পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ২৪ কিলোমিটারের এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০ জেলার সংযোগস্থল আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা করিডোরে যানজট অনেকটা কমে আসবে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় এবং ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প। প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ২৪ কিলোমিটারের এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০ জেলার সংযোগস্থল আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল-চন্দ্রা করিডোরে যানজট অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করছে সরকার। এতে ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি ৯০ লাখ ৬২ হাজার টাকা ঋণ দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক। এ বছর নির্মাণ কাজ শুরু করে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনুমোদন পাওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের বিস্তারিত সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরেন।
এ সময় মন্ত্রী জানান, সভায় মোট পাঁচটি নতুন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এ সব প্রকল্পে ১২ হাজার ৪০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দেয়া হবে। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে অবশিষ্ট ২২ হাজার ১৬৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ সময় আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে যোগাযোগের সেতুবন্ধন রচনা করবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনীতির গভীরতা বাড়বে।” প্রকল্পটি অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে উল্লেখ করে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের আওতায় ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর ফলে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে সংযুক্ত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সাথে ৩০টি জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আব্দুল্লাহপুর-আশিুলিয়া, বাইপাইল-চন্দ্রা করিডোরে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে।
মন্ত্রী জানান, এ প্রকল্পের জন্য বুয়েট থেকে দুই বার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। ২০১৩ সালে প্রথম সমীক্ষায় বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় পর্যন্ত এবং ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্য়ন্ত ৩৫ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কথা বলা হয়।
আর ২০১৬ সালে দ্বিতীয় সমীক্ষায় মূল এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার ধরে তার সঙ্গে ১০ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার র্যাম্প এবং ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটারের দুই লেনের সড়ক নির্মাণের কথা বলা হয়। মুস্তফা কামাল বলেন, “সরকার ২০১৬ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে।”
মন্ত্রী জানান, প্রকল্পের আওতায় ৪০ দশমিক ৮৯ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ ও পুর্নবাসন, ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, ১০ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার র্যাম্প, এক দশমিক ৯২ কিলোমিটার নবীনগর ফ্লাইওভার, ১৪ দশমিক ২৮ কিলোমিটার সড়ক পুর্ণনির্মাণ, দুই দশমিক ৭২ কিলোমিটার দুই লেইনের সেতু নির্মাণ, ৫০০ মিটার ফ্লাইওভার বা ওভারপাস, ১৮ কিলোমিটার ইউটিলিটিরজন্য ড্রেন তৈরি, পাঁচটি টোল প্লাজা নির্মাণ ও যানবাহন ক্রয়সহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন একটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (জাইকা) প্রায় ১১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা ঋণ দেবে।
এ বিষয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশে ৮টি বিমান বন্দর আছে। এর মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের প্রধানতম বিমান বন্দর। বাংলাদেশে প্রায় ১৭টি বিমান সংস্থার বিমান চলাচল করছে এবং এ বিষয়ে ৫২টি দেশের সাথে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি আছে। বন্দরটির বছরে ৮০ লাখ যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা রয়েছে। দেশের বিমান পরিবহন চাহিদা বিবেচনায় এ বিমান বন্দরটির অবকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। বিদ্যমান প্যাসেঞ্জার টার্মিনালটির মাধ্যমে আধুনিক পাঁচ স্থরবিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য চাহিদা বিবেচনায় নিরাপত্তা বৃদ্ধিও পাশাপাশি বিমান বন্দরটি সম্প্রসারণ করা হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ইউহোশিন (কোরিয়া)-সিপিজি (সিঙ্গাপুর)-ডিডিসি (ঢাকা)-এর পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী এই বিমানবন্দরের মাধ্যমে ২০২৫ সাল নাগাদ ১৪ মিলিয়ন এবং ২০৩৫ সাল নাগাদ ২৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন যাত্রী যাতায়াত করবে।
মন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া বিমানবন্দরের অবকাঠামো ক্রমবর্ধমান বিমান চলাচল চাহিদার বিবেচনায় যথেষ্ট নয়, বর্তমানে বিদ্যমান যাত্রী টার্মিনালের মাধ্যমে পাঁচস্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ছাড়াও বোয়িং ৭৪৭-৮ এফ এবং ৭৭৭-৩০০ ইআর মত বড় বিমান উঠা-নামার জন্য এয়ারপোর্টটি উপযুক্ত নয়। তাই বিমান চলাচলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের করা হবে এবং এর ফলে বিশ্বমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ছয় জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় রাস্তা, হাট-বাজার উন্নয়নে ব্যয় করা হবে ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে বৃহত্তর ঢাকা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন-৩ শীর্ষক একটি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ঢাকা জেলার সাভার, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, দোহার ও ধামরাই উপজেলা, মুন্সীগঞ্জের সদর, গজারিয়া, টঙ্গিবাড়ী, লৌহজং, সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলা, মানিকগঞ্জের সদর, সাটুরিয়া, দৌলতপুর, হরিরামপুর, সিঙ্গাইর, ঘিওর ও শিবালয় উপজেলা, নারায়ণগঞ্জের সদর, বন্দর, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার উপজেলা প্রকল্পের আওতাভূক্ত রয়েছে।
কুমিল্লা (টমছমব্রীজ)- নোয়াখালী (বেগমগঞ্জ) আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর আওতায় কুমিল্লার টমছমব্রীজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। প্রকল্পের আওতায় মোট ৫৯ কিলোমিটার ৩টি আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত হবে।
রংপুর বিভাগ ও ময়মনসিংহ বিভাগের সাথে অন্যান্য স্থানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে যমুনা নদীর দুই তীরে বালাশী এবং বাহাদুরাবাদের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে। এ লক্ষ্যে বালাশী ও বাহাদুরাবাদে ফেরিঘাটসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। মন্ত্রী জানান, যমুনা নদীর পশ্চিম তীরে বালাশী গাইবান্ধা জেলার ফূলছড়ি উপজেলায় ও পূর্ব তীরে বাহাদুরাবাদ ঘাট জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এ অঞ্চলের মানুষ বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করায় সময় ও অর্থ বেশি ব্যয় হয়। বালাশী ও বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট নির্মাণ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিকল্প মাধ্যম বঙ্গবন্ধু সেতুর উপর চাপ কমে আসবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ থেকে ১৬ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ১০ দশমিক ২১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের এ বাস্তবায়ন গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মাত্র ১০ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।