Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজশাহীর নগর থেকে গ্রামে বইছে নির্বাচনী বাতাস

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজশাহীর ছয়টি আসনের বর্তমান এমপির পাশাপাশি প্রবীন ও এক ঝাঁক তরুন নেতৃত্ব মাঠে নেমে পড়েছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের নেতাদের তৎপরতা বেশী দেখা যাচ্ছে। বসে নেই বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এবার নির্বাচনী প্রচারনার বাতাস বইতে থাকে রমজান মাস থেকেই। শুরু হয় ইফতার রাজনীতি। দান খয়রাতও চলে। বিতরন করা হয় শাড়ি লুঙ্গি পাঞ্জাবী চিনি সেমাই। এসব বিতরন করেন বর্তমান এমপিরাই বেশী। আর ঈদ ঘিরে জমে ওঠে প্রচারনা। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজ ছবিসহ নেতাদের ব্যানার। ফেষ্টুন এমনকি পোষ্টার পর্যন্ত লাগানো হয়। বানানো হয় শুভেচ্ছা তোরন। এবার লক্ষনীয় হলো বর্তমান ও প্রবীনদের পাশপাশি একঝাক তরুন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশার দৌড়ে রয়েছেন। তারা ফেসবুক ব্যবহার করে নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে প্রচার করছেন। তারা নিজ নিজ দলের হাইকমান্ডের কাছে মনোনয়ন চাইবেন।
বেশ কজন প্রবাসীর পক্ষেও শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। সব মিলিয়ে তৃনমুলে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বর্তমান এমপিদের বিপক্ষে নিজেদের প্রার্থী হবেন এমন ঘোষনায় অনেকের কপালে ভাঁজ পড়েছে। এতদিন চুপচাপ থাকলেও বেশ কিছু নেতা সরব হয়েছেন। সাবেক এমপি ও বর্তমান নেতৃত্বের বেশ কজন নিজ এলাকায় গণসংযোগ করছেন। সভা সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। আর এনিয়ে বর্তমানদের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও পাল্টাপাল্টি কর্মসুচি পালনও হচ্ছে।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) বর্তমান এমপি রয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। এবার তার বিপক্ষে মনোনয়ন চাইবেন বলে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তারা হলেন আ:লীগের উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি মতিউর রহমান, মন্ডুমালা পৌর মেয়র গোলাম রাব্বানী, জেলা আ:লীগের সহ-সভাপতি এ্যাড. মকবুল হোসেন। আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আমিনুল হক। বিগত নির্বাচনে নানা কারনে মনোনয়ন পাননি। পেয়েছিলেন তার ভাই সাবেক আইজিপি এনামুল হক। এবার বিএনপি চেয়ারপার্শনের উপদেষ্টা সাবেক সচিব জহুরুল ইসলাম ও প্রবাসী শাহাদত হোসেন শাহীন মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রচারনা রয়েছে। এখানে জামায়াতও প্রার্থী দেবে। তারা গোপনে প্রচারনা চালাচ্ছে।
রাজশাহী-২ (সদর) এ এমপি রয়েছেন জোট প্রার্থী ও ওয়াকার্স পাটির সাধারন সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। জোটগত নির্বাচন হলে তিনি ফের মনোনয়ন পাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে আসনটি দাবি করা হচ্ছে। এনিয়ে আলোচনাও চলছে। আর বিএনপির পক্ষ থেকে সতের বছর মেয়র ও এমপি থাকা সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু মনোনয়ন পাবেন এটা প্রায় নিশ্চিত।
রাজশাহী-৩ আসন (পবা-মোহনপুর) এখানে এমপি রয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আয়েন উদ্দিন। তার বিপক্ষে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন সাবেক এমপি মেরাজ মোল্লা, জেলা আ:লীগের সাধারন সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, আ:লীগ নেতা মোস্তাফিজুর মানজাল ও আলফোর রহমান। এখানে বিএনপির প্রবীন নেতা সাবেক মন্ত্রী এ্যাড. কবির হোসেন, নগর সেক্রেটারী এ্যাড. শফিকুল হক মিলন, জেলা সেক্রেটারী এ্যাড. মতিউর রহমান মন্টু, শাহীন শওকত, সাবেক ছাত্রদল নেতা রায়হানুল হক রায়হান সাবেক এমপি জাহান পান্না মনোনয়ন দৌড়ে থাকবেন। এরা শুভেচ্ছা ব্যানার ফেষ্টুন দিয়ে তাদের কথা জানান দিচ্ছেন।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) এখানে বর্তমান এমপি রয়েছেন এনা গ্রুপের কর্নধার ইঞ্জি: এনামুল হক। ধনকুবের এনামুল হক ২০০৮ সালে মনোনয়ন নিয়ে এসে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। সেই থেকে এমপি রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মান, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বাঘা বাঘা মন্ত্রীদের নিজ এলাকায় এনে চমক সৃষ্টি করছেন। এতদিন সবাইকে নিয়ে বেশ ভাল থাকলেও সর্ম্পকে টান ধরেছে। তার বিরুদ্ধে সোচ্ছার হয়ে উঠেছে দলের একটি অংশ। সাংবাদিক সম্মেলন করে নানান কথা তুলেছে। এবার মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ। তারাও কোমর বেধে মাঠে নেমেছেন। বসে নেই এনামুল হকও। এবার ঈদের হাজার হাজার শাড়ি লুঙ্গি পাঞ্জাবী বিতরন ও ঈদ পরবর্তী পুন:মিলনী নামে খানাপিনা আর গান বাজনার আয়োজন করেছেন। হাইকমান্ডে নাকি তার খুটির জোর খুব শক্ত। প্রবীন নেতা সরদার আমজাদ হোসেনের মৃত্যুতে এখানে শক্ত প্রার্থী নেই। তবে রয়েছেন রুপ বদলানো সাবেক আমলা আবু হেনা। সম্প্রতি আওয়ামীলীগের মনোনয়নলীগের জন্য স্থানীয় এক নেতার সাথে লেনদেন বিষয় সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে। তিনি আবার বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। এখানে জেলা সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন, সাবেক এমপি আব্দুল গফুর, প্রবাসী ডা: জাহিদ দেওয়ান স্বপন ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু নঈম সামসুর রহমান মিন্টু মনোনয়ন প্রত্যাশী। হয়তো ধনকুবের আবু হেনা ধনের জোরে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে পারেন এমন প্রচারনা রয়েছে।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) এ আসনে এমপি রয়েছেন বহুল আলোচিত সমালোচিত শিল্পপতি আব্দুল ওয়াদুদ দারা। খুটির জোরে ২০০৮ সালে আওয়ামলীগের প্রভাবশালী প্রবীন নেতা সাবেক এমপি তাজুল ইসলাম ফারুককে মনোনয়ন দৌড়ে ছিটকে দিয়ে নির্বাচনী ও বিনা নির্বাচনের এমপি রয়েছেন। এবারো মনোনয়ন চাইবেন প্রবীন নেতা তাজুল ইসলাম ফারুক। জনপ্রিয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আহসানুল হক মাসুদ। দুর্গাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদও মনোনয়ন প্রত্যাশি। বহুল ভাবে আলোচিত সমালোচিত হওয়া এবার ছিটকে পড়তে পারেন বর্তমান এমপি। সেক্ষেত্রে ফারুক কিংবা মাসুদের কপাল খুলতে পারে এমন গুঞ্জন এলাকা জুড়ে। এখানে বিএনপির এমপি ছিলেন ডাক সাইটে ছাত্র নেতা এ্যাড. নাদিম মোস্তফা। সম্প্রতি জেলা সভাপতির পদ থেকে ছিটকে গেছেন। তার পাশাপাশি মনোনয়ন চাইবেন সাবেক এমপি সাত্তার মন্ডল, গোলাম সাকলায়েন পুঠিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন জুম্মা জেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মন্ডল ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আবুবক্কর সিদ্দিক।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) এখানে এমপি রয়েছেন শিল্পপতি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এখানে তিনি মনোনয়ন পাবেন এমনটি প্রচারনা থাকলেও তার দলের মধ্যে রয়েছে শক্ত প্রতিদদ্বি। গত নির্বাচনে নিজদলের এক প্রার্থীর প্রতিদদ্বিতার মুখে পড়েছিলেন। অন্যদের মত সহজে পার হননি নির্বাচনী বৈতরনী। সাবেক এমপি রায়হানুল হক দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হয়েছিলেন। এবারো তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া রয়েছেন জেলা আওয়ামীলীগের নেতা লায়ের উদ্দিন লাবলু, বাঘা পৌর মেয়র আক্কাস আলী, ছাত্রলীগের নেতা রোকনুজ্জামান রিন্টুও মনোনয়ন প্রত্যাশি। শাহরিয়ারের বিরুদ্ধে এর রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। অন্যদিকে এবার বিএনপির মনোনয়ন পাবেন চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান মাঠের পরীক্ষিত সৈনিক আবু সাঈদ চাঁদ। বিষয়টা প্রায় নিশ্চিত থাকলেও মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন বিএনপির নেতা বজলুর রহমান, গোলাম মোস্তফা মামুন, উপজেলা বিএনপি সভাপতি নুরুজ্জামান মানিক, বিএনপি নেতা দেবাসিশ রায় মধু, আনোয়ার হোসেন উজ্জল প্রমুখ। ৭৫ পরবর্তী সময় থেকে বেশীর ভাগ সময় ধরে আসনগুলো বিএনপি জামায়াত জোটের দখলে ছিল। এরশাদ শাসনামলে জাতীয় পাটির কবলে যায়। এরশাদ শাসনের অবসানের পর থেকে আসনগুলো ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিল বিএনপির কবজায়। এজন্য রাজশাহী অঞ্চল পরিচিত ছিল বিএনপির দূর্গ হিসাবে। ওয়ান ইলেভেনের রাজনৈতিক সিডরে সেই দূর্গ তছনছ হয়ে যায়। এরপর থেকে দমন নিপীড়ন জেল জুলুম মামলায় বিধস্ত বিএনপি। রয়েছে আভ্যন্তরীন কোন্দল। এরপর এখন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচন ঘিরে ফের ঘুরে দাড়াবার। কারন ক্ষমতাশীনদের অনেক নেতিবাচক কর্মকান্ডের কারনে সাধারন মানুষ বিক্ষুব্ধ। সরকারের ইতিবাচক অর্জনগুলো বিসর্জনে চলে গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচনী

৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ