পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের সম্পদ বিবরণীর তথ্য ফরমে কয়েকটি তথ্য চাওয়া বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য এসেছে আদালতের কাছ থেকে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে তদন্ত ‘আটকাতে’ দুদকে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া চিঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলে যে রুল দিয়েছিল হাইকোর্ট, গতকাল তার ওপর শুনানির এক পর্যায়ে হাই কোর্টের এই মন্তব্য আসে। দুদকের কাজের গতি নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করে আদালত বলেছে, সংস্থাটি ‘কচ্ছপ’ গতিতে চলছে।
সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিস দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে নিতে দুদককে বলেছে হাইকোর্ট; যাতে কাউকে হয়রানির শিকার হতে না হয়। আদালতের মন্তব্যের পর দুদকের কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেছেন, তিনি বিষয়টি তার কর্তৃপক্ষের গোচরে আনবেন।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিচারপতি জয়নুল আবেদীন বিষয়ক রুলের উপর শুনানি হয়।
আদালতে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। তিন অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও এ এম আমিন উদ্দিনও শুনানিতে অংশ নেন।
শুনানির শুরুতেই মইনুল বলেন, প্রথম চিঠির পর সব কাগজ-পত্র দুদককে সরবরাহ করেছে সুপ্রিমকোর্ট। যে চিঠি (সুপ্রিম কোর্টকে দেওয়া দুদকের যে চিঠি নিয়ে রিটের পর রুল হয়েছে) আদালতের সামনে চিঠির আর কার্যকারিতা নেই। এই চিঠি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
“এমন না যে, বিচারপতি জয়নুল আবেদীন প্রধান বিচারপতির ভাই বা আত্মীয়। এখানে প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত কোনো লাভ নেই। বিচার বিভাগের অভিভাবকের মতো কাজ করেছেন তিনি। এখানে অসৎ উদ্দেশ্যের প্রশ্নই আসে না।”
বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে মইনুল হোসেন বলেন, দুদক অনুসন্ধান কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে থাকে।
“মূলত ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ জন্য দুদক এটা করে থাকে,” -বলেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল, যখন দুদককে হয়রানি করাতে ব্যবহার করানো হত বলে অভিযোগ রাজনীতিকদের।
মইনুল হোসেন লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম তার জবাব দিতে দাঁড়ালে আদালত তাকে কয়েকটি প্রশ্ন করেন।
দুদকের আইনজীবীকে প্রশ্ন করা হয়- “আপনারা কোনো ব্যক্তির সম্পদ বিবরণী যে ফরমের মাধ্যমে চেয়ে থাকেন, সেই ফরমে দেখা যাচ্ছে সন্তানরা যে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে, তার তথ্য চেয়েছেন, এটা কেন চান?”
জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, এটার প্রয়োজন পড়ে। আদালত প্রশ্ন রাখে, এটা কি কেউ অনুসরণ করে?
জবাবে দুদক আইনজীবী বলেন, ‘আমার ছেলে স্কলাস্টিকায় পড়ে। আমি তো সব তথ্যই রাখি’।
বিচারক তখন বলে, ‘আপনি দুদকের আইনজীবী তাই হয়তো রাখেন। ৩৫ বছর আগে একজনের ছেলে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছে, তার হিসাব কি কেউ রাখে? আপনি এমন একটা তথ্য চাচ্ছেন যা অবাস্তব।
‘একজন ব্যক্তি মসজিদ, মাদরাসা, ক্লাবে চাঁদা দেয়, সেটার রশিদ কি কেউ রাখে? মোটা অঙ্কের টাকা দিলে সেটার হিসাব হয়ত কেউ রাখতে পারে। সামান্য অঙ্কের টাকা দিলে কি কেউ রাখে’?
তখন খুরশীদ আলম বলেন, ‘স্বচ্ছতার স্বার্থেই রাখা প্রয়োজন এবং দুদক সেটা চেয়ে থাকে’।
বিচারক বলেন, কেউ সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যয় করলো সামান্য টাকা সেটার হিসাব রাখতে হবে? দুদকের আইনজীবী তখন একই জবাব দেন।
বিচারক তখন বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘কবে কত টাকার বাজার করলাম, মুরগি কিনলাম তিনশ’ টাকায়, মাছ কিনলাম চারশ’ টাকায়, এরকম দৈনন্দিন বাজারের হিসাবও রাখতে হবে?
‘তদন্ত করার অনেক পদ্ধতি আছে, তাই বলে কি এভাবে? এটা অবাস্তব! বাস্তবতার নিরিখে বিষয়টি দেখুন। আপনারা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হিসাব চেয়েছেন, সেটা চাইতেই পারেন। তবে তথ্য ফরমের ৬, ৭, ১১ ও ১২ ক্রমিকে যা চাচ্ছেন তা বাস্তবসম্মত না’।
তখন খুরশীদ আলম বলেন, তথ্য ফরমের বিষয়ে আদালতের অভিমত দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানানো হবে। মূল শুনানিতে ফিরে তিনি বলেন, এই ব্যক্তির (বিচারপতি জয়নুল আবেদীন) বিরুদ্ধে এখনও কোনো মামলা হয়নি। তাই তাকে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য নয়।
তিনি বলেন, ‘এটা কোনো মিডিয়া ট্রায়াল না। সাংবাদিকরা তথ্য চাইলে দুদক তা দিতে বাধ্য। সাংবাদিকদের চাওয়ার প্রেক্ষাপটে দুদক সময় সময় তথ্য সরবরাহ করে থাকে’।
বিচারপতি জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে এসময় খুরশীদ আলম বলেন, নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তিনি দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।
‘এই বিবরণী পাওয়ার পর দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে বেশ কিছু টাকা তিনি বিদেশে পাচার করেছেন। এগুলো আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে পাচার করা হয়েছে।
‘এর সত্যতা জানার স্বার্থেই অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক, সেই চিঠির জবাব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে সার্বক্ষণিকভাবে দুদক অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে’।
বিদেশে পাচার করা অর্থের তথ্য খুব দ্রæত পাওয়া সম্ভব না হওয়ার কথা জানিয়ে দুদকের আইনজীবী বলেন, তাছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে সু²ভাবে মিলিয়ে দেখতে এবং সতর্কভাবে দেখার জন্যই সময় প্রয়োজন।
তখন বিচারক বলেন, ‘এত সতর্কভাবে দেখছেন যে, একজন ব্যক্তিকে ১০ বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছেন। অনুসন্ধানের নামে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রেখেছেন। আবার আপনারা মিডিয়াকেও তথ্য দেন ওই ব্যক্তি সম্পর্কে।
‘এই প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান না করে কোনো ব্যক্তিকে নোটিস দেওয়ার আগে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে নিবেন। তাহলে কাউকে হয়রানির শিকার হতে হবে না’।
বিচারপতি জয়নুল আবেদীন ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের সাত বছর পর তার বিষয়ে তথ্য জানতে সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দেওয়া নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেন আদালত। তখন দুদক আইনজীবী বলেন, ‘একটি মহৎ উদ্দেশ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একজন বিচারপতির সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেই সময় লেগেছে’।
বিচারক উষ্মা প্রকাশ করে বলে, ‘আপনারা যদি এই গতিতে চলেন তাহলে দেখা যাবে আরেকটা তথ্যের জন্য ২০২৪ সালে গিয়ে আরেকটা নোটিস দিচ্ছেন। আসলে দুদক এক্সপ্রেসের মতো চলছে না, দুদক চলছে কচ্ছপ গতিতে।
তখন খুরশীদ আলম বলেন, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সময় লাগবে। রাতারাতি কিছু হবে না’।
দুদক আইনজীবীর এমন বক্তব্যে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলে, একটি লোককে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দিলেন ১০ বছর আগে, ১০ বছর ধরে অনুসন্ধান করতে থাকলেন।
‘যে ব্যক্তির বিষয়ে অনুসন্ধান করতে থাকলেন সে ব্যক্তির অবস্থাটা কী দাঁড়ালো? তার যদি ডায়াবেটিস না থাকে তাহলে আপনাদের অনুসন্ধানের কারণে তার ডায়াবেটিস হয়ে যাবে, প্রেশার না থাকলে প্রেশারও হয়ে যাবে’।
‘একটি লোক প্রতিদিন ঘুমানোর আগে এবং ঘুম থেকে ওঠার পর যদি চিন্তা করে দুদক তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে তাহলে এর চেয়ে মানসিক হয়রানি আর কী আছে? একটা সময় হয়ত এই লোক হার্ট অ্যাটাক করবে’।
দুদকের আইনজীবীর শুনানির পর আদালতের অ্যামিকাস কিউরি প্রবীর নিয়োগী বলেন, ‘আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। সে দৃষ্টিতে কোনো ব্যক্তি দায়মুক্তি পেতে পারে না। সাবেক বিচারপতির ক্ষেত্রে আলাদা বলে কোনো আইন নেই।
‘তাই সুপ্রিম কোর্টের এই চিঠি সংবিধান এবং আইন বহির্ভূত। সুপ্রিম কোর্ট চিঠিতে যে ভাষা ব্যবহার করেছে তা আইন বহির্ভূতভাবে করা হয়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠান এভাবে বলতে পারে না’।
এসময় আদালত এ আইনজীবীর কাছে জানতে চায়, সুপ্রিম কোর্টের এই চিঠির বিচার করার এখতিয়ার হাই কোর্টের আছে কি না?
জবাবে প্রবীর নিয়োগী বলেন, ‘এটা প্রধান বিচারপতির প্রশাসনিক আদেশ। সুতরাং কোনো প্রশাসনিক আদেশের বিচার করার এখতিয়ার হাই কোর্টের রয়েছে’।
আরেক অ্যামিকাস কিউরি এ এম আমিনউদ্দিন বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনগতভাবে এ ধরনের চিঠি দিতে পারে না। প্রধান বিচারপতি হলেও এজাতীয় অভিমত তিনি দিতে পারেন না। একজন বিচারপতি দায়মুক্তি পেতে পারেন না’।
তিনি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মামলার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘একজন প্রেসিডেন্টকেও দায়মুক্তি দেওয়া হয়নি। তাই একজন বিচারপতি যদি অপরাধ করে থাকেন, তবে তিনি দায়মুক্তি পেতে পারেন না’।
আদালত আগামী ৩১ অক্টোবর এই রুলের পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছে। সূত্র : বিডি নিউজ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।