পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বাচনে প্রার্থীর দেয়া হলফনামা বিধান বাতিল চাওয়ার প্রস্তাব হতাশাজনক ও অনভিপ্রেত। ভোটারের বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অন্তরায় এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতিষ্ঠার জন্য অশনিসঙ্কেত বলে মনে করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনটি সব প্রার্থীর হলফনামা যাচাই-বাছাই ও হলফনামায় আরো কিছু বিষয় যুক্ত করার দাবি জানায়। নির্বাচনে প্রার্থীর দেয়া হলফনামা বিধান বাতিলের প্রস্তাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।
গতকাল রোববার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সুজন হলফনামা বিধান বাতিলের প্রস্তাবের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। লিখিত বক্তব্যে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কমিশন তাদের রোডম্যাপ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সাথে সংলাপও প্রায় শেষ করেছে। সংলাপে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও এসেছে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, গত ৮ অক্টোবর সংলাপে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বিধানটি বাতিলের প্রস্তাব করে। সুজনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, হলফনামা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এটি বাতিলের ক্ষমতা কারো নেই। নির্বাচন কমিশনেরও না। এই প্রস্তাব মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। বর্তমানে যে হলফনামা ব্যবহার করা হয়, তা অসম্পূর্ণ এবং ভোটারদের ক্ষমতায়িত করতে হলে আরো কিছু বিষয় যোগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে হলফনামার ছকে পরিবর্তন এবং তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। হলফনামায় বিধানকে আরো কীভাবে কার্যকর করা যায়, সে ব্যাপারে সুজন কিছু সুপারিশ করে প্রার্থীর বয়স, বিদেশে নাগরিকত্ব আছে কি না, আয়ের উৎসের বিস্তারিত বিবরণ, প্রার্থীদের ওপর কারা নির্ভরশীল, তার বিস্তারিত বিবরণ এবং সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে কি না তা ক্ষতিয়ে দেখা। আমরা মনে করি, এ দাবি হতাশাজনক ও অনভিপ্রেত। এই প্রস্তাব ভোটারের বাকস্বাধীনতা তথা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য।
তিনি বলেন, প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার আমাদের দেশে খুব সহজেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়নি। এর পেছনে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যে ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত উচ্চ আদালতে নগ্ন জালিয়াতি, আমাদের কিছু আইনজীবী ও বিচারপতির বিতর্কিত আচরণ এবং ‘সুজন’-এর মতো নাগরিক সংগঠনের সক্রিয়, সাহসী ও নিরবিচ্ছিন্ন ভ‚মিকা। আদালতের রায়ের মাধ্যমে নির্বাচনে হলফনামা দাখিল করার যে বিধানটি আমরা পেলাম একটি রাজনৈতিক দল অতীতের ন্যয় আবার হলফনামা প্রদানের বিধানকে ভন্ডুল করার চক্রান্তে লিপ্ত বলে মনে হচ্ছে। জনগণের তথ্য অধিকার রহিতের এ অপচেষ্টা বর্তমানে নয়, অতীতেও বহুবার করা হয়েছিল। তিনি বলেন, যে হলফনামা বর্তমানে ব্যবহার করা হয়, তা অসম্পূর্ণ এবং ভোটারদের সত্যিকারার্থেই তথ্য দিয়ে ক্ষমতায়িত করতে হলে এতে আরো কিছু বিষয় যোগ করা আবশ্যক। তাই হলফনামার বিধানটি সবচেয়ে কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারবে, যদি নির্বাচন কমিশন হলফনামার ছকে পরিবর্তন এবং এগুলোর সঠিকতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়। আমরা মনে করি যে, হলফনামা যাচাই-বাচাই করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে।
সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় দেন যে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কমিশন আইনি বিধানের সাথে সংযোজনও করতে পারেন। অর্থাৎ সর্বোচ্চ আদালত কর্তক স্বীকৃত ‘অন্তর্নিহিত ক্ষমতা ব্যবহার করে কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে হলফনামা যাচাই-বাছাই করতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন জনস্বার্থের প্রতি কমিশনের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিচ্ছন্ন ও কলুষমুক্ত করতে হলে হলফনামার বিধান আরো কীভাবে কার্যকর করা যায়, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগী হতে হবে। তিনি সংবাদ সম্মেলনে সুজনের পক্ষ থেকে কতগুলো দাবি তুলে ধরেন সেগুলো হচ্ছে- কমিশনকে হলফনামার বর্তমান ছকটিতে পরিবর্তন আনতে হবে। কেননা, হলফনামার ছকটি অসম্পূর্ণ এবং এতে গুরুতর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রার্থীর বয়স, বিদেশি নাগরিকত্ব আছে কিনা, আয়ের উৎসের বিস্তারিত বিবরণ, কারা প্রার্থীদের ওপর নির্ভরশীল তার বিস্তারিত বিবরণ, সরকারের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে কিনা ইত্যাদি। বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা প্রয়োগ করে হলফনামায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন কমিশন আনতে পারে। দ্বিতীয়ত, বিরুদ্ধ হলফনামা প্রদানের বিধান সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তৃতীয়ত, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক হলফনামার তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে এবং মিথ্যা তথ্য প্রদানকারী (যেমন, মৎসজীবী রাজনীতিবিদ) ও তথ্য গোপনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। হলফ করে মিথ্যা তথ্য দেয়া ফৌজদারি অপরাধও বটে। একইসঙ্গে কমিশনের অন্তর্নিহিত ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কমিশন হলফনামা যাচাই-বাছাই করার উদ্যোগ নিতে পারে। চতুর্থত, হলফনামাসহ মনোনয়নপত্র ‘ইলেকট্রনিক ফাইলিং’-এর বিধান করা জরুরি, যাতে তথ্যগুলো দ্রুততার সঙ্গে ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। পঞ্চমত, হলফনামা অনলাইনে জমাদানের ব্যবস্থা রাখা। ষষ্ঠত, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হলফনামার বিধান যুক্ত করা।
বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, ‘আবু ছাফা নাটক এবং দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর বাংলাদেশে নির্বাচনে প্রার্থী কর্তৃক হলফনামার বিধানটি কার্যকর হয়েছে। আজ এটিকে বাতিল করার জন্য একটি রাজনৈতিক দল দাবি তুলেছে। অথচ আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য এবং প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের বিস্তারিত অবগত হওয়ার জন্য হলফনামার বিধানটি অপরিহার্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।