Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সংসদ ভেঙে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি

ইসির সাথে সংলাপে বিএনপির ২০ দফা প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি : ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন : খালেদাসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার : গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার অধিকার : সংলাপ যেন প্রহসনে পরিণত না হয় -মির্জা ফখরুল


একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি ও সেনাবাহিনী মোতায়েনসহ ২০ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ভোটের সময় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, ২০০৮ সালের আগের সংসদীয় আসন সীমানা ফিরিয়ে আনা, ইভিএম চালু না করার প্রস্তাবও দিয়েছে দলটি। এছাড়া জরুরি অবস্থার সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দলীয় চেয়ারপারসনসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিও রয়েছে ২০ দফার সুপারিশে। তত্ত¡াবধায়ক সরকারসহ বেশকিছু ইস্যুতে দশম জাতীয় নির্বাচন বর্জন করা দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। এরই অংশ হিসেবে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আস্থা রেখে রাষ্ট্র পরিচালনার ভোটযুদ্ধে লিপ্ত হতে প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। এ লক্ষ্যে গতকাল (রোববার) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবহিক সংলাপের অংশ হিসেবে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে ইসি সাথে সংলাপে অংশ নেয় বিএনপি। সংলাপে দলটির পক্ষ থেকে ১৩ পৃষ্ঠার বিস্তারিত লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলা হয়, ‘এ সংলাপ যেন প্রহসনের পরিণত না হয়।’ সকাল ১১ টা থেকে ২ ঘন্টা ৩৫ মিনিটের এই সংলাপে ইসি ও বিএনপির মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলের প্রায় সবাই বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। নির্বাচন কমিশনকে সত্যিকার অর্থেই স্বাধীন ভূমিকায় দেখতে চেয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদাসহ অপর চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এ এস এম আবদুল হালিম, ঈসমাইল জবিউল্লাহ, আব্দুর রশীদ সরকার ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
সংলাপ শেষে বিএনপির প্রতিনিধি দলের প্রধান ও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রস্তাবনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন। মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করতে চায়, নির্বাচন কমিশনের এই সংলাপ বা রোডম্যাপ বা পথ নকশা নিছক কালক্ষেপণ বা লোক দেখানো কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে না। এই সংলাপ যেন প্রহসনে পরিণত না হয়, তা কমিশনকেই নিশ্চিত করতে হবে। সংলাপে সন্তুষ্ট হয়েছেন কি না- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের যে একটা প্রচন্ড রকমের অগণতান্ত্রিক আচরণ, সেখানে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে বলে আমরা মনে করি না। এর মধ্যেও আশার যাত্রাটা শুরু হল বলে মনে করেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছুটা তো বটেই, আমরা কিছুটা আশাবাদী তো বটেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, আলোচনার শেষের দিকে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন এও মনে করে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা তাদের দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে পালন করতে পারছে না। গণতন্ত্রের আসল রূপও বাংলাদেশে নেই। এসময় বিএনপির মহাসচিব দাবি করেন, সংলাপে ইসির পক্ষ থেকে তাদের সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে। তার ভাষ্য, আলোচনার শেষ দিকে এসে তারা বিএনপির প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন,‘তারা চেষ্টা করবেন। নিজেদের মধ্যে বসবেন, বসে দেখবেন, তারা কী করতে পারেন। ইতোমধ্যে ইসি বলেছে, তারা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভ‚মিকা পালন করবে না এ প্রসঙ্গে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির মহাসচিব বলেন,‘না, আজকে তারা এ কথা বলেননি। তারা বলেছেন, যে, তারা নিজেরা বসবেন, বসে আলাপ করে দেখবেন, তাদের কী কী সুযোগ আছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংলাপে ২০টি প্রস্তাবনা দিয়েছে বিএনপি। ২০ দফা প্রস্তাবনাগুলো হলো-
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠন
বিএনপি বলেছে, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। দলীয় সরকারের এমন ক্ষমতাধর প্রধানমন্ত্রী এবং তার নিয়ন্ত্রনাধীন প্রশাসনের দ্বারা নিরপেক্ষ নির্বাচন যে একেবারেই অসম্ভব তার প্রমাণ দেশবাসী গত বেশ কয়েক বছরে প্রত্যক্ষ করেছে। কাজেই নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ সহায়ক সরকার ব্যতীত কোনক্রমেই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। এটাই বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এবং রাজনৈতিক দলের দাবী। বিএনপি’র পক্ষ থেকে শিগগিরই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে।
সকল দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরিকরণ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরির জন্য বিএনপির প্রস্তাব হচ্ছে- সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। এক্ষেত্রে তারা বলেন, সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ আদালত বর্তমান সংসদকে অকার্যকর ও অপরিপক্ক মর্মে উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলটির অতীতের সংসদীয় কার্যক্রমও উদ্বেগজনক। তারা একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছে এবং তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে জনগণের ভোটাধিকারের পথ রুদ্ধ করেছে। এ অবস্থায় সংসদ বহাল রেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। তাই সংসদ নির্বাচনের তারিখের ন্যূনতম ৯০ দিন পূর্বে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলের সাথে সরকারের কার্যকর সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়ে দলটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের মুক্তির কথা বলেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের গুম-খুন-আহত এবং মিথ্যা মামলায় হয়রানি করে তাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার এবং তাদেরকে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার অপচেষ্টা অব্যাহতভাবে চালানো হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনকে উদ্যোগী হয়ে এক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখন থেকেই সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশসহ সকল স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাসক দলের প্রধান হিসেবে নির্বাচনী প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়ে, সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিষয়টি ইসি নজড়ে আনে বিএনপি
প্রশাসন বিষয়ক:
বর্তমান সরকার প্রশাসনের সর্বস্তরে ব্যাপক দলীয়করণ করে প্রশাসনের ভারসাম্য বিনষ্ট করেছে উল্লেখ করে দলটি বলেছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত সকল প্রতিষ্ঠান এবং দূতাবাসসমূহে চুক্তিভিত্তিক সকল নিয়োগ বাতিল করতে হবে। নির্বাচনের ৯০ দিন পূর্ব হতে নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় যেমন স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থ, তথ্য, প্রতিরক্ষা, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, পররাষ্ট্র, কৃষি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ইত্যাদি সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণকরতে বাধ্য থাকবে। নির্বাচিত নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়া পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে; প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিংবা কোন নির্বাচন কমিশনারের একক সিদ্ধান্তে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না। দলীয় আনুগত্যে কাজ করেছেন এমন বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কোন দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। বিশেষ করে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পুলিশের সকল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার/পরিবর্তন করতে হবে। এদের বদলি ও পদায়ন সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত রাখতে হবে। দক্ষ ও কর্মে সৎ এমন পেশাদার ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের এসকল পদে পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে। নতুন কর্মকর্তা পদায়নের ক্ষেত্রে বিগত ৫ বছর বিভিন্ন পদমর্যাদায় ঐ মহানগর/জেলায় চাকুরিরত ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের একই মহানগর/জেলায় পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পদে পদায়ন করা যাবে না। একইভাবে বিগত ৫ বছর কোন সময় যে কোন পদমর্যাদায় ঐ উপজেলা বা থানায় চাকুরিরত ছিলেন এমন কোন কর্মকর্তাদের একই উপজেলায় বা থানায় ইউএনও/ওসি হিসেবে পদায়ন করা যাবে না। এভাবে পদায়ন বা নিয়োগের পর যদি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা কোন দলের প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তাঁকে প্রত্যাহার ও তাঁর বিরুদ্ধে চাকুরি বিধি অনুযায়ী শৃংখলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং তাঁকে পুনরায় কোন নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত করা যাবে না। নির্বাচনের ৬ মাস পূর্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।
ইভিএম ও ডিভিএম পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না
ইভিএম ও ডিভিএম পদ্ধতি ব্যবহারে ভোট জালিয়াতি ও কারচুপির প্রমাণ রয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণে কোনক্রমেই এসব পদ্ধতি কিংবা এ জাতীয় কোন যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছে বিএনপি
২০০৮ সালের পূর্বের সীমানা পুনর্বহাল করতে হবে
সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ প্রসঙ্গে দলটি বলেছে, ২০০৮ সালের পূর্বে নির্বাচনী আসনসমূহের যে সীমানা ছিল সেই আসন সীমানা পুনর্বহাল করতে হবে। এর কোন ব্যতিক্রম করতে হলে সে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সকল রাজনৈতিক দল/জোটের মতামত ও পরামর্শ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।
ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতা দিয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন
আরপিওর বিভিন্ন অনুচ্ছেদ সংশোধন/সংযোজনের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে লিখিত প্রস্তাবনায়। এর মধ্যে রয়েছে-প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে মোতায়েনকরণ: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ২ অনুচ্ছেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় ‘প্রতিরক্ষা বাহিনীকে’ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নির্বাচনের কমপক্ষে এক সপ্তাহ পূর্ব থেকে নির্বাচিত নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনী আসনে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতা প্রদানপূর্বক নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োজিত করতে হবে। নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদেরকেও ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতা অর্পণ করতে হবে।
মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হওয়ার পরপরই খসড়া তালিকা প্রকাশ করতে হবে
নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ এর কতিপয় বিধি সংশোধন/সংযোজনের জন্য বিএনপি প্রস্তাবে রয়েছে- ‘রাজনৈতিক দলের প্রার্থী’ শব্দাবলীর স্থলে ‘রাজনৈতিক দল/জোটের প্রার্থী’ শব্দাবলী সন্নিবেশিত হবে; এবং ‘আমার স্বপক্ষে রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন এতদসংগে সংযুক্ত করিলাম’ শব্দাবলী বিলুপ্ত হবে। মনোনয়নপত্র বাছাই কার্যক্রমের নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরপরই বৈধ প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনী মালামাল বিতরণের সময় প্রতি ভোটকেন্দ্রের ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স এর নম্বর সম্বলিত চালানপত্রের ফটোকপি প্রার্থী বা প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে প্রদান করতে হবে। এতে করে পোলিং এজেন্ট এই কপির সাথে কেন্দ্রের ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স এর নম্বর মিলিয়ে যাচাই করে নিতে পারবেন। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জন্য নির্ধারিত ও সংরক্ষিত প্রতীকের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে কিংবা কোনক্রমে মিল আছে মর্মে প্রতীয়মান হয় এমন কোন মার্কা/প্রতীক বরাদ্দ করা যাবে না।
তফসিল ঘোষণার পর সভা-সমাবেশের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে
রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর কতিপয় বিধি সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে-নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সকল রাজনৈতিক দলের ও প্রার্থীর সভা-সমাবেশ-পথসভা করার ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সভা-সমাবেশের অনুমতি প্রদানের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে ন্যস্ত করতে হবে। নির্বাচনপূর্ব সময়ের শুরুতে সকল বৈধ অস্ত্র জমাদানের নির্দেশনা জারী করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হয়ে সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
ইসির মেয়াদ পূর্তির আগের ১২ মাসের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য কোন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা যাবে না
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮ বিষয়ে সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে রয়েছে- জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশন সংসদের মেয়াদ পূর্তির পূর্ববর্তী ১২ মাসের মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য কোন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ বা দরখাস্ত আহবান করতে পারবে না।
তফসিল ঘোষণার ৩ বছর আগে পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধিত হতে হবে
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা/গাইডলাইন সম্পর্কে বিএনপির প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার ন্যূনতম তিন বছর পূর্বে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহী দেশীয় সংস্থাকে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিবন্ধিত হতে হবে। কোন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মী কিংবা রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রকাশ্য আনুগত্য পোষণকারী কোন ব্যক্তি বা তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন কোন পর্যবেক্ষক সংস্থা কিংবা সংস্থার কোন ব্যক্তি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হতে পারবেন না। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা সহজীকরণের জন্য নির্বাচন কমিশনের তত্ত¡াবধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপযুক্ত প্রতিনিধির সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সহায়তার জন্য বিমানবন্দরে ‘হেল্প ডেস্ক’ এর ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রবাসীদের ভোটার করতে হবে :
বিএনপির প্রস্তাবে রয়েছে- প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশী নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ, ভোটার হওয়ার যোগ্য প্রত্যেক নাগরিককে ভোটার তালিকাভুক্তকরণ ও ভোটার হওয়ার যোগ্য কারাবন্দী নাগরিকদের তালিকাভুক্তকরণ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে দলটির প্রস্তাব হচ্ছে- প্রতিটি আসনের রিটার্নিং অফিসার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধি, র‌্যাব প্রতিনিধি, আনসার-ভিডিপি অফিসার এবং ক্ষেত্রমত কোষ্ট গার্ড ও বিজিবি’র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রতিটি জেলায় ও মেট্রোপলিটন এলাকায় একটি করে কমিটি গঠন করতে হবে।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে
বিএনপি বলেছে, বন্ধ ঘোষিত সকল গণমাধ্যম চালু করতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে গণমাধ্যমে সকল দল ও
প্রার্থীর প্রচারণায় সমতাভিত্তিক সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ আইসিটি এ্যাক্ট এর বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করতে হবে। বিএনপির প্রস্তাবের মধ্যে আরো রয়েছে : নির্বাচনী আইন ও বিধি-বিধান সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা, ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা। নির্বাচনের দিন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক চালু রাখতে হবে, ইন্টারনেট সেবা অব্যাহত রাখতে হবে এবং কোনক্রমেই এর গতি কমানো বা সীমিত করা যাবে না। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশী শক্তির ব্যবহার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন ভবনে প্রবেশের জন্য ‘প্রবেশ পত্র’ প্রদান করতে হবে। রাজনৈতিক দলের নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট কাজের সুবিধার্থে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অনুকূলে কমপক্ষে ১০টি করে ‘প্রবেশ পত্র’ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। বিএএনপি বলেছে, নির্বাচন কমিশন সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের সাথে মতবিনিময় সভা করেছে। সুষ্ঠু, নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এদের মতামত সুবিবেচনায় নিতে হবে।



 

Show all comments
  • ফোরকান ১৬ অক্টোবর, ২০১৭, ৩:৪১ এএম says : 0
    এই দাবিগুলো ইসিকে অত্যান্ত গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ