Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার খুলছে আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গণভবন থেকে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
অবশেষে স্বপ্নের দরজা খুলছে। রাজধানীবাসীর বহুল আকাক্সিক্ষত মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার চালু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুর ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন করবেন। এরপর পুরো ফ্লাইওভার জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। গতকাল বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক স্বাক্ষরিত দাওয়াতপত্র বিতারণ করা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ইস্কাটন থেকে মকবাজার হয়ে মৌচাক, শান্তিনগর হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইন, মালিবাগ-মৌচাক হয়ে রামপুরা পর্যন্ত নির্মিত ফ্লাইওভার শুভ উদ্বোধন করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার সম্পূর্ণভাবে চালু হচ্ছে বহুল আকাক্সিক্ষত এই ফ্লাইওভার। তিন অংশে বিভক্ত এ ফ্লাইওভারের রমনা থেকে তেজগাঁও থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এবং ইস্কাটন থেকে ওয়্যারলেস পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ আগেই খুলে দেয়া হয়েছিল। রঙ, বিদ্যুতের খুঁটি ও বাতি লাগানোসহ বাকি অংশের কাজ শেষ। চলছে ধোয়ামোছার কাজ। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নির্মিত ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটারের এই ফ্লাইওভার চালু হলে রাজধানীর সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ ও মগবাজার রেলক্রসিং এলাকায় নির্বিঘেœ যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এর ফলে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে এবং এসব এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে আসবে। এ প্রসঙ্গে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী বলেন, ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ দুপুর ১২টায় উদ্বোধন করবেন। ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষে কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ বাকি ছিল তাও শেষ। নিচের রাস্তাগুলোরও সংস্কারকাজ শেষ, এখন খুলে দেয়ার পালা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট ১৯৯৯ সালে যান চলাচল ব্যবস্থা নিয়ে একটি সমীক্ষা করে। সেই সমীক্ষায় ঢাকা মহানগরীর ২০টি স্থানে ফ্লাইওভার, ইন্টারসেকশন, আন্ডারপাস, বাসস্ট্যান্ড, বাস টার্মিনাল, পার্কিং এরিয়া নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। পরে ২০০০ সালে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে যৌথ বিনিয়োগে ফ্লাইওভার নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করা হয়। তখনই মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য কুয়েত সরকার দুই লাখ কুয়েতি দিনার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ২০০৭ সালে কুয়েত সরকার ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিবর্তে শিকলবাহায় ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এতে করে ফ্লাইওভারের নির্মাণ প্রকল্পে ভাটা পড়ে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে আবার এ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেক সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন পায়। ওই বছরই এর নির্মাণকাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু ২০১০-১১ অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পরে তা সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সে বছরও কাজ শুরু করতে পারেনি সরকার। পরে ২০১৩ সালে কাজ শুরু করে সময়সীমা বাড়ানো হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়েও কাজ শেষ করতে না পারায় সময়সীমা বাড়িয়ে এ বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। জুনে আবার সময় বাড়ানো হয়। রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকাজুড়ে নির্মিত এই ফ্লাইওভার নির্মাণে এলজিইডির কোনো গাফিলতি ছিল না। তবে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে গাফিলতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করতেন। তার তত্ত্বাবধানের ফসল দেরিতে হলেও আলোর মুখ দেখছে। ফ্লাইওভারটি চালু হলে যানবাহন চলাচলের বাধা যেমন কাটবে, তেমনি যানজটের ভোগান্তিও কমবে। একই সাথে ফ্লাইওভার এলাকার কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ ঘুচবে। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা ঘর থেকে বেরুতে বা ঘরে ফিরতে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যেও ধস নেমেছিল। সেই সব প্রতিষ্ঠান আবার প্রাণ ফিরে পাবে। জমে উঠবে মার্কেট-বিপণি বিতান। মালিবাগ এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলিফ হোসেন বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরুর পর থেকে প্রথম দিকে ধুলা-বালুতে দোকান খোলা যেত না। এরপর খোঁড়াখুঁড়িতে পুরো দোকানই বন্ধ রাখতে হয়েছে। দীর্ঘদিন রাস্তা সংস্কার না করায় অনেক দোকান সেই ২-৩ বছর ধরেই বন্ধ। যেগুলো খোলা যেত সেগুলোতে কোনো কাস্টমার আসত না। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়েছেন। তবে ফ্লাইওভার পুরোপুরিভাবে চালু হওয়ার খবরে অনেকের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে জানিয়ে ওই ব্যবসায়ী বলেন, মালিবাগ-মৌচাক এলাকার মার্কেটগুলো আবার জমে উঠবে। যানজট না থাকলে এই এলাকা আবার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এ জন্য তিনি ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা সংস্কারের দাবি জানান। এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ফ্লাইওভারের নিচে মৌচাক থেকে মালিবাগের রাস্তা ও ফুটপাথ নির্মাণ করবে সিটি কর্পোরেশন। আবার কিছু অংশে রাস্তা করবে এলজিইডি ফুটপাথ করবে ডিসিসি। উদ্বোধনের আগেই সব রাস্তার কাজ শেষ হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক ইনকিলাবকে বলেন, আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই নগরবাসীর দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত এই ফ্লাইওভার জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এতে যানজটের তীব্র যন্ত্রণা থেকে নগরবাসী যেমন রেহাই পাবেন, তেমনি যাতায়াতে সময়ও কমবে অনেক। বহুল প্রত্যাশিত হওয়ায় উদ্বোধনের সময় ফ্লাইওভারের উপরে-নিচে আলোকসজ্জাও করা হবে।
গতকাল ফ্লাইওভার প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার খবরে অনেকেই আসছেন বিশাল এই ফ্লাইওভার দেখতে। আশপাশের বাসা-বাড়ীর ছাদে উৎসুক মানুষের ভিড় লেগেই আছে। যদিও চার লেনের ফ্লাইওভারটি এক স্থান থেকে পুরোপুরি দেখা সম্ভব নয়। বিশাল এই ফ্লাইওভার ছয়টি মোড় অতিক্রম করেছে। এগুলো হলো সাতরাস্তা, বিএফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর ও মালিবাগ মোড়। এর মধ্যে মগবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজারে রেললাইন অতিক্রম করেছে এই ফ্লাইওভার। তিন ভাগে বিভক্ত এই ফ্লাইওভারের একটি অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। এটি নির্মাণ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। গত বছরের মার্চ মাসে এ অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। একই বছর ১৫ সেপ্টেম্বর নিউ ইস্কাটন থেকে মৌচাক পর্যন্ত এক দিকের অংশ খুলে দেয়া হয়। এই অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন। তৃতীয় অংশ এফডিসি মোড় থেকে কারওয়ান বাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় চলতি বছরের ১৭ মে। এই অংশও তৈরি করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। সর্বশেষ মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশ খুলে দেয়ার মাধ্যমে পুরো ফ্লাইওভারটি চালু হয়ে যাবে। শেষাংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা দিয়েছে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)। দেশে এখন পর্যন্ত যে ক’টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারটি দৈর্ঘ্যে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প ২০১১ সালে একনেকে চূড়ান্ত হয়। ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৯ কিলোমিটার লম্বা ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ৪:২০ এএম says : 0
    ধন্যবাদ মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা শহরের কিছুটা হলেও যানজট কমবে
    Total Reply(0) Reply
  • apu ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ৭:৪১ এএম says : 0
    গঙ্গা বেরেজ দ্রুত নির্মান করা হোক । যে স্থাপনা দেশের জিডিপিতে সরাসরি চাক্ষুস প্রভাব ফেলবে তা কেন নির্মান করা হচ্ছে না ? আমরা ভারতের উপড় নির্ভরশীল না, ভারত আমাদের উপড় নির্ভরশীল। আমরা অবরোধ দিলে ওদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রফ্তানী বন্ধ হয়ে যাবে। ওদের অনেক ইন্ড্রাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাবে। ওরা আমাদের তোষামদ করবে, আমরা কেন ওদের কারনে গঙ্গা বেরেজ বন্ধ রাখব? ওরা ফারাক্কা দিয়ে প্রাকৃতিক ইকো সিস্টেমই ধ্বংস করে দিয়েছে ।
    Total Reply(0) Reply
  • apu ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ৭:৫৬ এএম says : 0
    আমেরিকা , ই,ইউ আমাদের রফ্তানীর মূল পার্টনার, আমরা ওদের সাথে সম্পর্ক রেখে চলব। চীন, জাপান আমাদের উন্নয়ন পার্টনার , আমরা ওদেরকে গুরুত্ব দিব। ভারত আমাদের উপড় নির্ভরশীল, ওদের জন্য গঙ্গা বেরেজ, সোনাদিয়া গভীর বন্দর নির্মান বন্ধ থাকতে পারে না। সোনাদিয়া না পেয়ে চায়নারা বার্মায় গভীর বন্দর বানাবে আর তারা তা ব্যবহার করবে দক্ষিনের চায়নার আমদানী রফ্তানীতে, যা তারা সোনাদিয়া দিয়ে করতে পারে, নতুন সিল্করুট ব্যবহার করে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ভারতকে নিয়ে তোষামদের সুযোগ নাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফ্লাইওভার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ