Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নিউরোফাইব্রোমাটোসিস রোগে আক্রান্ত একই পরিবারের ৬ জন

মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দুই বোনকে তালাক : স্কুল ও খেলার মাঠেও নিঃসঙ্গ
দুরারোগ্য “নিউরোফাইব্রোমাটোসিস” রোগে আক্রান্ত হয়ে ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার কেসমত ঘোড়াগাছা গ্রামের এই পরিবারের ছয় সদস্য মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। ইতিমধ্যে হতদরিদ্র এই পরিবারের দুই মেয়েকে তাদের স্বামীরা সন্তানসহ তালাক দিয়েছেন। রোগটি ছোঁয়াচে না হলেও স্কুল কিংবা খেলার মাঠেও পরিবারের আক্রান্ত শিশুরা নিঃসঙ্গ। কেউ তাদের সাথে মিশতে চায় না। ফলে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে চিকিৎসা বঞ্চিত গোটা পরিবারটি এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। এখন অনেকটাই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন পরিবারটি। ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার কেসমত-ঘোড়াগাছা গ্রাম্য চিকিৎসক মৃত ইজাল উদ্দিনের ছিল এই রোগ। তার স্বাভাবিক মুত্যৃর পর পরবর্তীতে বড় ছেলে ইফাজ উদ্দিন ও দুই মেয়ে নার্গিস খাতুন এবং পারভিনের ১০/১১ বছর বয়স থেকে শরীরে ছোট ছোট ফোট দেখা দেয়। পরে এগুলো বড় হয়ে মারবেল আকার ধারন করে এবং মুখমন্ডলসহ সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের বিয়ের পর ইফাজ উদ্দীনের ৮ম শ্রেনীতে পড়–য়া ছেলে অনিক হোসেন, পারভিনের মেয়ে ছোঁয়া খাতুন ও নার্গিসের ৭ম শ্রেনীতে পড়–য়া ছেলে রোমিওর শরীরেও “নিউরোফাইব্রোমাটোসিস” রোগ দেখা দেয়। আক্রান্ত পরিবারের বড় ছেলে ইফাজ উদ্দীন জানান, কষ্ট করে টাকা জোগাড় করে ১৫ বছর আগে তিনি ঢাকার পিজি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে রোগটি “নিউরোফাইব্রোমাটোসিস” বলে চিহ্নিত করেন। ডাক্তাররা তাকে জানান, এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই। তাছাড়া “নিউরোফাইব্রোমাটোসিস” রোগের মৃত্যুর কোন সম্ভাবনা নেই। ইফাজ উদ্দীন বলেন, তার বোন নার্গিসের বিয়ে হয়েছিলো শৈলকুপা উপজেলার গোলকনগর গ্রামের রফিকুল ইসলামের সাথে। কিন্তু রোগের কারণে এক সন্তানসহ ৮/৯ বছর আগে তাকে তালাক দিয়েছেন স্বামী। মেজবোন পরভিনের সদর উপজেলার বেড়াদি গ্রামের আমিরুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয়। তিনি স্বামীর ঘরেই আছেন। পারভিনের দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়–য়া মেয়ে ছোঁয়া খাতুন তার মায়ের মতোই “নিউরোফাইব্রোমাটোসিস” রোগে আক্রান্ত। ছোটবোন নাছরিনের শরীরে “নিউরোফাইব্রোমাটোসিস” রোগ না থাকলেও তার স্বামী সন্তানদের শরীরে এই রোগ হওয়ার আশংকায় তাকে তালাক দিয়েছেন। নাছরিনের বিয়ে হয়েছিলো হরিণাকুন্ডু উপজেলার কেসমত ঘোড়াগাছা গ্রামের সাহেব আলীর সাথে। স্বামী তালাক দেওয়ার পর নাছরিন এখন শৈলকুপার রয়েড়া গ্রামের একটি বাড়িয়ে ঝি এর কাজ করেন। স্থানীয় ঘোড়াগাছা লাল মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীর ছাত্র “নিউরোফাইব্রোমাটোসিস” রোগে আক্রান্ত রোমিও জানায়, মা ও মামার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সপ্তায় দুই দিন সে পরের ক্ষেতে শ্রমিকের কাজ করে পড়াশোনার খরচ মেটায়। রোমিওর ভাষ্য স্কুলে তার কাছে কেও বসতে চায় না। খেলার মাঠে গেলেও তাকে খেলতে নেওয়া হয় না। প্রতিবেশি ব্র্যাকের সাবেক কর্মকর্তা ফজলুল হক জানান, মাত্র আড়াই শতক জমির উপর পরিবারটি ঠাসাঠাকি করে বসবাস করেন। বাড়িতে স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন নেই। অভাবের কারণে ঘিঞ্জি পরিবেশ গোটা বাড়িতে। আয় রোজগারের কোন পথ নেই। তিনি আরো বলেন, রোগটি ছোঁয়াচে না হলেও গ্রামের কিছুু মানুষ ছোঁয়াচে বলে প্রচার করে। এ জন্য তাদের সাথে কেও ভালভাবে মিশতে চায় না। নিউরোফাইব্রোমাটোসিস রোগ নিয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সিনিয়র মেডিসিন কনসালটেন্ট ডাঃ মোকাররম হোসেন জানান, রোগটির নিদ্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। তাছাড়া এই রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর ঝুকি নেই বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন অসচেতনতার কারণে হয়তো গ্রামের মানুষ রোগটি ছোঁয়াচে বলে অপপ্রচার করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিউরোফাইব্রোমাটোসিস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ