানো এবং বিস্ফোরক দিয়ে মানুষ হত্যার মামলা দায়ের করা হয়। আমরা ছিলাম আইন শৃংখলা বাহিনীর ঘেড়াওয়ের মধ্যে। অফিসে অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় আমরা কী এসব করেছি? এটা কি কোনো সভ্য মানসিকতা হতে পারে?
খালেদা জিয়া দাবী করেন তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলাই ভুয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গণবিচ্ছিন্ন সরকার ভীত হয়ে বিএনপিকে দাবিয়ে রাখতে মামরা দায়েরের কৌশল নিয়েছে। তিন যুগ আগে তিনি রাজনীতিতে এসেছিলেন দেশ ও জাতির ডাকে সাড়া দিয়ে। ক্ষমতার মসনদে বসার লোভ তখন তাঁর মধ্যে কখনোই ছিল না। জনগণই তাকে ভোট দিয়ে বার বার ক্ষমতায় পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়া দৃঢ় কষ্ঠে বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। কারণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সিংহভাগ রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহণ করেননি। জনগণ ভোট দিতে যায় নি। খালেদা জিয়ার যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, সে সময় নথিতে তা লিখে রাখছিলেন বিচারক ড. আখতারুজ্জামানের। বিএনপি নেত্রীর এসব বক্তব্য মামলার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নয় মন্তব্য করে তা নথিতে যুক্ত না করার আবেদন করেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। কিন্তু বিচারক তাতে অসম্মতি জানান।
দ্বিতীয় দিনেও নিজের বক্তব্য শেষ না করে খালেদা জিয়া পরবর্তী সময়ে বাকি বক্তব্য উপস্থাপনের অনুমতি চাইলে বিচারক তা মঞ্জুর করে আগামী ২ নভেম্বর শুনানির পরবর্তী দিন ধায্য করেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাও একই দিনে এ আদালতে উঠবে। শুনানিতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের সঙ্গে ছিলেন খুরশিদ আলম খান। আর খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, আবদুর রেজাক খান, সানাউল্লাহ মিয়া ও নুরুজ্জামান তপন। তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের ৫ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দেন। তার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ অভিযোগ গঠন করে খালেদাসহ ছয় আসামির বিচার শুরু করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।