Inqilab Logo

সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ১০ আষাঢ় ১৪৩১, ১৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত

প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেতাগী (বরগুনা) উপজেলা সংবাদদাতা : বরগুনার বেতাগী উপজেলার দেশান্তরকাঠী গ্রামে অনিশ্চয়তায় পড়েছে ১৫৪ জন ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জীবন। স্থানীয় বিরোধের জের ধরে তালা দিয়ে স্কুলের শ্রেণী কক্ষ বন্ধ করে দেয়ায় শিশুরা বারান্দায় পাঠদান করছে। ফলে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছে শিক্ষার্থী, অভিভাবকরা। জানা গেছে, উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের দেশান্তরকাঠী গ্রামের ৯নং ইউনিটে ২০১২ সালের পহেলা জানয়ারি শিক্ষানুরাগী লায়ন মোসলেম আলী খানের পৃষ্ঠপোষকতায় তার প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালের চার কক্ষবিশিষ্ট আধাপাকা ও দুই কক্ষবিশিষ্ট পুরানো কাঁচা ঘড়ে ৪ শিক্ষক সমন্বয়ে দেশান্তরকাঠী আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণসহ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত একই স্থানে শিক্ষকরা শুনামের সাথে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এদিকে ‘বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে ১৫০০ বিদ্যালয়  স্থাপন শীর্ষক’ প্রকল্পের আওতায় চার কক্ষ বিশিষ্ট দেশান্তরকাঠী এম.এ.খান আদর্শ  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে সরকারি অর্থায়নে একটি নতুন বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। নতুন ভবনে পুরাতন শিক্ষক স্থানান্তরিত করে ও  ডেপুটেশনে  শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে  এ বছরের পহেলা জানুয়ারি পাঠদান শুরু হলেও সভাপতি পুরাতন শিক্ষক বাদ দিয়ে আরও একাধিক শিক্ষক ডেপুটেশনে নিয়োগ দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উপর মহলে তদবির করে শিক্ষক নিয়োগ দিলে এতে জটিলতার সৃষ্টি হয়। গত ২১ জানুয়ারি ২০১৬ উপজেলা  প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নতুন  কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ডেপুটেশনে নিয়োগ দেয়া যাবে না মর্মে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পত্র প্রেরণ করে। এ আদেশের বিরুদ্ধে সভাপতি লায়ন মোসলেম আলি খান হাইকোর্টের আশ্রয় নিলে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদেশ স্থগিত করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি মো. শাহজাহান কবির বলেন, ‘হাইকোর্ট ও সরকারি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সংশ্লিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সভাপতি বিভ্রান্তমূলক তথ্য দিয়ে  ডেপুটেশনে শিক্ষক নিয়োগ দেয়ায় স্থানীয়ভাবে জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং যে সব পুরাতন শিক্ষক শ্রম দিয়েছে তিনি তাদের সাথে স্বেচ্ছাচারিতা করায় মানবিক কারণে নতুন প্রতিষ্ঠানে ডেপুটেশন বিষয় সাময়িক স্থগিত করা হয়।’ পুরানো শিক্ষকগগণ চলতি বছরের ২৪ ফ্রেরুয়ারি পর্যন্ত ডেপুটেশনের শিক্ষকসহ নতুন ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, সভাপতির নির্দেশে দেশান্তরকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম  ও মজিবুর রহমান সানু মিয়া ক্লাস চলাকালীন সময় হঠাৎ এসে শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের বের করে শ্রেণী কক্ষগুলোতে তালা দেন। নিরুপায় শিক্ষকগণ পুনরায় পুরাতন একাডেমিক ভবনে ক্লাস শুরু করে। সেখানেও একই অবস্থার অবতারণা হয়। সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলে শিশুদের বইপত্র বাহিরে ফেলে দেয় এবং  ক্লাসে আসতে নিষেধ করেন। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। দেশান্তরকাঠী আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিরীন সুলতানা জানান,‘কোন সুরহা না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা পথে পথে ঘুরছি। শিশুরা এখন ক্লাসে আসতে ভয় পাচ্ছে। সভাপতির ভাতিজী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. পাপড়ী বেগমের  সাথে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে আমাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করছে।’ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি লায়ন মোসলেম আলী খান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের কারো সাথে আমার কোন দূরত্ব নেই। শিক্ষা কমিটি একতরফাভাবে ডেপুটেশনে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করায় আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। গত ২ মার্চ বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মাহাবুব এলাহী সরজমিনে পরিদর্শন করে। সহকারী শিক্ষা অফিসার আব্দুস সালাম জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশে এ প্রতিষ্ঠানের বিশৃংঙ্খল ও অচলাবস্থার বিষয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। শিক্ষার্থী অভিভাবক মো.শহীদুল ইসলাম বলেন ‘দীর্ঘদিন পুরাতন শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়টি সুষ্ঠুভাবে চলে আসলেও এখন অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষক ও সভাপতির  মধ্যকার আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। বর্তমানে তা আরো প্রকট হয়ে উঠছে। সন্তান নিয়ে এখন পড়েছি মহাবিপদে।’ পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আফিফা আক্তার বলেন, ‘আমরা ক্লাস করতে চাই, কেউ যেন বই ফেলে  না দেয়।’ উপজেলা  প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আখতারুজ্জামান মিলন বলেন, বিশৃংঙ্খলার কারণে  শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের উৎসাহে ভাটা পড়ছে। ব্যাহত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। তিনি শিগগিরই এ অবস্থার উত্তরণের দাবি জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ