Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদকের ভয়াবহতা বাড়ছে

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাবার হাতে ৪ বছর বয়সী ছেলে খুন
রাজধানীসহ সারাদেশেই মাদক এখন হাতের নাগালে। দেশে শুধু মাদকাসক্তের সংখ্যাই বাড়ছে না, মাদকের ভয়াবহতায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা সহজেই নির্মম ও নিষ্ঠুর আচরন করছেন। যা সমাজে ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। গত রোববার সন্ধ্যায় খোদ রাজধানীর যাত্রাবাড়ির শেখদি এলাকায় মাদকাসক্ত রিকশা চালক বাবা ধারালো অস্ত্র নিয়ে নির্মমভাবে ৪ বছরের শিশু পুত্র শাহীনকে খুন করেছেন। পুলিশ রিকশা চালক এনামুল হককে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হলে আদালত গতকাল তাকে জেল হাজরে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অপরাধ ও সামাজিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন-শৃখলা রক্ষাকারী বাহিনী ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেফতার করলেও এর (মাদক) সহজলভ্যতা রয়েছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা সহজেই বিভিন্ন প্রকার মাদক ক্রয় করে সেবন করতে পারছেন। ফলে মাদকাসক্তকে চিকিৎসা দিয়ে বা পারিবারিকভাবে এর প্রতিরোধ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। মাদকাসক্তরা পরিবারের বাইরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়লেও বর্তমানে তারা (মাদকাসক্ত ব্যক্তি) পরিবারের জন্যও মারাত্মক হুমকির কারন হয়ে উঠেছেন। মাদকের সহজলভ্যতা কমাতে না পাড়লে এটি এক সময় আমাদের দেশে ভয়াবহ আকার ধারন করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদক নিমূল করা সম্ভব না হলেও এর সহজলভ্যকা বন্ধ করা অসম্ভব নয়। এ জন্য মাদক ব্যবসায় জড়িতদের গ্রেফতারের পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকে মাদক আসা বন্ধ করতে হবে। সীমান্ত দিয়ে যাতে দেশে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য সহজে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বিজিবি ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। মাদক ব্যবসায় জড়িত গডফাদারদের শুধু তালিকা নয়, আইনের আওতায় আনা হলেই কেবল মাদকের সহজলভ্যতা কমানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম খান গত রাতে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মাদক সব সময় ছিল। এখন দেশে মাদক ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। মানুষ নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রধান সমস্যা হচ্ছে মাদক সেবী ও যারা মাদক বিক্রির সাথে সম্পৃক্ত আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দেখছেন না। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ক্ষেত্রে যা করার তা করছেন না। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। কোন ভাবেই এদের ছাড় দেয়া যাবে না। রাষ্ট্রকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম খান মন্তব্য করেন।
নিহত শাহিনের বোন গার্মেন্টকর্মী তানজিলা বেগম হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, তার বাবা এনামুল মাদকাসক্ত হওয়ায় পরিবারে অশান্তি লেগেই ছিল। কখন যে কী করে, তা বলা মুশকিল। তারা চারভাই, তিন বোনের মধ্যে শাহিন ছিল সবার ছোট। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ইশ্বরগঞ্জে। ঘটনার সময় গত রোববার সন্ধ্যায় শেখদি এলাকার বস্তি ঘরে নিজের চার বছরের ছেলে শাহীনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। তিনি জানান, প্রতিবেশিরা ঘটনাটি দেখে ফেলে এবং শাহিনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তার মৃত ঘোষনা করে। পরে এনামুল হককে পুলিশের কাছে সোর্পধ করেন বস্তির লোকজন। তানজিলা বেগম জানান, তার বাবা ইয়াবা ও গাজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন করতেন। বস্তিতে চাইলেই যে কেউ মাদক কিনতে পারে। এ নিয়ে কোন লোকচুরি নেই। সবই প্রকাশ্যে হয়। পুলিশ আসে আর যায়। এ ঘটনায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল আওয়াল গত রাতে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, শিশু হত্যার সাথে জড়িত বাবা এনামুল হককে গ্রেফতার করে গতকাল আদালতে পাঠানো হলে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আসামী বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন খুন করা হয়েছে বা এনামুল কি ধরনের মাদক সেবন করে তা পরে তদন্ত করা হবে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধীরা ক্রমে সহিংস হয়ে উঠছে ইয়াবার প্রভাবেই। এ বিষয়ে এখনই জোড় পদক্ষেপ গ্রহন করা না হলে ভবিষ্যতে জাতি মেধাশূন্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনিক কার্যক্রম বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেশকে মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতিকে সামনে রেখে আমাদের মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও কোস্টগার্ডের পাশাপাশি নোডাল এজেন্সি হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাজকে আরও বেগবান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাব মতে, বাংলাদেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ৬০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই এখন ইয়াবায় আসক্ত। ইয়াবার পেছনে সেবনকারীরা দিনে খরচ করছেন প্রায় ১৩৫ কোটি টাকা। বছরে এ অঙ্ক দাঁড়ায় ৪৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রতি বছর ইয়াবার আগুনে ধোঁয়া হচ্ছে এ বিপুল অঙ্কের টাকা। আর এ টাকা জোগাড় করতে ইয়াবা সেবনকারীরা সহিংস হয়ে ওঠেন। খুন-খারাবি থেকে শুরু করে ছিনতাই, ডাকাতি, চুরির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী আর তরুণ-তরুণী শুধু নয়; ছোট-বড় ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীর একটি অংশ এখন ইয়াবায় আসক্ত। ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারী-পরুষ এখন এ মাদক সেবন করছে। তবে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী মাদকসেবীর সংখ্যাই বেশি। ভয়ঙ্কর মাদক ইয়াবার থাবায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে বহু পরিবারের সন্তানের জীবন। নেশায় আসক্ত হয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের মায়ের কান্নাও থামছে না। অসহায় এ মায়েদের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ