পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবশেষে দীর্ঘদির ধরে চলা ভোগান্তির অবসান হচ্ছে। রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষে এখন এর নিচের রাস্তার কাজও শেষের পথে। ফ্লাইওভারের নিচে ঝকঝকে রাস্তা নগরবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছে। আর মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরাসহ আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীরা যেনো আবার নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। আবার নতুন করে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে তাদের। ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল জানান, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তাগুলো নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। রামপুরা অংশে কিছু কাজ বাকি আছে-যা কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। এলজিইডির সহকারী প্রধান প্রকৌশলী জানান, ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা ও ড্রেনর নির্মাণ করেছে এলজিইডি। কিছু অংশে ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। তবে উদ্বোধনের পর সবকিছু সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এলজিইডি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে যে কোনো দিন ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর,কাকরাইল, রাজারবাগ, বাংলামোটর, শহীদনগর, খিলগাঁও, রামপুরা, তেজগাঁও, এফডিসি মোড় এলাকার বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। একই সাথে এসব এলাকার রাস্তা দিয়ে যে সব যানবাহর চলাচল করেছে সেসব যানবাহনের যাত্রীদেরকেও সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। যে কোনো প্রান্ত থেকে মতিঝিল, পল্টন,গুলিস্তান, পুরান ঢাকা,যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর দক্ষিণ ও পূর্বাংশে আসতে গেলেই নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কারনে নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হতো। ফ্লাইওভার এলাকায় যানজট ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। কখনও কখনও দুই/তিন ঘণ্টাও চলে যেতো যানজটে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, পাইলিং, ফ্লাইওভারের নির্মাণ সামগ্রীর ধকলের কারনে সাধারণ মানুষ ফ্লাইওভার এলাকা অনেকটা বর্জনই করেছিল। সে কারনে মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, মগবাজার রেলগেইট এলাকার অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য ফ্লাইওভারের মগবাজার-তেজগাঁও অংশ অনেক আগেই। এরপর বাংলামোটরর অংশও খুলে দেয়া হয়। এতে করে এসব এলাকার মানুষকে খুব বেশিদিন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। তবে মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা অংশ নির্মাণে দেরি হওয়ায় এই এলাকার মানুষের ভোগান্তি একেবারে চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছিল। একদিকে খানাখন্দকে ভরা রাস্তা তার উপর ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর (ডিপিডিসি) খোঁড়াখুঁড়ি মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। তিন বছর ধরে চলা এ ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সময়ও পার হয়েছে বেশ কয়েকবার। এজন্য মানুষের ভোগান্তি যেনো স্থায়ী রুপ নিয়েছিল। এবারের অতিবৃষ্টি সেই ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। সেই সব ভোগান্তির অবসান হতে চলেছে। সরেজমিন রাজারবাগ, মালিবাগ মোড়, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ রেলগেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এই অংশে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে বেশ কিছুদিন আগেই। ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তার নির্মাণ কাজও শেষ। উপরে চকচকে ফ্লাইওভার নিচে ঝকঝকে রাস্তা। বহুদিন পর মালিবাগ-রামপুরা এলাকার এই রুপ দেখে অনেকেই বিস্মিত। মালিবাগের ব্যবসায়ী কাওছার আহম্মেদ বলেন, আমরা ভীষণ খুশি। প্রায় তিন বছর ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল না বললেই চলে। এই এলাকা দিয়ে মানুষজন চলাচল করা ছেড়ে দেয়াতে সব ব্যবসাই মন্দা গেছে। অনেকে পথে বসেছে। ফ্লাইওভার ও রাস্তা একসাথে নির্মাণ করায় এলাকা আবার জেগে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে। মানুষ আসছে নতুন ফ্লাইওভার দেখতে, রাস্তা দেখতে। এটা আমার মতো শত শত ব্যবসায়ীর জন্য সৌভাগ্য ডেকে আনবে। মৌচাকে কাপড় ব্যবসায়ী শওকত হোসেন বলেন, আমাদের স্বপ্ন্ ভেঙ্গে পড়েছিল। আবার সেই স্বপ্ন জাগছে। এটা খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। মানুষ এখন ইচ্ছা করে এই এলাকায় আসবে কেনাকাটা করতে। গুলিস্তান থেকে গাজীপুরে রুটের বাস চালক সোলায়মান বলেন, এই রাস্তায় চলতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকেছি। গর্তে বাসের চাকা আটকে গেছে। পানিতে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি। বহু মানুষকে দেখেছি রিকশা, অটোরিকশা উল্টে পানিতে পড়ে যেতে। মালিবাগ থেকে রামপুরা পর্যন্ত রাস্তায় খানাখন্দে ভরা ছিল। সেই রাস্তা আবার প্রাণ ফিরে পাবে ভাবতেও পারিনি। এখন এই রাস্তায় আর যানজট হবে না। মানুষ নির্বিঘেœ চলতে পারবে। রামপুরা আবুল হোটেল গলির বাসিন্দা গৃহবধূ রেবেকা আক্তার বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় অনেক দিন বাচ্চা স্কুলে যেতে পারেনি। পরীক্ষার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়েছে। দেরিতে হলেও নতুন ঝকঝকে রাস্তা দেখে সত্যি ভালো লাগছে। এলজিইডি সূত্র জানায়, ফ্লাইওভারের উদ্বোধনের সাথে নিচের রাস্তাও যাতে উদ্বোধন করা যায় সেজন্য এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারী প্রকল্প পরিচালককে দিকনির্দেশনা দেন। প্রধান প্রকৌশলীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মানুষের ভোগান্তি লাঘবে এলজিইডি’র তত্ত¡াবধানে রাস্তাগুলো নির্মাণ করা হয়।
রাজধানীর যানজট নিরসনে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেকে অনুমোদন পায়। চারলেনের ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চুক্তি অনুযায়ী ৭৭৩ কোটি টাকায় দুই বছরে নির্মাণ কাজ শেষের কথা থাকলেও প্রকল্পের নকশা সংশোধন এবং সময়সীমা ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কাজ শেষ না হওয়ায় আবার জুন ২০১৭ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আবার চলতি অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।